ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৪ আগস্ট ২০১৫

লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে স্বেচ্ছায় সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে হাজির হয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেলাম। এ নিয়ে শুনানি করার দরকার নেই।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া নেতারা যথারীতি দলীয় সংসদ সদস্য পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের দাবিতে অনড় থাকেন। দুই-এক দিনের মধ্যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী তার সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের চিঠিটি স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে মাত্র ১৪ মিনিটে আওয়ামী লীগের অবস্থান এবং আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে শুনানি হয়। তবে এ শুনানি বন্ধের জন্য উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। কিন্তু হাইকোর্ট তার এই আবেদন নাকচ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল করলেও রবিবার সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এরপরই নির্বাচন কমিশনে এসে শুনানিতে অংশ নেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বেলা পৌনে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনে আসেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বয়ং উপস্থিত না থাকলেও তার প্রতিনিধি হিসেবে কমিশনে হাজির হন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সহসম্পাদক এ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছার ও সাইফুদ্দিন খালেদ। ঠিক ১১টায় ইসির সম্মেলন কক্ষে নির্ধারিত শুনানি নেয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মোঃ শাহনেওয়াজ উপস্থিত হন। এ সময় ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, আইন শাখার যুগ্মসচিব মোঃ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে বেশ ক’জন নেতা-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী প্রথমে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন এ কথা জানিয়ে দিলে মাত্র ১৪ মিনিটেই শুনানি শেষ হয়। শুনানির শুরুতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্মসচিব শুনানিতে নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আমন্ত্রণ জানান। আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি সাচ্চা মুসলমান এবং আমি জনআস্থায় বিশ্বাস করি। আমি সংসদ সদস্য। আইনগতভাবে ও সাংবিধানিকভাবে সংবিধানের ৬৬(৪) অনুযায়ী আমার বিষয়ে স্পীকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় আমাকে হাইকোট-সুপ্রীম কোর্টে যেতে হয়েছে। নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, ‘দল থেকে আমি বহিষ্কৃত হয়েছি। বহুভাবে বহুবার বহিষ্কার হয়েছি। এভাবে আর কখনও হয়নি। মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আমি আনন্দের সঙ্গে, নির্লিপ্তভাবে ঘোষণা করছিÑ আমি টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্যপদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এটা আমার ঘোষণা, আমার সিদ্ধান্ত।’ এ সময় ইংরেজীতে লেখা একটি পদত্যাগপত্রের অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের শুনানির আর দরকার নেই। শুধু এটুকু বলব, আপনাদের কষ্ট দিলাম। আমি সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করছি, এখন থেকে মাত্র ৫ মিনিট পরই তা কার্যকর হবে। স্পীকারের কাছে বিষয়টি জানানো হবে। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে এ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছারকে শুনানিতে বক্তব্য দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ডায়াসে দাঁড়িয়ে এই আইনজীবী বক্তব্য দেয়ার শুরুতেই বলেন, উনি (লতিফ) তো পদত্যাগের কথা বলছেন। এখন কী আমাকে আর কিছু বলতে হবে? এ সময় নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ তার উদ্দেশে বলেন, আপনি আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করুন। উনি (লতিফ) তো পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের এই আইনজীবী বলেন, নির্বাচনী আইন ও সংবিধান অনুযায়ী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর আর সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকার সুযোগ নেই। তাই তার সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এরপর লতিফ সিদ্দিকী আবারও ডায়াসের সামনে গিয়ে আওয়ামী লীগের এ দাবির সঙ্গে ‘একমত’ পোষণ করেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক। ১৫ মিনিটের শুনানি শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ শুনানিতে অংশ নেয়া দুই পক্ষের সামনে ইসির অবস্থান তুলে ধরেন। সিইসি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এখন কিভাবে সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় তা সংবিধানে বলা রয়েছে। তিনি তা মেনেই কাজ করবেন আশা করি। শুনানি শেষে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিতর্ক নিষ্পত্তির বিধান থাকায় এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তও পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুনানি আপাতত মুলতবি রাখা হলো। দুই সপ্তাহ পর এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত জানাব। শুনানি থেকে বের হয়ে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, আমার ইমানে এতটুকু দুর্বলতা নেই। আমি কমিশনকে বলেছি, আমি আর এ মামলায় লড়তে চাই না। তবে লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যে কোন মুহূর্তে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে স্বীয় পদত্যাগপত্র জমা দেবেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সেটি আজও (সোমবার) হতে পারে, আবার কালও (মঙ্গলবার) হতে পারে। সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী, কোন সংসদ সদস্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করে স্পীকারকে চিঠি দিলে তা গৃহীত হলে পরবর্তীতে স্পীকার ইসিকে অবহিত করলে নির্বাচন কমিশন ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারবে। উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর পাশাপাশি দল থেকেও বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশে ফেরার পর ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মামলায় নয় মাস কারাগারে থাকতে হয় ৭৭ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পান।
×