ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাপুরুষ সৃষ্টি করেনি কখনও

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩১ আগস্ট ২০১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাপুরুষ  সৃষ্টি করেনি কখনও

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮০০ শিক্ষকের মধ্যে কতজন পড়ান। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়টি বিভাগ আছে। যারা পড়ান তারা সংখ্যায় ১%-এর বেশি হবে কী? তারা কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করে সেখানে পড়ান। আজ পড়ুন শেষ কিস্তি... শিক্ষকরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, সেটিই স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যুক্ত না থাকাটাই অস্বাভাবিক। কারণ, এটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আমলারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়Ñ এ কথা শুনলে পাগলও হাসবে। পত্র-পত্রিকায় খবরাখবর কি প্রকাশিত হয় না বিএনপি আমলে, আওয়ামী লীগ ভাবাপন্ন আমলাদের কী ব্যবস্থা করেছিল বিএনপির আমলারা [তখন আওয়ামীপন্থী আমলারা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন] ? আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি-জামায়াত আমলাদের অবস্থা এখন কী? কেবিনেট থেকে সিনিয়র সচিবরা কি বিএনপি-জামায়াতপন্থী? ছাত্ররা রাজনীতি করবে, সেটিই স্বাভাবিক। তারাই তো দেশ সৃষ্টি করেছে, গণতন্ত্র এনেছে। আমার এক বন্ধু তার ও তার জেনারেশনের বন্ধুদের সন্তানদের ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ানো নিয়ে ঠাট্টা করে বলেছেন, এরা ফার্মের মুরগি। প্রশ্নÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি আমলা/এলিটদের সন্তানদের মতো ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে পড়ে ফার্মের মুরগি হবে? স্বৈরশাসকরা [এবং এক সময় প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন, যিনি আমলা ছিলেন] বলতেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। কারণ, ছাত্ররা রাষ্ট্রে এ ধরনের অবাঞ্ছিত কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে। তারা তাই ছাত্রদের হুমকি মনে করেন। ছাত্রদের একাংশ অপকর্ম করতে পারে। সেটি আমলাতন্ত্রের একাংশও করে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস না করে কেউ সরকারী চাকরি পায় না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা অশিক্ষিত হলে আমলারাও স্বাভাবিকভাবে অশিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান ও প্রমোশন বিষয়ে একটি পদ্ধতি আছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই দেখা যায় ২৭ বছর বয়সে প্রফেসর ও চেয়ারম্যান করার। বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স বা সিনিয়রিটি যোগ্যতার মাপকাঠি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের পরীক্ষার ফল ভালো। বিশেষ করে গত এক দশকে চারটি ফার্স্ট ছাড়া কেউ নিয়োগ পেয়েছে বলে মনে হয় না। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রে ফলাফল বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রথম শ্রেণী ছাড়া কেউ নিয়োগ পান না। পিএইচডি করতে গেলেও ন্যূনতম নাম্বার লাগে বা এম.ফিল ডিগ্রি থাকতে হয়। প্রমোশনের ক্ষেত্রে অনেক শর্ত আছে যেটি আমলাতন্ত্রে নেই। এবং প্রতিটি প্রমোশনের অর্থ নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া। শুধু ১২ বছর হলেই অধ্যাপক হওয়া যায় না। সঙ্গে আরও অনেক কিছুর দরকার হয়। আমার অধ্যাপক হতে প্রায় ২০ বছর লেগেছে। আমি কতগুলো অপপ্রচারের উত্তর দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিফেন্ড করার কোন দরকার নেই। কিন্তু কোন বেসামরিক কর্মকর্তা বা সামরিক কর্মকর্তা নিজেদের কোন সমালোচনা করবেন না। কিন্তু আমি সব সময় নিজেদের সমালোচনা করেছি, এখনও করব। