ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমি তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছি- জাফর ইকবাল

শাবিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা র‌্যালি, মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শাবিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা র‌্যালি, মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণ, র‌্যালি ও সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছেন শিক্ষকরা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতিও পালন করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ। অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সার্বিক ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় কালোব্যাজ ধারণ করে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে র‌্যালি শুরু করেন শিক্ষকরা। র‌্যালিটি প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক মস্তাবুর রহমান, অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দিপু, সহকারী প্রফেসর এমদাদুল হক প্রভাষক মোস্তফা কামাল মাসুদ, আল আমিন রাব্বী, সৌরভ রায় প্রমুখ। সমাবেশে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করতে পারে এমন দৃশ্য আমাকে নিজ চোখে দেখতে হয়েছে। তিনি বলেন, শরীরের আঘাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু মানসিক আঘাত কোন দিন ভাল হয় না। ছাত্ররা শিক্ষকদের গায়ে আঘাত করেছে আর সেই দৃশ্য আমাকে বসে বসে দেখতে হয়েছে- এটা কখনও ভুলতে পারব না আমি। তিনি বলেন, আপনাদের যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি থাকবো না, চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই আপনারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। এর আগেও এখান থেকে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা সেটা করেছে। এখন চলে গেলেও সান্ত¡না থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবিদারদের সময়েই চলে গেলাম। সমাবেশে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, এর আগে আপনাদের কর্মসূচীতে আমি কখনও আসিনি। কারণ সব সময় বলা হয়, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। রাজনীতি করছি। তাই আপনাদের দাবির প্রতি সমর্থন থাকলেও আমি আসতাম না। কিন্তু যখন শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হলো তখন আর বসে থাকতে পারলাম না। জাফর ইকবাল বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে সুবর্ণ সময় এখানে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে। তাই যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়টা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখন খুব কষ্ট লাগে। এখন বুড়ো হয়ে গেছি, আর সহ্য করতে পারি না। উপাচার্যবিরোধী চলমান আন্দোলন নিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, এটা বোকাদের আন্দোলন। এর মতো বোকাদের সমাবেশ আর নাই। ক্লাস, পরীক্ষা সবকিছু ঠিকঠাক মতো নেয়া হচ্ছে আবার আন্দোলনও হচ্ছে এদেশে এভাবে কখনও দাবি আদায় হয় না। এমন অহিংস আন্দোলন কর্মসূচী দেখে মহাত্মা গান্ধিও লজ্জ্বা পেতেন। অথচ এই আন্দোলন কর্মসূচীর বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ বছর শিক্ষাদানের প্রতিদান এভাবে পাবো সেটা কখনও ভাবিনি। শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত পরিপত্রে ‘পুলিশি একশন’ এর কথা বললেও শিক্ষকদের ওপর হামলা হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যে ভিসি ঘণ্টায় ঘণ্টায় কথা পাল্টান তিনি কিভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে পারেন? যে শিক্ষকরা তিলে তিলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলেছেন তাদের গায়ে হাত তোলার কি বিচার হতে পারে আমার জানা নেই। আমি কারও কাছে বিচার চাই না। কোন বিচারের দাবিও করব না। আন্দোলনরত শিক্ষক নেতা অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচাইতে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল ছাত্রলীগ। যার নেতৃত্বে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া। উপাচার্যের লেলিয়ে দেয়া পেটোয়া বাহিনীর হাতে শিক্ষক সমাজ লাঞ্ছিত হয়েছে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। এদিকে হামলার প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি ও বিচারের দাবি জানান। তদন্ত কমিটি ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার সংঘটিত ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন শাবি ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া। তিনি জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফিজিক্যাল সায়েন্সের ডিন প্রফেসর ড. সাবিনা ইয়াসমিনকে। এছাড়াও এই কমিটিতে আরও আছেন শাবি প্রক্টর বনবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা পারভিন । শিক্ষক ফোরামের নিন্দা ॥ এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক ফোরামের’ শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন তারা। সোমবার দুপুর ২টার দিকে ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া তার কার্যালয়ে প্রবেশের সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তারা। বিগত কয়েক বছরের বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনার বিচারহীনতা সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা এ ঘটনা। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মনে করেন ফোরামের শিক্ষকেরা। উল্লেখ্য, গত রবিবার উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’র শিক্ষকরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করতে গেলে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়।
×