ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন মাত্র ৯ মেট্রিক টন

আর্থিক সঙ্কট কাটছে না জেজেআই মিলের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৪ আগস্ট ২০১৫

আর্থিক সঙ্কট কাটছে না জেজেআই মিলের

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরে যশোরের শিল্প শহর নওয়াপাড়ায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ব জুটমিল যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) ৫ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন পণ্য রফতানি করেছে। তবে বর্তমানে মিলটিতে পড়ে রয়েছে ৩ কোটি টাকার এক হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য। নানা কারণে মিলটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। প্রতিদিন জেজেআই মিলের পণ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩২ টন হলেও মিলটি উৎপাদন করতে পারছে মাত্র ৯ মেট্রিক টন। মিল সূত্রে জানা গেছে, লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কোন রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে প্রতিমাসে ৪ কোটি টাকা খরচ হলেও এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির জন্য প্রতিষ্ঠাটি আলোর মুখ দেখছে না। তবে লোকসানের কারণ হিসেবে মিলটির কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি মজুরি কমিশন ঘোষণা হওয়ায় মিলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেছনে খরচ দ্বিগুণ বাড়লেও পণ্যর চাহিদা দিন দিন কমছে। তাছাড়া শ্রমিক রাজনীতিই মূলত মিলের ক্ষতি করছে। বেশিরভাগ শ্রমিক কাজ না করে মিছিল মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দার কারণে পাটজাত পণ্য রফতানি করা যাচ্ছে না। এটাও লোকসানের বড় কারণ। যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে জেজেআই জুট ইন্ডাস্ট্রিজ। এরপর একে একে ৪৪ বছর অতিবাহিত হলেও কোন বছর লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজে (জেজেআই) ১ হাজার ৪শ’ ৮৭ জন স্থায়ী শ্রমিক, ১ হাজার ৩শ’ ৫৭ জন অস্থায়ী শ্রমিক এবং ২শ’ ৫৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। এদের মাসিক বেতন ও মজুরি বাবদ প্রতি মাসে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সর্বশেষ গত ৮ বছরের হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিবছর সরকারকে মিলের পিছনে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে। ২০০৬Ñ২০০৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ২০০৭Ñ২০০৮ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আয় হয়েছে ২৩ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। ২০০৮Ñ২০০৯ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৪ লাখ ২ হাজার টাকা। আয় দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি ২১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। ২০০৯Ñ১০ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৫৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ওই বছর আয় হয়েছিল ৪০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ২০১০Ñ১১ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছিল ৪৯ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর বিপরীতে মিলটি আয় করেছে ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। ২০১১Ñ২০১২ অর্থবছরে মিলটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন কম পাটজাত পণ্য রফতানি করেছিল। ওই বছর তাদের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার মেট্রিক টন। তাদের ব্যয় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ২০১২Ñ২০১৩ অর্থবছরের ৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকার ৮ হাজার ১শ’ ৮০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে। এই অর্থবছরে মিলটির পেছনে সরকার টাকা খরচ করেছে ৪ কোটি টাকা। ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৯২ দশমিক ৮১ মেট্রিক টন পণ্য। যার মূল্য ৩৮ কোটি ৯২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এই বছরেও সরকারের একই পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়। যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ সিবিএর সাধারণ সম্পাদক হারুণ-অর-রশিদ জানান, মিলের শ্রমিকরা দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। এতদিন কি কারণে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেনি তা কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবেন। জেজেআই মিলের প্রকল্প প্রধান মহব্বত আলী মিয়া জানান, মজুরি কমিশন ঘোষণা হওয়ায় আগে যেখানে সপ্তাহে আমরা কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ২৮ লাখ টাকা দিতাম। এখন সেখানে লাগছে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু সেই পরিমাণে মাল বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতা দেশগুলো পণ্য নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া জেজেআই মিলে প্রতিদিন ৩২ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাটকলটিতে আগেও উৎপাদন হতো প্রায় ২৯ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৯ মেট্রিক টন পণ্য। যে কারণে এখন প্রতিদিন অন্তত ২০ মেট্রিক টন মাল কম উৎপাদন হচ্ছে। যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের (জেজেআই) প্রকল্প প্রধান আরও বলেন, সিরিয়া, জর্ডান, ইরান, ইরাক, ভারত ছাড়াও যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের বড় ক্রেতা।। অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে ওই দেশগুলো পাটজাত দ্রব্য কিনছে না। কিছু পাটজাত দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। যা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি দেয়া হচ্ছে।
×