ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দামেস্ক পরিণত হয়েছে শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় একক উৎসে

সিরীয় যুদ্ধ ॥ দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটে বিশ্ব সম্প্রদায়

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩১ আগস্ট ২০১৫

সিরীয় যুদ্ধ ॥ দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটে বিশ্ব সম্প্রদায়

ইউরোপের দিকে ছুটে আসা হাজার হাজার সিরীয় শরণার্থীর দিকেই বিশ্বের দৃষ্টি। কিন্তু সম্ভবত আরও গভীর এক সঙ্কট মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোতে দানা বেঁধে উঠছে। সিরীয় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বিশ্বের ব্যর্থতার মাশুল মধ্যপ্রাচ্যকেই দিতে হয়েছে। যারা ইউরোপে পৌঁছুচ্ছে তারা লেবানন, জর্দান, তুরস্ক ও ইরাকে পালিয়ে যাওয়া ৪০ লাখ সিরীয়ের এক অতি ক্ষুদ্র অংশ। সিরিয়া পরিণত হয়েছে বিশ্বের শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় একক উৎসে। সিরীয় যুদ্ধ ধীরে ধীরে পঞ্চম বর্ষে পড়তে যাচ্ছে। এ সময়ে ত্রাণ সংস্থাগুলো, শরণার্থীদের আশ্রয় দানকারী দেশগুলো ও সিরীয় নিজেরাও বেশিরভাগই খুব সহসা বাড়ি ফিরতে পারবে না বলে বুঝতে শুরু করছে। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটে পতিত হবে। এ সঙ্কট মোকাবেলার কোন উপায় বিশ্বের থাকবে না এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য ও বৃহত্তর বিশ্বের জন্য গভীর অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘ হাই কমিশনার এ্যান্টোনিওগুটেরেস বলেন, সেই ব্যর্থতা প্রথমে ও সর্বাগ্রে কূটনীতিরই ব্যর্থতা। সিরীয় সংঘর্ষে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থলে অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার লোক নিহত এবং সামগ্রিকভাবে ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি বাস্তচ্যুত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোন শান্তি প্রক্রিয়া নেই, কোন সমাধান চোখে পড়ছে না এবং সংঘর্ষ অবসানের কোন লক্ষণও দখা যায় না। এখন মানবিক সহায়তার চেষ্টা ও উৎসাহ কমে আসা, দান সাহায্য হ্রাস এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যর্থতার মুখে পড়ছে। গত চার বছর ধরে শরণার্থীদের ভরণপোষণের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, জাতিসংঘ তার অর্ধেকেরও কম পেয়েছিল। যারা শীঘ্রই বাড়ি ফিরবে বলে আশা করে তাড়াহুড়ো করে সিরিয়া ত্যাগ করেছিল, যখন তাদের সঞ্চয় ফুরিয়ে আসছে তখন সহায়তা ছাঁটাই করা হচ্ছে এবং সাহায্য কর্মসূচী স্থগিত করা হচ্ছে। গুটেরেস এক সাক্ষাতকারে বলেন যে, এটি এমনই এক দুঃখজনক ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে যার কোন তুলনা নেই। তিনি সতর্ক করে দেন যে, লাখ লাখ লোক বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তাটুকুও শেষ পর্যন্ত নাও পেতে পারে। এ সঙ্কটের সত্যিকারের ক্ষতি এখনও উপলব্ধি করা যায়নি। অসহায়, নিঃস্ব শরণার্থীরা মধ্যপ্রাচ্যের ছোট-বড় শহর ও খামারগুলোর চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এ দৃশ্য বিশ্বের অবহেলার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। শরণার্থীরা বৈরুত, ইস্তাম্বুল, আম্মান এবং ছোট ছোট শহর ও গ্রামগুলোতে টিসু পেপার বা গোলাপ ফুল বিক্রি করতে বা কেবল ভিক্ষা করতে ঘুরে বেড়ায়। শিশুদের কোলে জড়িয়ে মায়েরা ট্রাফিক সার্কেল, আন্ডার ব্রিজ, পার্ক ও দোকানপাটের প্রবেশপথে ঘুমিয়ে থাকে। গত দু’বছরে ইউরোপে যারা আশ্রয় চেয়েছিল, তাদের সবচেয়ে বড় অংশই ছিল সিরীয়। তাদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর এ সময় অবধি জলপথে গ্রীষ্মে পৌঁছা ১ লাখ ৬০ হাজার লোকের শতকরা ৬৩ ভাগই সিরীয়। কিন্তু পাচারকারীদের দাবিমত ৫ হাজার বা ৬ হাজার ডলার দেয়ার সামর্র্থ্য রয়েছে এমন শরণার্থীরাই কেবল ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারে। ঐ অঞ্চলে একমাত্র তুরস্কই শরণার্থীদের বলতে গেলে স্বাগত জানিয়েছে। কোন কোন সিরীয়কে কাজ করতে, স্কুলে যোগ দিতে এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতে দেয়া হয়। সে দেশের সরকার এরই মধ্যে তুর্কিদের তাদের দেশে ১৯ লাখ সিরীয়ের উপস্থিতি স্থায়ী হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। তুরস্কের জনসংখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখ। লেবানন সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত ১১ লাখ সিরীয়ের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটানোর পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত রয়েছে। কারণ দেশটির ১৯৭৫-৯০ সালের গৃহযুদ্ধে ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের তৎপরতার কথা এখনও সরকারের মনে রয়েছে। Ñওয়াশিংটন পোস্ট।
×