ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাসদ নেতা তথ্যমন্ত্রী ইনু

জঙ্গীবাদবিরোধী ঐক্য ভাঙ্গার লক্ষ্যেই বিতর্ক সৃষ্টির এ ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৭ আগস্ট ২০১৫

জঙ্গীবাদবিরোধী ঐক্য ভাঙ্গার লক্ষ্যেই বিতর্ক সৃষ্টির এ ষড়যন্ত্র

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীনতা-পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জাসদ নেতারা। প্রতিদিনই দু’দলের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে, যুক্তি-পাল্টা যুক্তির প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক ফাঁকা মাঠে নিজেদের মধ্যে এমন কাদা ছেড়াছুড়িতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই লাভবান হচ্ছে বলেই মনে করছেন জাসদ নেতা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচানোর জন্য এটা কোন পরিকল্পনা কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ইনু। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কিছু কিছু নেতা জাসদকে নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, তা ঐক্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে এবং বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জঙ্গীবাদবিরোধী লড়াইকে দুর্বল করবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের অভিযোগের জবাবে বুধবার জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এতদিন পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জাসদকে জড়িয়ে বিএনপির সুরে বিতর্ক সৃষ্টি কেন? তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সঙ্গে জাসদকে জড়ানোর কোন ভিত্তি নেই। জাসদের ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচানোর পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সৃষ্ট ঐক্য ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র চলছে। বুধবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নেতার জাসদ সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য রহস্যজনক। এ আক্রমণ মহাজোটকে দুর্বল করবে এবং বিএনপি-জামায়াতের অপরাধকে আড়াল করবে। তবে আমি তাদের সঙ্গে কোন বাকযুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছি না। বাকযুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। গত রবিবার এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম অভিযোগ করেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি ও মানুষ হত্যা করে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। পরদিন বিবৃতি দিয়ে এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় জাসদ। একদিন পর গত মঙ্গলবার পৃথক অনুষ্ঠানে বিএনপি ছাড়াও আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফও একই ধরনের বক্তব্য দেন। হানিফ বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, ইনুরা তখন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। অন্যদিকে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলন করে ১৯৭২-৭৫ সময়কার জাসদের ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন। এসব অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১৯৭২ সালে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে একটি আইনানুগ দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাসদ। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে-পরে জাসদ রাজনৈতিক দল হিসেবে কী কর্মকা- করেছে, কী ভূমিকা রেখেছে, জাসদ নেতাদের কী ভূমিকা ছিল, কর্নেল তাহেরের কী ভূমিকা ছিল তা পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, জাসদ সৃষ্টির পর থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিভিন্ন সময় নেয়া পদক্ষেপ ভুল ছিল না সঠিক ছিল, সেটি ইতিহাসই বিচার করবে। এই ব্যাপারটি নিয়ে আমি কোন কথা বলতে যাচ্ছি না। কারণ এটা প্রকাশিত ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাসদ খন্দকার মোশতাক সরকারের সুবিধাভোগী ছিল না দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর জাতীয় চার নেতাসহ আওয়ামী লীগের হাতেগোনা কয়েক ত্যাগী নেতা ছাড়া বহুজনই খন্দকার মোশতাকের করুণাভিক্ষার জন্য এবং হালুয়া রুটির ভাগাভাগির জন্য তার চারপাশে ভিড় করেছিলেন, অনেকে গঠিত খন্দকার মোশতাক সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জাসদের কোন নেতাকর্মী সেই সরকারে যোগ দেননি। এ রকম পরিস্থিতিতে আমি বলব যে, যারাই এ কথাটা বলছেন তারা হয় ইতিহাস জানেন না অথবা সচেতনভাবে অন্য কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জাসদকে জড়ানোর যে অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র, এটার কোন ভিত্তি নেই। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে বিচারকরা রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাক্ষীর জেরা থেকে অভিযোগপত্র কোন জায়গায় জাসদ সম্পর্কে একটি শব্দও লেখা নেই। যারা একই সুরে জাসদের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছেন, আমি তাদের সঙ্গে কোন বাকযুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলব, হঠাৎ করে জাসদকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি কেন শুরু করলেন, আমি জানি না। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা একই ভাষায় একই ধরনের সমালোচনার যোগসূত্র কী, এটাও আমি জানি না। জাসদ সম্পর্কে সমালোচনা মহাজোটে কোন ভাঙ্গন ধরাতে পারবে না এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের বিচার জিয়াউর রহমান আইন করে বন্ধ করে রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে জাসদ একটি প্রচারপত্র দেয়, ওই সময় আমরা খুনী মোশতাক সরকারের বিরোধিতা করেছিলাম। এই বিরোধিতার ফলে খন্দকার মোশতাকের ৮৩ দিন শাসনকালে জাসদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, অনেকে পালিয়ে বেড়িয়েছে। ৭০ জনের অধিক জাসদ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। এটা কিন্তু রেকর্ডভুক্ত। তারপরও জাসদের কোন নেতা মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলায়নি। তবে কারা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল? কারা খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল? সেটা আপনারা জানেন, দেশবাসীও জানে। আওয়ামী লীগ থেকে সমালোচনা হওয়ায় জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন কিনা, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটা তো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান না। আওয়ামী লীগ ও জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলন-নির্বাচন এবং সরকার পরিচালনায় আমরা একসঙ্গে আছি এবং আমরা মনে করি, এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নেয়ার জন্য ঐক্য দরকার। হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে জানবাজির লড়াই চলছে। খালেদা জিয়ার হত্যা, খুনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে চলেছি। সেই সময়ে কতিপয় ব্যক্তির এমন কিছু কথা বলা শুরু করেছেন, যা ঐক্যের ভেতর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। এই আক্রমণ বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করবে, তাদের রাজনৈতিকভাবে আড়াল করবে। তিনি বলেন, মহাজোট সরকারের সফলতা যাদের সহ্য হচ্ছে না, তারাই ঐক্যের ভেতর বিভ্রান্তির জাল তৈরি করছেন।
×