ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধ ভেঙ্গে নতুন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২৭ আগস্ট ২০১৫

বাঁধ ভেঙ্গে নতুন এলাকা প্লাবিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী ও গাইবান্ধা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রামে আরও ৫০ গ্রাম, জামালপুরের ৩৫ ইউনিয়ন এবং রাজবাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের- রাজশাহী ॥ নওগাঁর আত্রাই নদীর শুঁটকিগাছা এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে আকস্মিকভাবে রাজশাহীর বাগমারার ফকিরনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নরদাশ, বাসুপাড়া, কাচারী কোয়ালীপাড়া, দ্বীপপুর ও ঝিকরা ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি উঠেছে। ধেয়ে আসার পানির তোড়ে উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও এলজিইডির একাধিক বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন জানান, গত তিন দিন ধরে নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের মিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও একই ইউনিয়নের হুলিখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাচারীকোযালীপাড়া ইউনিয়নের কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বীরকয়া তীরমৌহনী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ২০টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল জব্বার জানান, তিনি বুধবার ওইসব বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রধান শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, এই সব প্রতিষ্ঠানের কোনটিতে হাঁটু পরিমাণ অবার কোনটিতে তারও বেশি পানি উঠেছে এবং চলাচলের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হঠাৎ করে ফের ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছে পদ্মা নদী। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের চর খিদিরপুরের ভিটেহারা ১৩০ পরিবারের মধ্যে ৬০ পরিবারকে উপজেলার প্রশাসন ‘মধ্যচর’ শ্যামপুরে স্থানান্তরিত করেছে। এ ৬০ পরিবারকে বুধবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গাইবান্ধা ॥ করতোয়া নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়া নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর মহাসড়কে তরক মনু এলাকায় করতোয়ার পানি যে কোন মুহূর্তে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালির বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এদিকে গোবিন্দগঞ্জের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ফতেউল্যাহপুর রায়বাড়ি সংলগ্ন করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে তালুককানুপুর ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা, সমসপাড়া, ধুন্দিয়া ও কুটিপাড়া, রাখালবুর জের বিষপুকুর, ধর্মপুর, নয়াপাড়া, কাজিপাড়া ও সোনাইডাঙ্গা, কামারদহের বকসীচর, ঘোড়ামারা, গুমানিগঞ্জের কুড়িপাইকা, মদনতাইড়, মহিমাগঞ্জের বালুয়া, বামনহাজরা, চরবালুয়া ও বোচাদহ এবং গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার আরজি খলসি, কালিকাডোবা, চাঁদপুর খলসি এলাকার আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে এবং বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। অপরদিকে, সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দক্ষিণ সাহাবাজ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে দক্ষিণ সাহাবাজ, উত্তর সাহাবাজ, গারোকাটা, মাস্টারপাড়া ও রামভদ্র নয়ারহাট এলাকার ৫০০ পরিবার এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ৬ দিন ধরে পানিবন্দী দেড় লাখ মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। বুধবার ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, দুধকুমোরসহ জেলার ১৬টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার সামন্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী জীবনযাপন করছে ৯ উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। পাহাড়ী ঢলের পানিতে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঢলের পানিতে ৫০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জিঞ্জিরাম নদীর পানির তোড়ে রৌমারী শৌলমারী সড়কের সুতিরপাড় ও বাবুলের চর প্রায় এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে প্রায় ৪০টি। জামালপুর ॥ যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কয়েক দিনের বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। রাজবাড়ী ॥ উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়ার কাছে পদ্মার পানি ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ তথ্য স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রের। পানি বেড়ে যাওয়ায় গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নতুন করে বেশকিছু এলাকার জমির ফসল ডুবে গেছে।
×