ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলে রিট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ আগস্ট ২০১৫

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলে রিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের সংশোধনী ২০১৩-এর ৫৭ ধারা বাতিল করার জন্য সুপ্রীমকোর্টের এক আইনজীবী রিট দায়ের করেছেন আরেক আইনজীবী ৫৭ ও ৮৬ এ দুটি ধারা বাতিলে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। বুধবার বিকেলে জনৈক জাকির হোসেনের পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী শিশির মুনির। অন্যদিকে সকালে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোঃ ইউনুচ আলী আকন্দ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিসটি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছ্নে। নোটিসে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং তথ্য সচিবকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের দুটি ধারা বাতিল করার জন্য বলা হয়েছে। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। তিনি বলেন, আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন-২০০৬’র (সংশোধনী ২০১৩) ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন এ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ কারাদ- ১৪ বছর ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ একই অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ- ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এটি সরাসরি বৈষম্য। আইনের এ ধারাটি সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার পরিপন্থী। রিটে বিবাদী করা হয়েছে আইন সচিব ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। উকিল নোটিস এদিকে এ্যাডভোকেট মোঃ ইউনুচ আলী আকন্দ উকিল নোটিস পাঠিয়ে বলেন, ওই আইনের ৫৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তা হলে তার এই কার্য হবে বা একটি অপরাধ।’ (২) ‘কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদ-ে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবেন। এছাড়া ৮৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোন কার্যের ফলে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তজ্জন্য সরকার, নিয়ন্ত্রক, উপ-নিয়ন্ত্রক, সহকারী নিয়ন্ত্রক বা তাহাদের পক্ষে কার্যরত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোন প্রকার আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।’ আইনজীবী মোঃ ইউনুছ আলী আকন্দ বলছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩৯ ও ৪০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিককে ‘সমান অধিকার’ দেয়া হয়েছে। ৩৯ অনুচ্ছেদে দেয়া হয়েছে ‘চিন্তা ও বিবেকের’ এবং বাক, ভাব প্রকাশ ও সংবাদপত্রের ‘স্বাধীনতার নিশ্চয়তা’। ৪০ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আর ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। উকিল নোটিসে বলা হয়, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৮৬ ধারা বৈষম্যমূলক এবং মানুষের মতো প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এই ধারায় সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যে ছাড় দেয়া হয়েছে তা সংবিধানের ২৭ ও ২৮ ধারারও লঙ্ঘন। সংবিধানের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা অন্য কোনভাবে রাষ্ট্র নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করতে পারবে না।
×