ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক তুমি কার

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৫ আগস্ট ২০১৫

সড়ক তুমি কার

রাস্তা চলতে কেউ জানে না। শুধু জানে লাফ দিয়ে চলতে। আর তাতেই হড়কে পড়ে গর্তে। মচকে যায় পা। যুতসই মচকালে নির্ঘাত নিবাস হাসপাতাল। সেখানেও কত ঝক্কি-ঝামেলা। সিটি কর্পোরেশনের প্রেষণে সড়ক যে কোথায় উধাও! পথ চলতেই আনন্দ বলে কিছু নেই। কিচ্ছুটি নেই আর এই ঢাকা মহানগরী নামক রাজধানীতে। রাজরাজন্য, অমাত্ম্যপূর্ণ মহানগরীর হালহকিকত এমনই। আর সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক তবে তো আক্রান্ত মড়কে। সেখান থেকে কে তারে উদ্ধার করবে, কে করবে তার দেহে প্রাণসঞ্চার, খানাখন্দ কবে উবে যাবে, আর বায়স্কোপের নায়কের মতো গলা ছেড়ে গাওয়া যাবে- পিচঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি। কিন্তু সেই পিচের সড়কের হদিসই তো মেলে না। বরং দৃশ্যমান ভাঙ্গাচোরা সড়কজুড়ে বিশাল বিশাল গর্ত, ছোট-বড় খানাখন্দ। বৃষ্টির পানিতে ডুবে পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। মৃত্যু এসে দাঁড়ানো প্রতিটি স্থানেই যেন। যে কেউ যে কোন সময় গর্তে পড়ে মর্ত্যরে অকৃত্রিম স্বাদ নিতে পারেন। তবে দুর্ভোগ কম নয় তাতে। শিকার যিনি হন এই গর্তের তিনিই বোঝেন কী যাতনা এই মহানগরীতে বসবাসে। নিয়মিত কর দেয়া হোক আর না হোক নগরবাসীর চলাচল যদি হয় বিপর্যস্ত, তবে সবই তো হয়ে যাবে অনায়াসে স্থবির। আর সেই জীবন তো দুর্বিষহের, দুর্ভোগের, অসহনীয়তার। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলারও নেই আর উপায়। সব সড়কজুড়েই সারি সারি গাড়ি থেমে থেমে চলে। দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টা পার হয়ে যায়। খানাখন্দে বেশ চড়াই-উতরাই ভেঙ্গে চলছে কোনমতে। যানজটের তীব্রতায় নাকাল যাত্রী। তাদের কাছেও সড়কগুলোকে আর সড়ক মনে হয় না। হবেইবা কেন, সড়ক বলতে চোখের সামনে যা ভাসে, যা ব্যবহার করে আসা হয়েছে, তার অস্তিত্বই মূলত বিপন্ন। সারাদেহে যদি থাকে ক্ষতচিহ্ন, তবে চলাচলে বিধি মানার সুযোগই থাকে না নগরীতে নবাগতসহ প্রবীণদেরও। একে তো বৃষ্টিপাতের মৌসুম, সামান্য বৃষ্টিতে ভাঙ্গা রাস্তাগুলো নিমজ্জিত হয় হাঁটু পানি সমান। কোথাও সাঁতার কাটার অবস্থা দাঁড়ায়। সাঁতারে অলিম্পিক গেমস পর্যন্ত যাওয়ার যোগ্যতাহীন দেশের নগরবাসীর সাঁতারু হয়ে ওঠার মোক্ষম সুযোগ বৈকি। যদিও নাকে রুমাল দিয়েও গন্ধ দূর করা যায় না। কারণ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ভাসছে, ডুবছে, আবার ভাসছে। আর রাস্তার পাশে দ-ায়মান ময়লার ডিপোগুলো নাভিশ্বাস তুলছে মানবের শ্বাস গ্রহণে। ফুটপাথজুড়ে হরেক কিসিমের দোকানপাট। সুতরাং ফুটপাথ দিয়ে চলাফেরার নেই ন্যূনতম সুযোগ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে সমন্বয়হীনভাবে। প্রতœতাত্ত্বিক আবিষ্কার হলে দর্শনার্থীর ভিড় জমত। সড়ক খোঁড়ে আজ এই সংস্থা তো কাল অন্য সংস্থা। যাদের শখ ও সুখ বর্ষা মৌসুম এলেই চাগাড় দেয়। তখন যত পার খোঁড় রাস্তা খোঁড়। খুঁড়ে খুঁড়ে কর এমন হাল, যেন চলতে পারে নৌকা তুলে পাল। তা তারা করতেই পারেন। কিন্তু যদি করা হতো নগরীর যানবাহনগুলো জলে-স্থলে চলাচলের উপযোগী, তবে যাত্রীসহ নগরবাসী পেত সোয়াস্তি। বেহাল সড়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেহাল হয়ে পড়ছে সব যানবাহন। গর্তে পড়ে শিকার হচ্ছে দুর্ঘটনার। বিশ্বের বসবাস অযোগ্য দ্বিতীয় মহানগর এই ঢাকায় যানজট, জলজট মিশ্রিত সময়ে জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাঙ্গাচোরা সড়কে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। শ্রমে ও কর্মে বাজে লবডঙ্কা। জনগণের করের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় সড়ক মেরামত, সংস্কারে। কিন্তু সেই টাকাও ভেসে যায় জলে কিংবা গর্তের গহ্বরে। অতিবর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনের নেই উপায়। কর্তৃপক্ষ জানেন, কিন্তু মানেন না যে, নিয়মিত সড়ক সংস্কার প্রয়োজন। শক্তপোক্ত নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানোও জরুরী। সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করার প্রসঙ্গটি বহু পুরনো, যা কার্যকর হয় না। দুই সিটি কর্পোরেশনের বেহাল সড়ক সচল করার পরিকল্পনা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ নগরবাসীর কাম্য। সড়কগুলো যেন হয় দুর্ভোগমুক্ত।
×