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে উপহার দিয়েছিলেন ‘১৯৭৩ সালের আইন’Ñ তার অনেক অপব্যবহার আমরা করেছি। এই আইন সময়োপযোগী করা উচিত। জনপ্রতিনিধিরা তা করতে পারেন এবং এতে আমাদের স্বায়ত্তশাসন বিঘিœত না হলে, আমাদের প্রতিবাদ করা বিধেয় নয়। যেমন, সর্বক্ষেত্রে নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। প্রমোশনের ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন কাম্য নয়। শিক্ষকদের দায়-দায়িত্বের ব্যাপারেও শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য নয়। রমেশ চন্দ্র মজুমদার যখন উপাচার্য তখন মুসলমান সম্প্রদায় থেকে কথা উঠেছিল, মুসলমানদের জন্য প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে সেজন্য তাদেরই বেশি সুযোগ পাওয়া উচিত। রমেশ চন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যেসব মুসলমান নেতা যুক্ত ছিলেন তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তিনি বলেছিলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের উৎকর্ষ নির্ভর করে তার শিক্ষকম-লীর ওপরে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত মুসলমান ছাত্রদের কল্যাণের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং যোগ্য শিক্ষক যদি নিযুক্ত না হয় তাহলে মুসলমান ছাত্রদের পক্ষেই তা পরিণামে অনিষ্টের কারণ হবে। এর উত্তরে তারা যা বলতেন সেটিও খুবই বিচার বিবেচনা করে দেখার মতো। তাদের মতে প্রধান প্রধান অধ্যাপক (চৎড়ভবংংড়ৎ, জবধফবৎ) নিয়োগের বেলায় সাম্প্রদায়িক কোন প্রশ্নই তোলা উচিত নয়। গুণানুসারে যাতে যোগ্যতম ব্যক্তিই নিযুক্ত হন তা তারা সম্পূর্ণ অনুমোদন করেন। কিন্তু অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মচারীর বেলায় কতকাংশে নিকৃষ্ট হলেও তারা একমাত্র মুসলমানকেই নিযুক্ত করতে চান। তার কারণ এই যে, বাংলাদেশে, বিশেষত পূর্ববঙ্গে, মুসলমানদের অবনতির একটি প্রধান কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের অভাব। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী সৃষ্টি করতে হলে শিক্ষক দিয়েই তা আরম্ভ করতে হবে।” বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এ যুক্তি অসার মনে হলেও মূল বিষয়টি কিন্তু যুক্তিযুক্ত। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ নির্ভর করে শিক্ষকদের ওপর এবং প্রধান প্রধান পদে গুণানুসারে যোগ্যতম ব্যক্তিকেই নিয়োগ প্রদান বাঞ্ছনীয়। এখানে বর্ণ, ভাষা, ধর্ম, দল, গোষ্ঠী যাতে কোন বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। আদি প্রতিষ্ঠাতারা এটি মনে রেখেছিলেন, যে কারণে অচিরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল যা এখনও আমরা ভোগ করছি। উত্তরসূরিদের জন্য এবং যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সম্পূর্ণভাবে সমাজের টাকায় চলে, সেহেতু উচ্চতর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব রূঢ় সমালোচনা হচ্ছে সেগুলো দেশের, আমাদের সবার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করে দেখা উচিত। আমলাতন্ত্রের অবস্থা কি এর চেয়ে উত্তম? সামান্য একটি খসড়া তৈরিতে তাদের লাগে কয়েকদিন। একজন আরেকজনের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। সেকশন অফিসারের নোটই মূল। এ কারণে পাঁচ স্তর