ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিবাসন প্রত্যাশীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩১ আগস্ট ২০১৫

অভিবাসন প্রত্যাশীরা

অভিবাসন প্রত্যাশীরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিবাসনের জন্য তারা বেছে নিতে শুরু করেছেন বিপদসঙ্কুল যাত্রা। বিশ্বের অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিছিলে বাংলাদেশীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে নৌপথে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় অবৈধ অভিবাসনকালে বহু মানুষের মরণাপন্ন বিপদের কথা বিশ্ববাসী জেনেছিল। এবার লিবিয়া থেকে ইউরোপে ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনকালে সে দেশটির উপকূলে নৌডুবির ঘটনা ঘটেছে। তাতে নিহত কমপক্ষে ২০০ ব্যক্তির ভেতর বাংলাদেশীও রয়েছেন। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পৃথিবী নামক গ্রহে মূলত ক্ষুণিœবৃত্তির জন্যই নানা জাতি ও নানা দেশের মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে অচেনা লোকালয়ে। নিজ দেশে থেকে ভিন দেশে অভিবাসন এবং ভিন্ন একটি দেশ থেকে অপর কোন দেশে অভিবাসনের ভেতর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বটে। স্বদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পেরে কিংবা উন্নততর কর্মসন্ধানে মানুষ বিদেশে যায়। কিন্তু লিবিয়া থেকে বাংলাদেশীসহ অন্য অভিবাসীদের ইউরোপযাত্রার তাগিদের পেছনে রুটি-রুজি ছাড়াও ভিন্ন কারণ বিদ্যমান। লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং অন্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে পড়ে বাংলাদেশসহ সিরিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাগরিক ইউরোপে অভিবাসনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বৈধ ও নিরাপদ অভিবাসনে ব্যর্থ মানুষ এক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হচ্ছেন না। ফলে ওই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিজ বাসভূম ছেড়ে পরবাসী কে হতে চায়! এর আগে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, আশ্রয়ের সন্ধানে সাগরে ভাসমান বিপদাপন্ন মানুষের প্রতি বিশ্বমানবতা জাগরূক হয়েছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া প্রথমদিকে সাগরে মৃত্যুমুখী মানুষগুলোর দিকে ফিরে না তাকালেও পরে সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় এক বছরের জন্য এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। বিলম্বে হলেও প্রত্যাশিত মানবিক সিদ্ধান্তে অসহায় মানুষগুলোর জীবন রক্ষা পাবে, এটাই স্বস্তির কথা। কয়েক মাস আগে ভূমধ্যসাগরে ভাসমান লাখ লাখ মানুষের ইউরোপ অভিযাত্রার সংবাদ আমাদের বিষণœ করে তুলেছিল। তার পরই ঘটলো সম্প্রতি লিবিয়া উপকূলের মর্মান্তিক সংবাদটি। গত কয়েক মাসের মানবিক অভিযানে উদ্ধারকৃত বাস্তুচ্যুত এবং বাস্তুত্যাগীদের সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ। নিপীড়ন, দারিদ্র্য ও সংঘর্ষের ফলে মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আশ্রয়ের খোঁজে নিজের জীবনকে ঝুঁকির ভেতর ফেলছে তারা এবং তা বাঁচার বিকল্প পথ নেই বলেই এক্ষেত্রে ট্র্যাজেডি হলো জীবন বাঁচাতে গিয়ে মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অপমৃত্যুর শিকার হওয়া। তাই মানব পাচারকারী চক্রকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। মরণাপন্ন অভিবাসীযাত্রার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন না থাকলেও উন্নত রাষ্ট্রসমূহ মানবজীবন রক্ষার ব্যাপারে অনেক সময়ই অনুসরণীয় দৃষ্টান্তস্থাপন করে থাকে। যেমন ইতোপূর্বে ইউরোপীয় যুদ্ধজাহাজ ও কোস্টগার্ড নৌযান ভূমধ্যসাগর থেকে ২ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করেছিল। আগামীতে অভিবাসীযাত্রায় শামিল হবেন হয়তো আরও বহু মানুষÑ এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। তাই অভিবাসীদের বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টিপাতের সময় এসেছে বলেই ধারণা হয়। তবে সবার আগে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার কথা ভাবতে হবে। জাতিগত বৈরিতা ও সংঘাত মানব সভ্যতার জন্য কখনও কল্যাণ বয়ে আনেনি, আনবেও না। বিশ্বনেতৃবৃন্দের এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের সময় যে বয়ে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
×