ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হামজা ব্রিগেডে অর্থায়ন প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফারজানার জবানবন্দী নিয়ে সন্দেহ

ওসমান আমিন নামে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩১ আগস্ট ২০১৫

ওসমান আমিন নামে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জঙ্গী সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের জন্য অর্থ যোগানদাতা ওসমান আমিনের হদিস পাচ্ছে না তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। এ জঙ্গী সংগঠনকে অর্থ সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত গ্রেফতারকৃত সুপ্রীমকোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, এ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও এ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন প্রদত্ত জবানবন্দী পর্যালোচনায় ওসমান আমিনের নাম আসায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে তার কোন হদিস মেলানো যাচ্ছে না। র‌্যাব সূত্রে জানানো হয়, ওসমান আমিন নামে আদৌ কেউ আছে কিনা তা নিয়ে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা সানজিদা এন্টারপ্রাইজ নামে যে প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়েছেন র‌্যাবের তদন্তে এর কোন অস্তিত্ব মেলেনি। মিলেছে শুধু এ এন্টারপ্রাইজের নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স। গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রামের আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দীতে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ওসমান আমিন নামের এক ব্যক্তির তথ্য দেন। তার এ জবানবন্দীর পরই র‌্যাব প্রথমবারের মতো ওসমান আমিনের নাম জানতে পারে। এর আগ পর্যন্ত জঙ্গী সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে ওসমান আমিন নামের কোন সংশ্লিষ্টতার তথ্য র‌্যাবের কাছে ছিল না। র‌্যাব জানায়, ওসমান আমিনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবক’টি স্থানে তদন্ত চালানো হয়েছে। কিন্তু এ নামের কারও সন্ধান মেলেনি। ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা তার জবানবন্দীতে জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ৩০ মে ঢাকায় তার চেম্বারে দুই ব্যক্তি দেখা করেন। তারা চট্টগ্রাম থেকে গেছেন বলে জানান। এদের একজন ওসমান আমিন এবং আরেকজনের নাম মাসুম বলে জবানবন্দীতে তিনি জানিয়েছেন। ওসমান আমিনের বাসা খুলশীতে এবং তার আমদানি-রফতানি ও শিপিং ব্যবসা আছে বলে ফারজানা জানিয়েছেন। র‌্যাব জানায়, চট্টগ্রামের খুলশীর বাসা শিপিং ব্যবসাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ নামের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া শাকিলা তার জবানবন্দীতে এ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে খুবই সংক্ষিপ্ত তথ্য দিয়েছেন। র‌্যাবের ধারণা, হয়তবা নিজের পরিচয় গোপন করে ওসমান আমিন নাম দিয়ে ব্যারিস্টার শাকিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল অথবা শাকিলা নিজেই ওসমান আমিনের পরিচয় গোপন রেখেছেন অথবা বুঝে শুনে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। জবানবন্দীতে শাকিলা জানিয়েছেন, ওসমান আমিন তাকে হেফাজত নেতা মুফতি হারুন ইজাহারের মামলা, লালখান বাজার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ মামলাসহ হেফাজতে ইসলামীর সাড়ে ৩শ’ মামলা পরিচালনার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রদান করেন। মামলার প্রয়োজনে তার সঙ্গে হারুন ইজাহারের লোকজন কথা বলবেন বলেও শাকিলাকে জানিয়েছিল ওসমান আমিন। উল্লেখ্য, মুফতি হারুন ইজাহার হেফাজতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির ও লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজাহার ইজাহারুল ইসলামের পুত্র। জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে মুফতি ইজাহার ও মুফতি হারুন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। র‌্যাবের তদন্তে শাকিলার জবানবন্দীর সূত্র ধরে অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোন তথ্য উদঘাটিত হয়নি। জবানবন্দীতে শাকিলা আরও জানিয়েছেন, ওসমান আমিন চার ধাপে তাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু মামলা পরিচালনায় বিরোধ সৃষ্টি হলে শাকিলা প্রদত্ত টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা রেখে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ফেরত দেন। শাকিলা ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওসমান আমিনের সানজিদা এন্টারপ্রাইজের এ্যাকাউন্টে উক্ত টাকা ফেরত দিয়েছেন তার দুই সহকারীর মাধ্যমে। উল্লেখ্য, জঙ্গী সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থ প্রদানের অভিযোগে ঢাকার ধানম-ি থেকে এ তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারের পর এ তিন আইনজীবী বাঁশখালি ও চট্টগ্রাম আদালতে দুদফায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
×