বিশিষ্ট পিরামিড অপ্রয়োজনীয়। তিন স্তরই যথেষ্ট। আর আমলাতন্ত্রে প্রতিটি প্রমোশন নতুন নিয়োগ নয়। আমার/আমাদের পুরনো ছাত্র যারা সচিব, এখনও পড়াশোনা করেন, দীন-দুনিয়ার খবর রাখেন, তারা বলেছেন, ক্রমেই অদক্ষ হয়ে যাচ্ছে আমলাতন্ত্র, যে কারণে সরকার বিপাকে পড়ছে ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। আমলাতন্ত্র বনাম শিক্ষকÑ এই বিতর্কে আমি ইচ্ছুক নই। কিন্তু বেতন কমিশন ও সচিব কমিটির দৃষ্টিভঙ্গি একপেশে ও উদ্ধত মনে হওয়ায় এত কথা লিখতে হলো। রাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠানই দরকার। কিন্তু কেউ কারও ওপরে নয়, বড়ও নয়Ñ এ দৃষ্টিভঙ্গিই যথাযথ। বেতন কমিশন বা সচিব কমিটির সুপারিশ নীতিনির্ধারকরা পুরোপুরি মানবেন কি মানবেন না তা জানি না। কিন্তু, এতটুকু বুঝি বা জানি, সচিব কমিটির ডিকটাট পুরোপুরি মানলে যে দ্বন্দ্ব ও ক্ষতের সৃষ্টি হবে তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যাঁর ওপর সবার গভীর আস্থা, তিনিও দূর করতে পারবেন না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের একটিই ক্ষোভ, শেখ হাসিনার মতো মানুষ আমলাতন্ত্রের ডিকটাটে চলবেন কেন? তাঁর মন্ত্রীরা চলেন, তাই বলে তিনিও? তা’হলে, ভরসা রাখব কার ওপর? বাÑ আমরা জানি, সরকার নির্ভরশীল সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ওপর। কিন্তু, তার বিপদে এরা তো পাশে থাকেনি, থেকেছি আমরা। তা’হলে? বাÑ আমাদের পেটে লাথি মারুন ঠিক আছে। কিন্তু অপমান করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। আমি বিষয়টি অন্যভাবে দেখি। সারা জীবনে আমি যা করি অন্তিমে তার মূল্যায়ন করে সমাজ ও সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যা অর্জন তা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাই অর্জন এনে দিয়েছেন, অন্য কেউ নয়। সেই শুরুতে সত্যেন বোস, জ্ঞান ঘোষের মতো বিজ্ঞানীরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্্, মোহিতলাল মজুমদার বা জসীমউদ্দীনের মতো কবিরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতো ঐতিহাসিক ছিলেন শিক্ষক ও উপাচার্য। বুদ্ধদেব বসুর মতো কবি, অমলেন্দু বসুর মতো প্রাবন্ধিক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পাকিস্তান ঔপনিবেশিক আমলে শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বা হাসান হাফিজুর রহমানের মতো জ্যোতিষ্করা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মুনীর চৌধুরী, কবীর চৌধুরী, কাজী মোতাহার হোসেন বা আবদুর রাজ্জাক ছিলেন শিক্ষক। অগ্নিযুগের লীলা রায়, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, রাষ্ট্র গঠনে নেতৃত্বদানকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ বা আরও পরে জিল্লুর রহমান এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনা সবাইই তো ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমাদের ভুলোমনা রাজনৈতিক প্রভুদের একটি বিষয় মনে আছে কিনা জানি না। না থাকারই কথা কারণ, এটি তাদের জন্য সুখপ্রদ নয়, এমনকি সেই সময় নির্যাতিত শেখ হাসিনাও অনেক বিষয় জানেন না। যখন তিন-উদ্দিনের অত্যাচার-নিপীড়নে বাংলাদেশ জর্জরিত, যখন সামরিক-বেসামরিক আমলারা রাজনীতিবিদদের বাপান্ত করছে, যখন মিডিয়ার শক্তিশালী অংশ অরাজনৈতিক শাসনের পক্ষে জনমত গড়ছে, যখন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বন্দী, যখন আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে জেলে পুরে অত্যাচার করা হচ্ছে, তখন আজকে যারা মন্ত্রী ও উপদেষ্টা তাদের একটি বড় অংশ নিষ্ক্রিয় ছিলেন বা বিদেশে ছিলেন। অনেকে সামান্য সময় শেখ হাসিনাকে লিপ সার্ভিস দিচ্ছিলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ছাত্র-শিক্ষকরা একমাত্র রুখে দাঁড়িয়েছিল গণতন্ত্র রক্ষায়। