ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কিরীটি রঞ্জনের চিত্রপটে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক অভিব্যক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৪ আগস্ট ২০১৫

কিরীটি রঞ্জনের চিত্রপটে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক অভিব্যক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চোখ ছেড়ে চশমাটি উঠে এসেছে তাঁর বাঁ হাতের দুই আঙুলে। আর ব্যাকব্রাশ চুলের সুদর্শন সেই মহামানব বসে আছেন নিজ আসনে। তাকিয়ে রয়েছেন আশপাশের দিকে। দৃষ্টি যেন বলে যায় কোন এক ভাবনায় তিনি তাড়িত। রঙের সঙ্গে মনের মিশেলে এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে এঁকেছেন কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস। শিল্পীর এই ছবিটি এখন ঝুলছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৩ নম্বর প্রদর্শনালয়ে। কিরীটির আঁকা জাতির জনক শেখ মুজিবের এমন আরও অনেক চিত্রকর্ম বৈভব ছড়াচ্ছে গালারিজুড়ে। সেসব ছবিতে নানাভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে স্বাধীনতার মহান স্থপতির বর্ণাঢ্য জীবন। আর প্রতিটি ক্যানভাসেই মুখ্য হয়ে ধরা দিয়েছে মুজিবের বহুমাত্রিক অভিব্যক্তি। রংমাখা তুলির গতিময়তায় ধরা দিয়েছে বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধু, স্মিত হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু, চিন্তামগ্ন বঙ্গবন্ধু, সাক্ষাতকার প্রদানরত বঙ্গবন্ধু কিংবা মুক্তিকামী জনতাকে উদ্দীপ্ত করা সেই মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সব ছবিতেই অভিব্যক্তির মাধুর্যে দৃশ্যমান হয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু। ইতিহাসের মহানায়কের প্রতিকৃতির মাধ্যমে যেন বর্ণিত হয়েছেন বাংলার গৌরবগাথা। এমন সব ছবি নিয়ে রবিবার থেকে শুরু হলো চিত্রকর কিরীটি রঞ্জনের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম চিত্রপটে বঙ্গবন্ধু। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির দীর্ঘ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই প্রদর্শনী। শরতের বিকেলে চিত্রশালার মিলনায়তনে বসে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিকতা। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেনÑ বরেণ্যশিল্পী রফিকুন নবী, শিল্পী আবুল র্বাক আলভী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। আপন অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন শিল্পী কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শোকের মাসে এ প্রদর্শনীর আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান রফিকুন নবী। আর শিল্পীর দৃষ্টিতে এ প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে বলেন, একজন শিল্পীর জন্য কারও প্রতিকৃতি আঁকা খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, যার প্রতিকৃতি শিল্পী আঁকবেন সেই মানুষটিকে ক্যানভাসে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আর জীবিত নয় এমন একজন মহান মানুষের ফটোগ্রাফ দেখে ছবি আঁকা আরও বেশি কঠিন। কারণ অনেক সময় আলোকচিত্রের অন্তর্নিহিত টোন ও লাইন হারিয়ে যায়। তখন ওই ছবি আঁকতে হলে শিল্পীকে আপন মননের আশ্রয় নিতে হয়। আর বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে হলে প্রথমেই মনে রাখতে হবে তিনি খুবই সুপুরুষ ছিলেন। চিত্রপটে তাঁর সেই চেহারার মাধুর্যটিকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি তাদের জন্য এ ধরনের প্রকৃতি আঁকা বেশ জটিল বিষয়। তবে তারাই বেশি করে আঁকছে। কারণ, এখানে করণকৌশলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনুভূতি বা উপলব্ধির বিষয়টি। তাই বঙ্গবন্ধুকে কেন এত বেশি আঁকাÑ সেটা শিল্পী ভাল জানেন। এক্ষেত্রে শিল্পীরা জাতির জনকের প্রতি নিজের শ্রদ্ধাটুকু উজাড় করে দেন ক্যানভাসের মাধ্যমে। কিরীটিও এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি নিবেদন করেছেন তার শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, চিত্রপটে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক প্রদর্শনীটি একটি ভিন্নধর্মী আয়োজন। শোকের মাসে নেয়া নানা কর্মসূচীর মধ্যে এই প্রদর্শনীর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলার স্থপতি। অনেক সময় আমরা আলোচনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সব অভিব্যক্তিকে তুলে ধরতে পারি না। কিন্তু শিল্পী তাঁর সুনিপুণ তুলির আঁচড় ও রঙের সমারোহে নানামুখী আঙ্গিক থেকে উপস্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। তার মনোহরণকারী ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন সৃজনের আলোয়। প্রতিটি চিত্রকর্মের আড়ালেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি এই শিল্পীর শ্রদ্ধা-ভালবাসা আর নিরলস পরিশ্রম রয়েছে। তা না হলে এতগুলো ভঙ্গির বঙ্গবন্ধুকে আমরা পেতাম না। আর চিত্রপটে তাঁকে দেখে মনে হয় তিনি যেন সামনেই জীবন্ত হয়ে রয়েছেন। শিরীন শারমিন আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মহাজাগরণের পথিকৃৎ। তিনি চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। আমরা সেই লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্য পূরণে তরুণ প্রজন্মের সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মানসপটে অঙ্কন করতে হবে। নয় দিনের এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৪৪টি প্রতিকৃতি। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মঞ্চস্থ ক্যাসপার একজন আগন্তুক ॥ অস্ট্রিয়ান নাট্যকার পিটার হ্যাংকের নন্দিত নাটক ক্যাসপার। এবার নাটকটি মঞ্চস্থ হলো বাংলা ভাষায়। প্রযোজনাটিকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় একটি কর্মশালা। জার্মান ও বাংলাদেশের ছয়জন নাট্যকর্মী দুই সপ্তাহব্যাপী এক কর্মশালার মধ্য নাটকটি অনুধাবনের পাশাপাশি মঞ্চের উপযোগী করেছেন। আর প্রযোজনাটির নতুন নাম হয় ক্যাসপার একজন আগন্তুক। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো নাটকটি। এটি ছিল প্রযোজনাটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সিলকে শুমাখার-ল্যাংগে। এ ছাড়া মঞ্চসজ্জা আর পোশাক পরিকল্পনাও করেছেন তিনি।
×