ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সব উপজেলা শহর, গ্রোথ সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকবে নেটওয়ার্ক

গ্রামে পূর্ণাঙ্গ থ্রি জি চালু করার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ আগস্ট ২০১৫

গ্রামে পূর্ণাঙ্গ থ্রি জি চালু করার পরিকল্পনা

ফিরোজ মান্না ॥ বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহর। জেলা শহর থেকে উপজেলা শহর। উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের) নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারে এগিয়ে থাকায় সরকার গ্রাম পর্যায়ের গ্রাহকদের সমতায় আনতে থ্রিজি নেটওয়ার্ক গ্রামেও নিয়ে যাচ্ছে। তবে গ্রাম পর্যায়ের গ্রাহকরা প্রাথমিকভাবে ২ দশমিক ৫জি সেবার আওতায় আসবে। পরে গ্রামে পূর্ণাঙ্গ থ্রিজি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নতুন এই প্রকল্পের আওতায় দেশের সব উপজেলা শহর, গ্রোথ সেন্টার, বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থানে থ্রিজি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এই সেবা দিতে উপজেলা শহরগুলোতে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ এক হাজার ২শ’ বেজ স্টেশন স্থাপন করা হবে। আর প্রামাঞ্চলে ২ দশমিক ৫জি বাড়াতে ৫শ’টি বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) টাওয়ার করা হবে। গ্রামে এ সেবা দিতে আনুষঙ্গিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতিসহ ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও উন্নত প্রযুক্তির কোর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় যেসব স্থানে ইতোমধ্যে থ্রিজি চালু করা হয়েছে, সেসব স্থানে হাইস্পিড প্যাকেজ একসেস (এইচএসপিএ) পদ্ধতি স্থাপন করে সক্ষমতা বাড়ানো হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিযেছে, বর্তমানে জেলা শহরে থ্রিজি রয়েছে। কিন্তু উপজেলা শহর পর্যায়ে নেই। হাতে নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উপজেলা শহর পর্যায়ে থ্রিজি সম্প্রসারণ হবে। একইসঙ্গে গ্রাম পর্যায়ে ২ দশমিক ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। তখন উপজেলা ও গ্রামের গ্রাহক সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রেখে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়। রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক সাম্য, উৎপাদনশীলতা, জনসেবা, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, শিল্প ও গবেষণা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেবা বাড়বে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের যদি আরও বেজ স্টেশন স্থাপন করতে হয় তাও করা হবে। নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়া বৃদ্ধি করতে পারলে প্রাহক সংখ্যাও বাড়বে। নতুন করে ব্যান্ডউইথ’র প্রয়োজন না হওয়ায় গ্রাহক প্রতি ওভারহেড ব্যয় এবং পরিচালনা ব্যয় কমে আসবে। ফলে কম মূল্যে গ্রাহকরা ভয়েস কল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সরকার যখন থ্রিজি সেবা চালু করে তখন অনেকে এই পদ্ধতিকে ভিন্ন চোখে দেখেছিল। অনেকে ভেবেছিল থ্রিজি প্রযুক্তি মানুষ গ্রহণ করবে না। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষও ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তাই আমরা উপজেলায় থ্রিজি ও গ্রামে ২ দশমিক ৫জি প্রযুক্তি চালু করব। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। এর আগেই দেশে ফোর জি (চতুর্থ প্রজন্মের) নেটওয়ার্ক চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে, অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হয়েছে। ৪২ জেলার দেড় শতাধিক নোডে মোট ৪৬ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন এডিএসএল এক্সেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বিটিসিএলের ৭৪৭টি এক্সচেঞ্জের (৬৪ জেলার) অপটিক্যাল ফাইবার সংযুক্ত করা হয়। দেশে টেলিফোনের সংযোগ ক্ষমতা ১৪ লাখের বেশি হলেও এই সুবিধার আওতায় আসেনি বেশিরভাগ টেলিফোন। ইন্টারনেট সেবা দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে সেই সেবা এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি। কারণ এখনও কম দামে গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না। টেলিফোন, এডিএসএল, ইন্টারনেট ব্যান্ডইউথের চার্জ কমিয়ে আনা হলে গ্রাহক বাড়বে। ব্যয়বহুল কপার কেবলের বদলে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে খরচ কমানোর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বিটিসিএল। অন্যদিকে দেশের ‘উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল)। এ জন্য সারা দেশে নতুন করে ৭ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় টার্মিনাল নির্মাণের সরঞ্জাম স্থাপন করার জন্য একটি প্রস্তাবও করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট ব্যবহারে শহরের সঙ্গে গ্রামের পার্থক্য অনেকখানি দূর হবে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে। দ্রুতগতির ই-সেবা ছড়িয়ে পড়বে দেশে প্রত্যন্তঞ্চলে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের কারণে তাদের জীবনমানের উন্নতি হবে। পাশাপাশি নতুন এই অপটিক্যাল কেবল সম্প্রসারণের ফলে বিদ্যমান কেবলের ওপর চাপ কমবে। তথ্যপ্রযুক্তির চরম বিকাশের পরেও দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছে। দেশে বিদ্যমান ৪৮৬টি উপজেলার মধ্যে ৪টি মেট্রোপলিটন শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা) প্রশাসনিক উপজেলা নেই। এই প্রকল্পে ৪৮২টি উপজেলাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৯টি উপজেলার বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বাকি ৩০৩টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলায় এ মুহূর্তে ভৌগোলিক কারণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি, অবশিষ্ট ২৯০টি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হয়েছে। বঞ্চিত এলাকার মধ্যে রয়েছে ভোলা সদর, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বরিশালের মুলাদী, মেহেদীগঞ্জ এবং হিজলা এলাকা।
×