ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার আহ্বান

ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী ॥ আগাছা উপড়ে ফেল

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী ॥ আগাছা উপড়ে ফেল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগাছামুক্ত করে ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের কিছু দালাল, চাটুকার ও তোষামদকারী রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই এখানে গাছের সঙ্গে কিছু পরগাছাও জন্মায়। যে জমিতে আগাছা আছে সে জমিতে ফসল হয় না। আগাছা তুলে ফেলতে হয়। পরাজিত শত্রুদের এসব দালাল ও চাটুকার আসলে আগাছা। এসব আগাছা উপড়ে ফেলেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রলীগকেও বলব, চলার পথে যদি কিছু আগাছা থাকে তবে তা উপড়ে ফেলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলো। আগামীতে কেউ যাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দু’ধরনের রাজনীতি আছে। একটি রাজনীতি হচ্ছে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণ করা। আর অন্য রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতায় থেকে অর্থ-সম্পদ বানিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করা, জনগণের লুণ্ঠিত অর্থ-সম্পদ দিয়ে নিজেদের মর্যাদা ক্রয় করা। এ রাজনীতির কোন মৌলিকতা ও স্থায়িত্ব থাকে না। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমেই কল্যাণের রাজনীতিই স্থায়ী হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই রাজনীতিই করে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের পরিচালনায় আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজী ভাষায় অনুবাদকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের ঘটনা শুধুমাত্র একটি পরিবারকে হত্যার জন্য ছিল না। তা হলে শুধু রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে তারা হত্যা করত। আসলে এই হত্যাকা-টি ছিল দেশের স্বাধীনতা ও বাঙালী জাতির বিজয় নস্যাত করার জন্য। বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করলেও বিশ্বসভায় স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে না পারে সেজন্যই ১৫ আগস্ট এবং ৩ নবেম্বরের হত্যাকা- ঘটিয়েছিল পরাজিত শত্রু ও তাদের এদেশীয় দোসররা। বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাউকে তারা বেঁচে রাখতে চায়নি। কিন্তু বিদেশে থাকায় আমরা দু’বোন প্রাণে বেঁচে গেছি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে মিথ্যা জন্মদিন পালন করায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এরা এ দেশের স্বাধীনতায় কখনও বিশ্বাস করেনি, এখনও করে না। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর জাতির বিজয় তারা মেনে নিতে পারেনি। কারণ তাঁরা (খালেদা জিয়া) একাত্তরে হানাদারদের সঙ্গেই ছিল। সেই হানাদারদের পরাজয়ে তাদের যত ব্যথা। তাই হানাদার ও পরাজিত শত্রুদের খুশি করতেই ১৫ আগস্ট জন্মদিন না হলেও ওইদিন উনি (খালেদা জিয়া) মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন। কি বিকৃত মানসিকতার মানুষ হলে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। জিয়াউর রহমানেরও সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। কিন্তু জিয়াউর রহমান আমাকে ৬টি বছর দেশে ফিরতে দেননি। আমি এলে যদি আওয়ামী লীগ আবার জেগে ওঠে সেজন্য দেশে ফিরতে শুধু বাধাই নয়, আওয়ামী লীগের প্রায় সকল নেতাকে হয় জেলে, হত্যা-গুম ও নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছিলেন এই জিয়া। তিনি বলেন, শুধু সংবিধান লঙ্ঘনই নয়, আর্মি রুলস এ্যান্ড রেগুলেশন ভঙ্গ করে জিয়া নিজেকে একাধারে সামরিক বাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল বেইমানি ও মোনাফেকি করে করে জিয়াউর রহমান একে একে মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা ধ্বংস করে দেয়। বঙ্গবন্ধু যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার ছিল না, জিয়াউর রহমান সেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করে রাজনীতি ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেন। স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা বানিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি বলেন, ৭৫-এর পর ২১টি বছর বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ নিতে পারেনি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে পারেনি। ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদেরই ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীদের দোসর ও পরাজিত শক্তির দোসররা অপপ্রচার ও মিথ্যা কথা এমনভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিল যে, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেই যেন বঙ্গবন্ধু মহাঅপরাধ করেছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও খুনীদের দোসররাই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতেও নানা ষড়যন্ত্র চলেছে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের দিনে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল সদস্য মাথা উঁচু করেই দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। ঘাতকদের কাছে মাথানত কিংবা প্রাণভিক্ষা কেউ করেননি। আমিও একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করি না। যতদিন বেঁচে আছি মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাব। মৃত্যুর পর অন্ততঃ বঙ্গবন্ধুকে বলতে পারব, যে দেশের মানুষকে তিনি এত ভালবাসতেন, পরিবারসহ নিজের জীবন দিয়ে গেছেন, সেই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কিছু করেছি। বাংলাদেশের মানুষের ন্যূনতম চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বসভায় উন্নত-সমৃদ্ধশালী হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- সেই লক্ষ্য নিয়েই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদর্শহীন রাজনীতি দিয়ে কখনও দেশের মানুষের কল্যাণ করা যায় না। বঙ্গবন্ধু বলতেন, মহৎ কিছু অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও ত্যাগের মনোভাব নিয়ে আদর্শবান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের অতীতের গৌরবজনক অধ্যায়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামে শহীদের তালিকা দেখলে বোঝা যাবে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগই করেছে এই ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকাও পালন করেছে ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি সংগঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দেশের মানুষের জন্য মহান আত্মত্যাগ করে গেছেন। তাই কী পেলাম সেটি বড় কথা নয়, দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটিই বড় কথা। বঙ্গবন্ধুর সেই ত্যাগের মহিমা ও আদর্শে দীক্ষিত হয়ে নিজেদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
×