ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র মজুদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরই হবে দেশটির স্থান

পাকিস্তান হবে তৃতীয় শক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ আগস্ট ২০১৫

পাকিস্তান হবে তৃতীয় শক্তি

আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের মজুদের দিক থেকে পাকিস্তান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হবে। কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরেই হবে পাকিস্তানের স্থান। যুক্তরাষ্ট্রের দুটি গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। পাকিস্তান সম্ভবত প্রতিবছর ২০টি পরমাণু ওয়ারহেড তৈরি করছে বলে ওই নতুন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের ভয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য দ্রুত বৃদ্ধি করছে। ভারতও পরমাণু শক্তিধর দেশ। কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এবং স্টিমসন সেন্টার রিপোর্টটি তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, পাকিস্তান পরমাণু ওয়ারহেড তৈরির কাজে ভারতের তুলনায় অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১২০টি এবং ভারতের হাতে প্রায় ১০০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তানের হাতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিরাট মজুদ থাকায় আগামী বছরগুলোতে দেশটি নাটকীয়ভাবে বর্ধিত মাত্রায় সুবিধা পেতে পারে, কারণ এ ইউরেনিয়ামকে অপেক্ষাকৃত কম বিস্ফোরণ শক্তি সম্পন্ন পরমাণু অস্ত্র দ্রুত তৈরি করতে কাজে লাগানো যেতে পারে। পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের বেশি বিস্ফোরণ শক্তিসম্পন্ন পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়ামের অনেক বেশি মজুদ রয়েছে। কিন্তু, রিপোর্টে বলা হয়, ভারত অভ্যন্তরীণ জ্বালানি তৈরি করতে এর প্লুটোনিয়ামের বেশিরভাগ ব্যবহার করছে বলে মনে হয়। পাকিস্তানের হাতে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে অন্তত ৩৫০টি পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে বলে রিপোর্টের সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। পাকিস্তান তখন সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বাদে যে কোন দেশের তুলনায় বেশি পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হবে। এ দুটি দেশের প্রত্যেকটির হাতে হাজার হাজার পরমাণু বোমা রয়েছে। পাকিস্তানের পরমাণু বোমা তৈরির সামর্থ্যরে নিখুঁত মূল্যায়ন করতে পশ্চিমা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বছরের পর বছর ধরে কঠোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কয়েক পাকিস্তানী বিশ্লেষক রিপোর্টটির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, এটি এ ভ্রান্ত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতেই এর মিসাইল উপকরণের বর্তমান সমগ্র মজুদকে কাজে লাগাচ্ছে। ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিশেষজ্ঞ মনসুর আহমদ বলেন, পাকিস্তান আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৪০-৫০টির বেশি নতুন ওয়ারহেড তৈরি করতে পারবে না এটিই হবে পাকিস্তানের সামর্থ্যরে আরও সঠিক মূল্যায়ন বলে তার ধারণা। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে এর পরমাণু অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে এ নিয়ে আহমদ প্রশ্ন তোলেননি। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিসদের মতে, ফ্রান্সের হাতে প্রায় ৩০০ ওয়ারহেড এবং যুক্তরাজ্যের হাতে প্রায় ২১৫টি ওয়ারহেড রয়েছে। চীনের হাতে রয়েছে প্রায় ২৫০টি। পাকিস্তান পরমাণু ওয়ারহেড তৈরি করতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পাশাপাশি প্লুটোনিয়ামও ব্যবহার করছে বলে মনে করা হয়। ওই রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা টবিড্যাল্টন উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তান খুশাব নিউক্লিয়ার কমপ্লেক্সে সম্প্রতি চতুর্থ প্লুটোনিয়াম উৎপাদন চুল্লি সংযুক্ত করেছে। তিনি কার্নেগি এনডাওমেন্টস নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের কো-ডিরেক্টর। ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী বলে ১৯৯৮ সালে ঘোষণা করা হয়। তারা তিনবার বড় রকমের যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। সেই সময় থেকে পশ্চিমা নেতারা দু’প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে ক্রমশ আতঙ্ক বোধ করে এসেছেন। ভারত পরমাণু অস্ত্র প্রথমে ব্যবহার না করার নীতি গ্রহণ করেছে। পাকিস্তানী নেতারা এরূপ অবস্থান নিতে বারবার অস্বীকার করে এসেছেন। তারা বলছেন, যদি ভারতের বৃহত্তর সেনাবাহিনী কখনও পাকিস্তান আক্রমণ করে, তা হলে তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হতে পারেন।
×