ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একদিন বিরতির পর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ফের ভাঙ্গন

২০ মিটার এলাকাসহ জেটি ও ক্রেন লাইন পদ্মায় বিলীন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৭ আগস্ট ২০১৫

২০ মিটার এলাকাসহ জেটি ও ক্রেন লাইন পদ্মায় বিলীন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের ফের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একদিন থেমে থাকার পর বুধবার প্রায় ২০ মিটার দীর্ঘ এবং ৪ মিটার প্রস্থ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে নদী থেকে পাইলিংয়ের মালামাল ওঠা-নামার জেটি ও ক্রেনের রেললাইন। এছাড়া পাশের খড়িয়া এবং মাওয়া পুরনো ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই ইয়ার্ডের আকস্মিক ভাঙ্গনে রবিবার রাতে বিলীন হয় প্রায় ২শ’ মিটির দীর্ঘ এবং প্রায় ৫০ মিটার প্রস্থ এলাকা। এতে ইয়ার্ডের একটি জেটি, জেটিতে ওঠার রাস্তা এবং অস্থায়ী কংক্রিট প্ল্যান্ট বিলীন হয়ে যায়। তবে বাঁশ ও বালুর বস্তাসহ নানাভাবে ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। দু’দিন বন্ধ থাকার পর পদ্মার তীব্র স্রোতে বুধবার সকালে আবারও গর্জে ওঠে। এদিকে এই ভাঙ্গনের খবর শুনে চীন থেকে জরুরীভাবে আসা পদ্মা সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সরেজমিন পরিদর্শন করে পরিকল্পনা তৈরি করছেন। এদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি বুধবার দুপুরে ভাঙন কবলিত পদ্মা সেতুর কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মূল সেতু এলাকা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার ভাটিতে লৌহজংয়ের কুমারভোগের পদ্মা সেতুর কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের এই ভাঙ্গন প্রথম দেখা দেয় গত ২৭ জুন। তখন ১শ’ মিটার দীর্ঘ ও ৫০ মিটার প্রস্থ এলাকা নদীতে বিলীন হয়। এবার সেই একই স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয় প্রায় দু’মাস পর। তবে এবারের ভাঙ্গন আগের চেয়ে বেশি ভয়াবহ। বুধবারের সকালের ভাঙ্গনে কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের মালামাল ওঠানোর একটি জেটি ও মালামাল বহনের জন্য নির্মিত রেললাইনের ন্যায় ক্রেন লাইনও পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। ফলে হুমকির মুখে পড়ে মালামাল রাখার স্থাপনা। এর আগে গত সোমবার কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের একটি মিকচার প্ল্যান্ট ও ঐ প্ল্যান্ট থেকে পদ্মা নদীতের ক্রেন লাইন দিয়ে নিয়ে যাওয়া একটি জেটিও বিলীন হয়ে যায়। মাওয়া নৌ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই ইউনুচ জানিয়েছেন, বাঁশ ও খুঁটির বেড়া দিয়ে সেখানে জিও ব্যাগভর্তি বালু ফেলা হয়েছে। তাই আপাতত ভাঙ্গন বন্ধ হয়েছে। এদিকে জিও ব্যাগভর্তি বালু ফেলতে গিয়ে একটি ট্রলার ১২ শ্রমিক নিয়ে পদ্মায় ডুবে যায়। তবে সকল শ্রমিকই তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় কেউ নিখোঁজ না হলেও ট্রলারটি পদ্মার উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তীব্র স্রোতে এটি কোথায় হারিয়ে গেছে তার পাত্তা নেই। লৌহজং উপজেলার পুরনো মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কুমারভোগের পাশের খড়িয়া এলাকায়ও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মাওয়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার মাত্র ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। মাওয়ায় বুধবার সকালে পদ্মার পানির লেভেল ৬ দশমিক ২ মিটার রেকর্ড করা হয়। এদিকে ভাগ্যকুলে পদ্মার পানির লেভেল এখন বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সকালে ভাগ্যকুলে পদ্মার পানি ৬ দশমিক ৪১ মিটার রেকর্ড করা হয়। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খালেকুজ্জামান ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে জানান, ভাঙ্গনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কন্সট্রাকশন এলাকার বাইরেও কুমারভোগ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খড়িয়া এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পদ্মার প্রচ- স্রোতই ভাঙ্গনের মূল কারণ। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, এসব বিষয়ে স্থানীয়ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই ভাঙ্গনে মূল সেতু কাজে কোন সমস্যার সৃষ্টি হবে না। সেতুর কাজ সিডিউল অনুযায়ী চলছে।
×