ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

নবীন চোখে দেখা পিতার মুখ, বিকল্প ভাবনার বিস্তার

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ আগস্ট ২০১৫

নবীন চোখে দেখা পিতার মুখ, বিকল্প ভাবনার বিস্তার

মোরসালিন মিজান বেশ কিছু ছবি। শুধু তেল রঙ জল রঙ নয়। বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ। নীরিক্ষাপ্রবণ অনেকেই। অপেক্ষাকৃত নতুন মাধ্যমে কাজ করেছেন। চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে তাই একবারটি ঢুঁ মেরে চলে আসা যায় না। বরং ঘনিষ্ট হয়ে দেখতে হয়। অথচ একেবারেই নবীনদের কাজ। চারুকলার বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজের বোধ ও ভালবাসা থেকে বঙ্গবন্ধুকে এঁকেছেন। শিরোনামÑ বঙ্গবন্ধু শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০১৫। বুধবার বিকেলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত। আয়োজনটি সম্পর্কে এখন অনেকেই জানেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রতি আগস্টে এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে আসছে। এতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। সে ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজন। এবারও বিষয় বঙ্গবন্ধু। প্রাথমিকভাবে ২২৮টি শিল্পকর্ম জমা পড়ে। প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করা হয় ৮৭টি শিল্পকর্ম। সেগুলো দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারি। অধিকাংশই পোরটেইট। রেফারেন্স ছবি থেকে নিয়ে জাতির জনককে নিজস্ব শিল্পভাষায় প্রকাশ করেছেন শিল্পীরা। প্রদর্শনীকে বিশিষ্টার্থক করেছে বিচিত্র মাধ্যমের ব্যবহার। নাজমুল ইসলাম শামীমের কথাই ধরা যাক, বোর্ডের উপর পেরেক আর সুতো দিয়ে তাঁর করা স্কেচ দেখে চোখ আটকে যায়। বোর্ডের উপর অসংখ্য পেরেক ঠুকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন শিল্পী। সেই পেরেক আশ্রয় করে কালো সুতোর ঠাসবুনন। তাতেই ৬ ফিট বাই ৫ ফিট মাপের পোর্ট্রেইট! না, সামান্য দূর থেকে মাধ্যমটি অনুমান করা যায় না। কাছে গিয়ে দাঁড়ালে বিস্মিতই হতে হয় কেবল। বাইরের কিছু দেশে এই মাধ্যমে কাজ হয় বটে। বাংলাদেশে হয়েছেÑ এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেল না। প্রথম দিন গ্যালারিতে ঘুরতে ঘুরতেই দেখা মিললো শিল্পীর। জানালেন, পোর্ট্রেইট স্টাডিটা খুব পছন্দের। এবার একটু নীরিক্ষার চেষ্টা করেছেন। পুরো কাজটি করতে পেরেক ব্যবহার করেছেন ২ কেজির মতো। সুতো প্রায় এক কেজি। টানা ২০ দিন কাজ করেছেন। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় দিয়ে অনন্য শিল্পকর্ম গড়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সেরা হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ অর্জন করেছেন তিনি! শিল্পী শুভ মাহমুদের কাজেও বিকল্প ভাবনার বিস্তার। তিনি মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন জামার বুতাম। ৬ রংয়ের বোতামে অদ্ভুত সুন্দর কোলাজ করেছেন। সাড়ে ৫ ফিট বাই ৭ ফিট ফ্রেমে যে বঙ্গবন্ধু দৃশ্যমান হন তাঁকে চিনতে কোন অসুবিধে হয় না। বরং ব্যক্তিত্বের গাম্ভীর্যের সবটুকু নিয়ে সামনে আসেন পিতা। শুভ জানান, শিল্পকর্মটি গড়তে ১৭ হাজারের বেশি বোতাম ব্যবহার করা হয়েছে! নিপুণ শিল্পকর্মের জন্য তিনি অর্জন করেছেন দ্বিতীয় সেরা ‘ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পুরস্কার’। পুরস্কার পাওয়া মিজানুর রহমান, আল মামুন ও শ্যামল সরকারের কাজগুলোও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল বলে মনে হয়েছে। কিছু কাজ আবার পুরস্কারের বাইরে থেকেও জ্বলজ্বল করছে। কীবোর্ড মিডিয়ায় কাজ করেছেন একজন শিল্পী। কম্পিউটারের অসংখ্য কীবোর্ড বাটন খুঁজে নিয়ে সেগুলো একটি একটি করে বোর্ডে পেস্ট করা হয়েছে। সাদা এবং কালো রঙের বাটনে মূর্ত হয়ে ওঠেছেন বঙ্গবন্ধু। একটু প্রাণহীন মনে হয় বটে, তবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা কিংবা আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে এখানে যৌক্তিক উপস্থাপনা পায়। বিপ্লব কুমার ম-লের শিল্পকর্ম গভীর স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধুকে বিশাল এবং সুপ্রাচীন বৃক্ষটির আদল দেন তিনি। শক্ত শেকড়ের এই বৃক্ষকে তুমুল ঝড়ও টলাতে পারে না। বক্তব্য জোরালো করতেই হয়ত গাছের শুকনো বাকলকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন শিল্পী। অবিসংবাদিত নেতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সংগ্রাম তুলে আনার চেষ্টা এখানে পরিলক্ষিত হয়। পত্রিকার পাতা, রঙিন মার্বেল ইত্যাদি মাধ্যমেও গড়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। আছে রং তুলির চমৎকার কিছু কাজ। ভাস্কর্য আছে। সব মিলিয়ে নবীন শিল্পীদের সমৃদ্ধ একটি প্রদর্শনী। চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
×