ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে, দুই দিনেই কেজিতে কমল ২০ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৯ আগস্ট ২০১৫

পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে, দুই দিনেই কেজিতে কমল ২০ টাকা

এম শাহজাহান ॥ ‘সরকারী উদ্যোগে আমদানি’ এই খবর চাউর হওয়ায় মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমল ২০ টাকা। নিম্নমুখী বাজারে ৯০ টাকা থেকে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। দাম আরও পড়ার আভাস পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি এবং দ্রুত তা নেমে আসায় প্রমাণ হলো- পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে। কৃষকের ঘরে মজুদকৃত ‘রাখি’ পেঁয়াজের বড় অংশ বাজারে আসা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কড়া নজরদারি থাকায় আশা করা হচ্ছে, আগামী কোরবানি ঈদ পর্যন্ত বাজারে দেশী পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। এছাড়া টিসিবির আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে আসছে আগামী সপ্তায়। মসলা জাতীয় এ পণ্যটি নিয়ে বাজারে যে ‘গুমোট’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা দূর হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের বড় সিন্ডিকেট চক্রটির চিহ্নিত করতে পেরেছে সরকার। এখন এই চক্রটির কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, পেঁয়াজের আপদকালীন সঙ্কট মেটাতে দ্রুত আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে চীন, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মিসর থেকে। ইতোমধ্যে দেশে ঢুকেছে মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ। আগামী সপ্তায় চীনের পেঁয়াজ পৌঁছবে। এছাড়া কোরবানির সপ্তাহখানেক আগে দেশে ঢুকবে মিসরের পেঁয়াজ। দেশীয়টির পাশাপাশি আমদানিকৃত পেঁয়াজের সঙ্কট কেটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারে ৩৩৯ মেট্রিক টন মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা হয় ১৩৯ মেট্রিক টন ৬৮০ কেজি পেঁয়াজ। গত বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রবেশ করে আরও ২০০ মেট্রিক টন। এছাড়া আরও কয়েক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রবেশ করবে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০-৫২ টাকা কেজিতে। জানা গেছে, পেঁয়াজের আমদানি খরচ কমাতে ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ আমদানিতে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ শতাংশ। একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির আমদানিতে ঋণপত্র খোলার মার্জিনের হার (এলসি মার্জিন) ন্যূনতম পর্যায়ে রাখারও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে তিন দিনে পেঁয়াজের দর এক-তৃতীয়াংশের বেশি বেড়ে যাওয়ার পর বাজার ঠিক রাখতে টিসিবির মাধ্যমে আমদানিসহ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাজারে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বন্দর থেকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত ছাড় করানোরও সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টিসিবির মাধ্যমে আমদানি, সুদহার হ্রাস, দ্রুত দেশে আনা, পোর্ট সুবিধা নিশ্চিত করা এবং এলসি মার্জিন কমানোর মতো উদ্যোগ নেয়ায় পেঁয়াজের দাম এখন কমেছে। এছাড়া বেসরকারী পর্যায়ে যারা পেঁয়াজ আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ করে থাকেন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সহযোগিতা বাড়িয়ে আমদানি উৎসাহিত করেছে সরকার। তিনি বলেন, এসব কারণে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার ও ভারত থেকে। এছাড়া চীন ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। যা শীঘ্রই দেশে প্রবেশ করবে। বাণিজ্য সচিব বলেন, সরকার ব্যবসা করতে চায় না। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন। কিন্তু ব্যবসার নামে বাজার মনোপলি করা এক ধরনের অপরাধ। এটা বন্ধে আমাদের ফোর্সগুলো কাজ করছে। জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৩ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ লাখ টন আর উৎপাদিত হয় ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। ঘাটতি পেঁয়াজের বাকি প্রায় ৫ লাখ টনের একটি বড় অংশ দেশে আনা হয়েছে। এছাড়া আমদানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পচনশীল পণ্য বিধায় সারা বছর পেঁয়াজ আমদানি করা হয়ে থাকে। গত কয়েক মাসে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে দেশে এসেছে। সেই হিসেবে দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বারোজনের একটি সিন্ডিকেট চক্র কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এই সঙ্কটের কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মোঃ মনির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। দাম বাড়তি কিন্তু পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে শ্যাম বাজার ও বাদামতলীর বাজারে। পাইকারি দাম বেশি হওয়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ার পরও বাজারে পর্যাপ্ত দেশী পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আসছে আমদানিকৃত পেঁয়াজও। ফলে আগামী দু’একদিনের মধ্যে দাম আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
×