ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

লোকসাধক মনমোহন দত্তের জীবন দর্শন নিয়ে সেমিনার সঙ্গীত

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৭ আগস্ট ২০১৫

লোকসাধক মনমোহন দত্তের জীবন দর্শন নিয়ে সেমিনার সঙ্গীত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মরমী সাধক, কবি ও দার্শনিক মহর্ষি মনমোহন দত্ত। তিনি ‘মলয়া’ সঙ্গীতের স্রষ্টা। একজন সাধারণ মানুষও মহাঋষিতে পরিণত হতে পারেন- তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মনোমোহন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ যে যে ধর্মই পালন করে থাকুক তা একই স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই তিনি ধর্ম বিভেদ ঘোচাতে সর্ব ধর্মকে সমন্বয় করে ‘জয় দয়াময়’ জপ প্রচার করে গেছেন। লোকসাধক মনোমোহন দত্তের জীবন ও দর্শন নিয়ে এক সেমিনার ও সঙ্গীতের আসর বসে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। লালন রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। ফাউন্ডেশনের সভাপতি কবি আবু ইসহাক হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোকলোরবিদ সুমন কুমার দাশ। উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা সংস্কৃতি বেশি প্রকাশ পেয়েছে সাহিত্য, সঙ্গীত ও মরমীবাদের কারণে। মনোমোহন দত্তের সৃষ্টি তারই অনুসারী। তিনি বাউল ছিলেন কি ছিলেন না এটা বড় বিষয় নয়। তিনি ছিলেন মানুষের কবি। তবে তিনি সুফিযুক্ত অনেক গান লিখেছেন। যা তাঁর মরমীবাদ থেকে উৎসারিত। তিনি নিতান্ত অল্প বয়সেই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন, কিন্তু তাঁর রচিত গান হারিয়ে যায়নি। এখনও সেগুলো গাওয়া হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিএন দুলালের স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি যাযাবর স্বপন। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, একজন মানুষ হৃদয়ে কেবল ‘গুরু সত্য’ ও ‘জয় দয়াময়’ অমঘ বাণী হৃদয়ে ধারণ করে সাধনভজনের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে একটির পর একটি স্তর অতিক্রম করে একজন মহামানবে পরিণত হয়েছেন, ব্রহ্মজ্ঞানে জ্ঞানলাভ করেছেন, জ্যোতিস্মান হয়েছেন। তাঁর জীবন ছিল বড়ই বৈচিত্র্যময়। দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে মনোমোহন দত্তের মলয়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী গোলাম আম্বিয়া, সরদার রহমতুল্লাহ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নিখিল চন্দ্র সূত্রধর, আরিফ বাউল ও আনন্দ আশ্রমের শিল্পীরা। আলোচনা, গান ও কবিতায় জাতীয় কবিকে স্মরণ ॥ আলোচনা, গান ও কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বুধবার বিকেলে। কবির ৩৯তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে এ আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেনের কণ্ঠে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি এবং শিল্পী ড. নাশিদ কামালের কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, নজরুল একই সঙ্গে বিস্ময়-জাগানিয়া, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক জীবন ও সৃষ্টির নাম। তিনি লোকসঙ্গীতের বাণী ও সুরকে যেমন নিজের সঙ্গীতভুবনে সফলভাবে আত্মীকৃত করেছেন তেমনি তাঁর ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থে তিনি বাঙালীর অবিস্মরণীয় মুক্তিধ্বনি ‘জয় বাংলা’র কথা বলেছেন, যাকে পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক অভিযাত্রার সঙ্গে সার্থক সংযোজন ঘটিয়েছেন। ‘ভবিষ্যতের নজরুল’ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক জুলফিকার মতিন। তিনি বলেন, নজরুল মানেই এক অনন্য জীবনের গাথা। বাঙালীর সমন্বিত সংস্কৃতির বিভা-লাবণ্য ছড়িয়ে আছে তাঁর সৃষ্টিসমগ্রে। তাঁর কবিতা ও গানে ব্যবহৃত ধর্মীয় বা পৌরাণিক উপাদানকে তিনি শাস্ত্রের সীমিত গ-ি ছাপিয়ে মানবিক উচ্চতায় রূপকায়িত করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ছিলেন একই সঙ্গে বর্তমানের কবি এবং ভবিষ্যতের দ্রষ্টা। তিনি আজ থেকে বহু আগেই মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী চক্রের মানববিরোধী অপতৎপরতা সম্পর্কে তাঁর পাঠকদের সচেতন করে গেছেন। নজরুলের মানববাদ আত্মস্থ করে পৃথিবীব্যাপ্ত অসাম্য-সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
×