ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কাজী মোতাহার হোসেন স্মারক বক্তৃতা

দাবায় আগ্রহীরা সবাই ছিলেন তাঁর খেলার সঙ্গী

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৬ আগস্ট ২০১৫

দাবায় আগ্রহীরা সবাই ছিলেন তাঁর খেলার সঙ্গী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ দাবা খেলতে বসলে তিনি এতটাই নিমগ্ন হয়ে পড়তেন যে বাহ্যিক ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে কোন খোঁজখবর বলতে পারতেন না। শিক্ষক-ছাত্র, নগরীর উকিল-ডাক্টারসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের যারাই দাবা খেলায় আগ্রহী ছিলেন সকলেই ছিলেন তাঁর খেলার সঙ্গী। তবে তিনি নিজেকে কেবল এদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন না। খেলায় নিপুণ গাড়োয়ান, ঠেলাগাড়ির চালকরাও ছিলেন তাঁর খেলার সমাদৃত সাথী। একজন বিজ্ঞানী আর শিল্পীর মন নিয়েই তিনি দাবা খেলাকে গ্রহণ করেছিলেন। নিজে হেরে গেলেও খেলাটিতে শৃঙ্খলা আর সৌন্দর্যের দেখা পেলে তিনি তা ধরে রাখতেন। তাঁর নোট বইয়ে এ রকম অনেক প্রমাণ রয়েছে। দাবাকে তিনি এমনই ভালবাসতেন যে, দাবা প্রতিযোগিতা আর দাবা সংক্রান্ত কোন অনুষ্ঠানই বাদ দিতেন না। জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত তিনি দাবার সঙ্গে এমন সম্পর্ক রেখেছিলেন বলেই বাংলাদেশের দাবা আজকের এই সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে। তাঁর নাম শুনলেই দাবা সংশ্লিষ্ট সবাই ‘দাবাগুরু’ হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে উপলব্ধি করেন। কোন প্রাতিষ্ঠানিক খেতাব নয়, অনুরাগীদের দেয়া এই অভিধা আজ তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জড়িত। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মারক বক্তৃতায় প্রবীণ সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের দাবা খেলা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। কাজী মোতাহার হোসেনের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের তিনজন কৃতী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও স্বর্ণপদক তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। কাজী মোতাহার হোসেনের কন্যা এবং আয়োজক ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সনজীদা খাতুনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক কাজী রওনক হোসেনের উপস্থাপনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ বছর কাজী মোতাহার হোসেন স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হলেন মিরাজুল ইসলাম, খন্দকার আকিব মোহাম্মদ ও কামরুন নাহার কেয়া। এছাড়া তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোশাররফ হোসেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন পুরস্কার লাভ করেন। ‘দাবাগুরু ড. কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক ওই স্মারক বক্তৃতায় সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ড. কাজী মোতাহার হোসেন সম্পর্কে আরও বলেন, তিনি ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক, এই জনপদে পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের পথিকৃত, বিশেষ সূত্রের উদ্ভাবক, তারুণ্যের মননশীল লেখক, সুর ও সঙ্গীতের অনুরাগী একজন মানুষ। যিনি নিজে ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও ছিলেন এই জনপদে ধর্মের নামে অনাচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন সুশিক্ষিত মন আর শরীর উভয়ের প্রতি সমান যতœশীল। ক্রীড়াঙ্গনকে তিনি কখনও উপেক্ষা করেননি। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ দাবাকে স্বীকৃতি দিতে ছিলেন একান্ত অনীহ। তাই আঞ্চলিক দাবা সমিতি গঠন করেই দেশের দুই অংশে দাবা চর্চা চালু ছিল। ১৯৬১ সালে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান দাবা সমিতি যা পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান দাবা ফেডারেশনে রূপান্তরিত হয়, তিনি এর সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশে ক্রীড়া সংগঠন পুনর্গঠিত হতে শুরু করলে কাজী সাহেবের সম্পৃক্ততা থাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দাবা ফেডারেশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দাবা খেলা নিয়ে ড. কাজী মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, একজনের ভেতরে যখন অনেকের বসবাস, আর তা সমান দাপটে, তখন এক জগত থেকে অন্য জগতে পাড়ি দেয়া তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অন্যের চোখে তা বিস্তৃত বলে প্রতিভাত হতেই পারে। তবে হ্যাঁ, এসব স্মৃতি আমাদের মনে আজও প্রভূত আনন্দ যোগায়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রয়াত অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, মানব সভ্যতার উন্নয়নে তিনি অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। তাঁর আদর্শ ও রচনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ জাগ্রত করা। এক্ষেত্রে কাজী মোতাহার হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। কাজী মোতাহার হোসেনের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৎ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এম এ জলিল। এ সময় বিভাগের অধ্যাপক কালী পদ সেন, অধ্যাপক নিতাই চক্রবর্তীসহ অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
×