ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩২ বিলিয়ন ডলারের বাজার ধরতে চায় উদ্যোক্তারা

উৎপাদনের শর্তে গুজরাটে বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৮ আগস্ট ২০১৫

উৎপাদনের শর্তে গুজরাটে বিনিয়োগ

জসিম উদ্দিন ॥ এই মুহূর্তেই কারখানা করা যাবে। জমির দামও তুলনামূলক সস্তা। সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সংযোগ পাওয়া যাবে। দামও কম। ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র সাড়ে ৬ রুপি প্রতি ইউনিট। শর্ত হলো এই বিনিয়োগ করতে হবে উৎপাদনে। যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। শুধু বাণিজ্যের জন্য ওয়্যার হাউজ বা পণ্যের গুদাম ও বিতরণকেন্দ্র নয়। তাই এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু স্পিনিং মিল ও তৈরি পোশাক কারখানা করতে চান বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা। তাদের লক্ষ্য ভারতের ৩২ বিলিয়ন ডলারের স্থানীয় বাজার। এছাড়া ভারতের তুলা ব্যবহার করে স্পিনিং মিলে সুতা তৈরি করে বাংলাদেশে রফতানি করা যাবে বলে জানালেন ভারতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি দেখে এসেছেন এমন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী নেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র্র মোদির আমন্ত্রণে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে তিন দিনের মোদির রাজ্য গুজরাট সফরে যান ব্যবসায়ী নেতৃত্বের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সফর শেষে বুধবার বিকেলে দেশে ফিরেন তাঁরা। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক মোহাম্মদ নাসির ও সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ কটন এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আলী। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, এই সফরের আগে তারা হোম করেছিলেন। তাই ওই গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ জেলায় সরেজমিনে শিল্প প্লট দেখার পাশাপাশি ওখানকার শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। জানা যায়, গুজরাটের তিনটি ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এসবের মধ্যে ছিল- সরকারী প্রকল্প গুজরাট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (জিআইডিসি) সানান্্দ শিল্পপার্ক। যেখানকার প্রতি বর্গমিটার জমির দাম পড়বে সাড়ে তিন হাজার রুপি। শিল্প-কারখানা স্থাপনের একেবারে প্রস্তুত এসব প্লট। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব সুবিধাই আছে। এছাড়া মাত্র ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে মুনদ্রা সমুদ্র বন্দর। এই শিল্পপার্কের পাশে রয়েছে গাড়ি প্রস্তুতকারী টাটা, ফোর্ডসহ অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কারখানা। প্রতিনিধিদলের পরিদর্শন করা দ্বিতীয় শিল্পপার্কটিও আহমেদাবাদেই। জিন্দাল গ্রুপের আমিতারা গ্রিন হাইটেক টেক্সটাইল পার্ক লি.। এখানকার জমির দাম তুলনামূলক বেশ কম। প্রতি বর্গমিটার জমির মূল্য মাত্র ২ হাজার ১০০ রুপি। তবে এখনই কারখানা করার উপযোগী নয়। প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। এখানেও আছে প্রায় এখানে দেড়শ’ একর জমি। তৃতীয় শিল্পপার্কটি ভীরাজ গ্রুপের ধলীতে। ভীরাজ ইন্ট্রিগ্রেটেড টেক্সটাইল পার্ক । এখানে মাত্র ১০ একর জমি আছে। তাই এনিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। শহিদউল্লাহ আজিম জানান, তিনটি শিল্পপার্কেই গ্যাস-বিদ্যুতের সুব্যবস্থা আছে। এসবের মধ্যে জিআইডিসির শিল্পপার্কই আমাদের পছন্দ। এখানে স্পিনিং কারখানার জন্য ২৫ একর এবং পোশাক কারখানার জন্য ২০ একর সমপরিমাণ জমির প্লট দেখেছেন বলে জানান তিনি। সেখানে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা নেই। শুধু গুজরাটেই উৎপাদন হয় ২৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত। শিল্পের জন্য যা নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে। এছাড়া পর্যাপ্ত শ্রমিকও আছে। প্রশাসন বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ভারতের গুজরাটের জিআইডিসির শিল্পপার্কে বিনিয়োগের অনুকূলে। তবে, এজন্য জিটুজি আরও উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা, হওয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিজিএমইএ’র এই সহসভাপতি জানান, প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের চাহিদা রয়েছে ভারতে অভ্যন্তরীণ বাজারে। প্রাথমকিভাবে কারখানা ও পণ্যের গুদাম ও বিতরণকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য হবে ওই বাজার। এরপর রফতানি সুযোগ রয়েছে। জানা যায়, গুজরাটের গান্ধীনগরে সরকারী সংস্থা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সটেনশন ব্যুরো কার্যালয়ে গত রবিবার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলটি প্রথম বৈঠক করে। এতে রাজ্য সরকারের শিল্প ও খনি বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান সচিব অরভিন্দ আগারওয়াল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমিশনার মমতা ভার্মাসহ ভূমি, বন্দর, শ্রম ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সটেনশন ব্যুরোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরদিন শিল্প প্লট পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
×