ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্লগার হত্যার দ্রুত বিচার চান বিদেশী কূটনীতিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩১ আগস্ট ২০১৫

ব্লগার হত্যার দ্রুত বিচার চান বিদেশী কূটনীতিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্লগার হত্যা বন্ধ ও জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সরকারের ওপর বিদেশী কূটনীতিকদের চাপ বাড়ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি বার বার তাগাদা দিয়ে চলেছেন এসব কূটনীতিকরা। ব্লগার হত্যার ঘটনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত বলেও মনে করছেন তারা। কূটনীতিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও ব্লগার হত্যার ঘটনায় সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে। বিদেশী কূটনীতিকরা বলছেন, ব্লগার-লেখকদের হত্যা করার অর্থ হলো মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত। ব্লগারদের হত্যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনভাবে হত্যা মতপ্রকাশ ও মানবাধিকারের প্রতি চরম আঘাত। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একের পর এক ব্লগার নিহতের ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা। এছাড়া ব্লগার হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ফ্রিডম হাউস, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন ও কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইফেক্স ও বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট। জাতিসংঘের বাক-স্বাধীনতা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বিষয়ক বিশেষ দূত ডেভিড ক্যায়ে ও ক্রিস্টফ হেইন্স বলেছেন, বাংলাদেশে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর হত্যার ঘটনার ইঙ্গিত দেশটিতে বাক-স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হুমকি বিদ্যমান। সকল ব্লগার হত্যাকা-ের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করাটা খুবই জরুরী। জাতিসংঘের এ দুই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশের বাক-স্বাধীনতার ওপর এমন জঘন্য আঘাতের প্রতি নিন্দা জানানো অব্যাহত রাখলেই হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অধিকতর জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও এ ধরনের সহিংসতা প্রতিহত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স ব্লগার হত্যাকা-ের পূর্ণ তদন্ত দাবি করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। হত্যাকা-গুলোর তদন্তও দ্রুত শেষ করে এ সব ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জোট জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এ ধরনের আক্রমণ বাংলাদেশের সমাজে অসহনশীলতার ধারাবাহিকতারই অংশ। এসব বন্ধে জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ব্লগারদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে লেখক ও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক হামলা ঘটছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকল বাংলাদেশী কোন ধরনের সহিংসতা ও ভয়ভীতি ছাড়াই তাদের শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন, যা সর্বজনীন মানবাধিকারে সংরক্ষিত। যুক্তরাজ্যের ফরেন ও কমনওয়েলথ অফিস বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হুগো সোয়ার ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় হত্যার ঘটনায় বলেছেন, বাংলাদেশের ব্লগার নীলাদ্রি হত্যার খবর শুনে আমি স্তব্ধ। তিনি নীলাদ্রি হত্যার ঘটনা জরুরীভিত্তিতে তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ডেভিড সোয়ানে ঢাকা সফরকালে ব্লগার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্লগার হত্যাকা-ের নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ফ্রান্স সরকার এসব হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচারও চেয়েছে। শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছে তারা। ব্লগার নিহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেছেন, একের পর এক ব্লগার হত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি সরকারের প্রতি ব্লগার হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ব্লগার হত্যার ঘটনায় খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনেস্কো। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর মহাপরিচালক আইরিনা বোকোভা বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অটুট রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে কিংবা নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিপন্ন করা কখনই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আইরিনা বলেছেন, মুক্তচিন্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে ব্লগার হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত গুরুত্বের সঙ্গে এ হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার করা। এদিকে ব্লগার হত্যার ঘটনায় কূটনীতিকদের পাশাপাশি সরব হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংস্থা ফ্রিডম হাউস বলেছে, বাংলাদেশে এভাবে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি আনতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রিডম হাউস। এছাড়া কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইফেক্স ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশের ব্লগারদের হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। আইফেক্স বলেছে, বাংলাদেশে একের পর এক ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন। ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান ও অনন্ত বিজয়ের খুনীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ শুক্রবার ব্লগার শাম্মী হক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এর আগে গত ৭ আগস্ট ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে তার রাজধানীর বাসায় খুন করে দুর্বৃত্তরা। ১২ মে সিলেটে বাসার সামনে খুন হন ব্লগার ও লেখক অনন্ত বিজয় দাশ। তিনি মুক্তমনা ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতেন। ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়া পথে দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান। এছাড়া ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর খুন হন ব্লগার-লেখক অভিজিত রায়। এসময় মারত্মক আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। তার আগে নিহত হন ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার।
×