ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পশ্চিমবঙ্গের ৪ ব্যাংকে জেএমবির জঙ্গী অর্থায়ন!

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৫ আগস্ট ২০১৫

পশ্চিমবঙ্গের ৪ ব্যাংকে জেএমবির জঙ্গী অর্থায়ন!

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী অর্থায়নের জন্য এবার রীতিমতো বোমা ফাটানোর খবরের শিরোনাম হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ছয়টি এ্যাকাউন্টে জঙ্গী অর্থায়নের লেনদেন করেছে এই জঙ্গী সংগঠনটি। জিহাদের নামে জঙ্গী মডিউলের জন্য বিদেশের মাটিতে বসে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর উদ্দেশে অর্থ লেনদেন করে আসছে সংগঠনটির জিহাদী গ্রুপ। জিহাদী গ্রুপের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর তা বন্ধ ও নিষ্ক্রিয় (ফ্রিজ) করে দিয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা তৈরির সময়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহত ও জঙ্গী তৎপরতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এবার জেএমবির জঙ্গী সংগঠনের জিহাদী গ্রুপের অর্থায়নের বিষয়টিও তদন্তে বেরিয়ে এলো। ভারতের ব্যাংকগুলোর অর্থ লেনদেনের বিষয় নিয়ে তদন্ত করে এমন আরেকটি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তে এই ধরনের তথ্য মেলে। তারপর জেএমবির খাগড়াগড় কা-ের ঘটনায় তদন্ত সংস্থা এনআইএ তদন্ত করে সেখানকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এ্যাকাউন্ট বন্ধ ও ফ্রিজ করে দেয়। যে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জেএমবির জিহাদী গ্রুপের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে তা হচ্ছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, কর্পোরেশন ব্যাংক, ব্যাংক অব বারোদা, ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অব কমার্স। শুধু তাই নয়, এসব ব্যাংকের বর্ধমান, বীরভুম, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতার বিভিন্ন শাখায় (ব্রাঞ্চে) জেএমবির অর্থ লেনদেন হয়। তদন্তে প্রকাশ, জিহাদের জন্য অর্থ লেনদেন করেছে জেএমবির জিহাদী গ্রুপটি। ভারতের দ্য ইকোনমিকস টাইমসে ‘জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ইউজড ৬ পিএসবি এ্যাকাউন্টস টু ফান্ড টেরর ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে ভারতের ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৬ এ্যাকাউন্ট পরিচালনার বিষয়টি তুলে ধরে জাতীয় তদন্তসংস্থা এনআইএর তদন্তের বরাত দিয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ বা ফ্রিজ করে দেয় বলে জানায়। এনআইএর তদন্তে জানা যায়, ভারতের ব্যাংকগুলোতে যে কেওয়াইসি নীতি বা রুল আছে তা ভঙ্গ করা হয়েছে জঙ্গী গোষ্ঠীর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এ্যাকাউন্টস পরিচালনায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে কেওয়াইসি ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে তা পরীক্ষা করেছে তদন্ত সংস্থা। দেখা গেছে, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে বা ব্যবহার করতে ভুয়া পিনকোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ভুয়া পিনকোর্ড ব্যবহারকারীরা বাংলাদেশী। বাংলাদেশীরা পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ভুয়া পিনকোর্ড ব্যবহার করে কিভাবে এ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেছে তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গত অক্টোবরে খাগড়াগড়ে জেএমবি বোমা তৈরি করার সময় বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই অন্তত ২ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। নিহত ২ জনই বাংলাদেশী এবং জেএমবির প্রথম শ্রেণীর জঙ্গী। এ ঘটনায় ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তদন্ত করে খাগড়গড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত যে ১২ জনের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে তার মধ্যে ৪ জনই বাংলাদেশী। এনআইএ মূলত বোমা বিস্ফোরণ ও জঙ্গী তৎপরতার বিষয়টি তদন্ত করলেও জঙ্গী অর্থায়ন ও ব্যাংকের লেনদেন সংক্রান্ত তদন্ত করে সেখানকার তদন্ত সংস্থা ইডি। তদন্ত সংস্থা ইডি জেএমবির ব্যাংক এ্যাকাউন্ট তদন্ত করে দেখতে পায় যে, ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে এবং একই দিনে তা উত্তোলনও করা হয়েছে। যদিও লেনদেনটি ছোটাকৃতি বা স্বল্পাকৃতির তবু একই দিনে কেনই বা টাকা জমা দেয়া হলো আবার কেনই বা একই দিনে তোলা হলো তার হিসাব মেলাতে পারছে না তদন্ত সংস্থা ইডি। ভারতে তদন্ত সংস্থা এনআইএর তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে সারদা কেলেঙ্কারির কোটি কোটি টাকার একটা অংশ জেএমবির কাছে পৌঁছেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে অসমসহ বিভিন্ন রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে জেএমবি। বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে জেএমবি জঙ্গীরা প্রথমে বর্ধমান এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে নাশকতার চক্রান্ত করে। জঙ্গীরা বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকায়ও ডেরা স্থাপন করে জঙ্গী প্রশিক্ষণ ও গ্রেনেড বোমা তৈরি করতে থাকে। খাগড়াগড় কা-ের ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গীদের দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতে তৎপরতার বিষয়টি প্রকাশ পায়। জেএমবির খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের-দুই দেশেরই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দুই দেশ সফর করে তথ্য বিনিময়, জঙ্গী তৎপরতা, সন্ত্রাস, জঙ্গী অর্থায়ন ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে এক সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এখন আবার নতুন করে জেএমবির ভারতের ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৬ এ্যাকাউন্ট পরিচালনার বিষয়টি তদন্তে প্রকাশ পেল।
×