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিয়েছিল। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা মার খেয়ে অপরাজেয় বাংলার নিচে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। সংসদীয় কমিটি এ কারণে যাদের শাস্তি ও যাদের সহায়তা করতে সুপারিশ করেছিল বর্তমান সরকার সামরিক আমলাতন্ত্রের ভয়ে সেসব সুপারিশ কার্যকর করেনি। যখন ইউনিফর্ম পরা শ্বাপদরা ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলে নিয়ে তুমুল অত্যাচার চালাচ্ছিল তখন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা বাংলাদেশ রক্ষায় নেমে এসেছিলেন। এরপর এসেছিলেন রাজনীতিবিদরা। যারা অত্যাচারিত হয়েছিলেন তারা কোন কিছু চাননি। যারা অত্যাচার করেছেন তারাই পেয়েছেন। তাতে কারও ক্ষোভ নেই। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ দেয়, নেয় না। রাজনীতিবিদ ও আমলারা নেয়, দেয় না। পারতপক্ষে বাধ্য না হলে। বার বার অপমানিত হলে দ্রোহের সে ঐতিহ্য আর বহন করবে কিনা বিশ্ববিদ্যালয় সন্দেহ। বার বার অপমানিত ও উপেক্ষিত হওয়ার পর একটি কথাই বলব, অন্তিমে জয় আমাদেরই। খালেদা যখন নিজামীদের ক্ষমতায় নিলেন তখন অনেকে ক্ষোভে-দুঃখে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। লিখেছিলাম তখন, একজন মুক্তিযোদ্ধা গরিবের সন্তান সব সময় মাথা উঁচু করে বলতে পারবে আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কোটিপতি রাজাকারের সন্তান কখনও মাথা উঁচু করে বলতে পারবে না আমি রাজাকারের সন্তান। আজ যারা আমলা হিসেবে সুবিধা নিয়ে অন্যদের অপমান করছেন, তাদের সন্তানরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে গর্বিত হয়ে বলবে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার বাবার পদমর্যাদা তখন তার কাছে মুখ্য নয় এবং পরবর্তী জীবনে সে যে পেশায়ই থাকুক, তার বড় পাসপোর্ট হয়, সে ঢাকা [বা অন্য কোন] বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সমাজ এ সম্মান সব সময় দিয়ে এসেছে। এখনও দেয়। কারণ, বাংলার কৃষকের রক্তে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যে দ্রোহ বহমান তা বহন করছে উত্তরসূরি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রতিভূ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের পর আমলাতন্ত্র ও তাদের সহযোগী কুলাঙ্গার রাজনীতিবিদরা কি বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হনন করেননি? কিন্তু তাতে তাঁর কী এসে গেছে? তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছেন। অভিযোগকারীরা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হচ্ছে। আমরা তাঁর উত্তরসূরি, সেই দ্রোহে আচ্ছন্ন ছিলাম দেখে সপ্তম বেতন স্কেল অর্জন করতে পেরেছিলাম। আমরা আজ চলে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বদলেছে, শিক্ষক-ছাত্ররা বদলেছেন। তারা কী করবেন তা জানি না। কেননা তাদের আমার বেশি পদ-মনস্ক মনে হয়েছে। হয়ত এটি এক বৃদ্ধের ভুল। কিন্তু, অভিজ্ঞতা বলে, অষ্টম পে-স্কেল মেনে নিলে নবীন শিক্ষকদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে আইয়ুব আমলের মতো। সবশেষে বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনও কাপুরুষ সৃষ্টি করেনি। নবীনদের বলব, যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বিনষ্ট না হয়, যেন তারা কাপুরুষ না হোন, কাপুরুষ তৈরি না করেন।
×