ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

মৈমনসিংহ গীতিকার পুনর্প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৬ আগস্ট ২০১৫

মৈমনসিংহ গীতিকার পুনর্প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য কীর্তিগাথা মৈমনসিংহ গীতিকা। অমর এই লোকগাথা কেবল বাংলা সাহিত্যের নয়, বিশ্ব সাহিত্যেরও অনন্য সম্পদ হিসেবে সমাদৃত। তাই তো এ লোকগাথা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য ও ১৮টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সাহিত্য-সংস্কৃতির উর্বর ভূমি ময়মনসিংহের লেখক, কবি ও পালাকারদের সৃজনশীল এ সাহিত্যকর্মে মানবজীবনের বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব-আবেগ ও অনুভূতি প্রস্ফুটিত হয়েছে। ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সম্পাদিত পঞ্চদশ শতকের আদি ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীন কবি-কবিয়ালদের এই সাহিত্যকীর্তি পরিণত হয়েছে অমূল্য সম্পদে। ১৯২৩ সালের ২ নবেম্বর কলকাতা থেকে এই গীতিকার এই প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আর ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলাদেশ সংস্করণ। বিশ বছর পর আবার নতুন কলেবরে প্রকাশিত হলো মৈমনসিংহ গীতিকা। এটি পুনর্প্রকাশ করেছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এই প্রকাশনা উৎসব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। একই ডালে ৬টি ফুল আমরা ছয়জনা/আদি ময়মনসিংহ আমরার আসল ঠিকানাÑসম্মেলক কণ্ঠে এই স্বাগত সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী। আলোচনা শেষে ময়মনসিংহ একাডেমি ফর ফাইন আর্টস পরিবেশন করে মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে মনোমুগ্ধকর গীতিনৃত্যনাট্য মহুয়া। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ভাষার প্রারম্ভিক পর্যায়ে মানুষ গান কবিতা দিয়ে সাহিত্যচর্চা করেছে। গদ্য এসেছে পরে। এই প্রজন্মের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি করাটা খুব জরুরী এবং সেটা হচ্ছে বই পড়া। পড়ার অভ্যাস কিভাবে আরও বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করাটা দরকার। কারণ জ্ঞান ছাড়া কোন উন্নতি সম্ভব নয়। মানসিক উন্নয়ন, রুচির উন্নয়নেও পাঠের গুরুত্ব রয়েছে। মৈমনসিংহ গীতিকার প্রকাশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পুনর্মুদ্রণের কারণে এটি আবার অনেকের নজরে পড়বে। এর প্রতি কারও আগ্রহ থাকলে সেটি আরও বেড়ে যাবে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, একজন পাঠক হিসেবে আমি মৈমনসিংহ গীতিকার রস আস্বাদনের সুযোগ পেয়েছি। এই গীতিকানির্ভর পালা দেখার সুযোগ পেয়েছি। তবে নতুন প্রজন্ম এই সুযোগ পাবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এই প্রজন্ম ভুগছে জিপিএ-৫ নির্যাতনে। এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে তারা অনেক কিছুই জানে না। সেক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি শিক্ষিত মানুষ হয়ে ওঠে না। আর অর্ধশিক্ষিত জাতি নিয়ে বেশিদূর এগোনো যায় না। সভাপতির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বাংলা ঠিকভাবে বলতে পারে না। এই নতুন প্রজন্মকে ভাষার মর্যাদা উপলব্ধি করতে হবে। কারণ ধার করা সংস্কৃতি নিয়ে কোন জাতি কখন সমৃদ্ধ হয়নি। আমরা শেকড়ের দিকে দৃষ্টিপাত দেয়ার চেষ্টা করছি। যারা ভাবেন সারাবিশ^ থেকে ধার করে সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে তারা ভুল করছেন। আমরা কথা দিচ্ছি মৈমনসিংহ গীতিকার ডিজিটাল সংস্করণও প্রকাশ করব। আলোচনায় তিনি অর্থমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রীর প্রতি ময়মনসিংহ অঞ্চলে লোক সংস্কৃতি একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের একাডেমি হলে ওই অঞ্চলের লোক সংস্কৃতিচর্চা আরও বেগবান হবে। বৃহত্তর বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা সহজ হবে। লিটনের রংতুলিতে বিজয় নিশান ॥ একাত্তরের বীরত্বগাথা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে রংতুলির আঁচড়ে চিত্রপটে উদ্ভাসিত করেছেন চিত্রশিল্পী লিটন ভূঁইয়া। তার ছবি দেখে মনে হয়, সুপ্ত ইতিহাসকে তুলে এনেছেন শিল্পী। আমাদের সোনালী অতীত ঘুমিয়ে আছে আমাদেরই স্মৃতিতে। সামাজিক বা রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের মনে রাখতে দিচ্ছে না কত ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। যুদ্ধ দিনে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আশাবাদী হয়েছিলাম, একসঙ্গে জেগে উঠেছিলাম। আজ আবার সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। লিটন ভূঁইয়া তার ছবিতে বলতে চানÑ আসুন আবার একত্রিত হই। বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদ থেকে শুরু হলো শিল্পী লিটন ভূঁইয়ার একক চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘বিজয় নিশান’। মঙ্গলবার বিকেলে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার ক্যাফে-লা-ভেরান্দায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহমিনা বেগম। বহুমাত্রিক এক শিল্পী লিটন ভূঁইয়া। ছবি আঁকা তার প্রধানতম পরিচয়। তবে এর বাইরেও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখেন। গান লিখেন। দীর্ঘদিন পর তার একক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছে রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। তার চতুর্থ একক প্রদর্শনীর সূচনা হলো গতকাল মঙ্গলবার। প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয়েছে শিল্পীর ২৫টি চিত্রকর্ম। প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, পতাকা হাতে ছুটে চলছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসহ বাঙালী জাতির ইতিহাসকে তিনি তুলে এনেছেন রংতুলির মূর্ছনায়। প্রদর্শনী শেষ হবে ৩১ আগস্ট। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। নজরুলের প্রয়াণবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আজ ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ বুধবার বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে ভবিষ্যতের নজরুল শীর্ষক একক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক জুলফিকার মতিন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আলোচনা শেষে থাকবে আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত নৃত্য উপলব্ধি ॥ মঙ্গলবার শরত সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নৃত্য উপলব্ধি’ শীর্ষক আয়োজনের ষষ্ঠ অধ্যায়। এবারের বিষয় ছিল ‘লোক ও আদিবাসী নৃত্য’। পরিচালনায় ছিলেন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। অডিও ভিজুয়াল প্রদর্শনী, নৃত্যবিষয়ক বক্তব্য, নৃত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি উপস্থাপন করেন লোক ও আদিবাসী নৃত্য উপলব্ধি। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছিল রাজধানীর ডেইলি স্টার-বেঙ্গল প্রিসিঙ্কট। অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপিত হয় লোক ও আদিবাসী নৃত্যের সূচনা, ইতিহাস ও বিবর্তনবিষয়ক আলোচনা। পরিবেশিত হয় পাতা নাচ, পাইক নাচ, ময়ূরভঞ্জ ছৌ, ত্রিপুরা, জুম নাচ ও রাইবেশী নৃত্য।
×