ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানি ঈদে গবাদি পশুর কোন সঙ্কট হবে না

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কোরবানি ঈদে গবাদি পশুর কোন সঙ্কট হবে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন কোরবানি ঈদে গবাদিপশুর কোন সঙ্কট হবে না বলে ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পেঁয়াজসহ অন্যসব নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। এছাড়া নিত্যপণ্যের মূল্য কিছুতে যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। আর বরাবরের মতো এবারও ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিলেন কোরবানির সময় কোন পণ্যের দাম বাড়বে না। পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হবে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের টিসিবি ভবনের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এর আগে কোরবানি সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দরদাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিকারক, পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। কোরবানির সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে বৈঠকে মন্ত্রিকে আশ্বস্ত করেন ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসায়ীরা কখনই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সম্প্রতি একদিনেই পেঁয়াজের তিনদফা দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা। বর্তমান প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তাই প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গার অভিযোগও উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ঈদের জন্য দেশে ৩০ লাখ গরু-মহিষ, ৬৯ লাখ ছাগল রয়েছে। তাই আগামী ঈদ-উল-আযহায় কোরবানির পশুর কোন সঙ্কট থাকবে না বলে ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। গরু-মহিষ ও ছাগলের এ পরিসংখ্যান তিনি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সকালে মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, দেশের মানুষের জন্য পণ্যের যে মূল্য স্বাভাবিক, সেটি যেন থাকে। দেশের মানুষ যেন ভালভাবে ঈদ করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোরবানি ঈদে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সঙ্কট হবে না। সরকার দেশী খামারে গবাাদপশুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশেই এখন প্রচুর কোরবানির পশু উৎপাদন হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশ চাহিদা পূরণ করে এ সকল পশু বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে দেশের অভ্যন্তরে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেঁয়াজ আমদানির জন্য গৃহীত ঋণের সুদ কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মজুদের বিরুদ্ধে সরকার বাজার মনিটরিং জোড়দার করেছে। প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ফলে দাম ইতোমধ্যে অনেক কমেছে, কয়েকদিনের মধ্যে মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। বাজারে এখন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পেঁয়াজ রয়েছে। ভবিষ্যতে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। ওই সভায় টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম ইকবাল, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুর রহমান, টিকে গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কামাল, মেঘনা গ্রুপের এমডি মোস্তফা কামাল, কামদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার নেতৃবৃন্দ, জাতীয় গোয়েন্দ সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় গবাদিপশু, পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, তেল, চিনিসহ ঈদকেন্দ্রিক সব ধরনের নিত্যপণ্য এবং নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর মূল্য যেন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণহীন না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে পশু সঙ্কটের খবর পুরোপুরি সত্য নয় দাবি করে আমদানিকারকরা তাঁকে জানান, যেটুকু সঙ্কট রয়েছে বলে প্রচারিত হয়েছে, সেসব কাটাতে সামান্য কিছু সময় লাগবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ ভালভাবেই ঈদ করতে পারবে। কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক পণ্যের সঙ্কট হবে না এবং পণ্যের মজুদ ঠিক আছে বলেও বৈঠকে উপস্থিত সব ব্যবসায়ী বাণিজ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। পেঁয়াজের মূল্য আরও কমে আসবে বলে জানান তারা। এ ক্ষেত্রে ভারতের সিন্ডিকেটকে দায়ী করে তারা বলেন, ভারতের একটি সিন্ডিকেট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি ভাঙ্গা গেলে আমাদের বাজার আরও স্বাভাবিক থাকত। এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ পেঁয়াজ চাষীদের জন্য প্রণোদনার সুপারিশ করেন। আর চিনির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চিনির মজুদ রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। পাইপলাইনে যা রয়েছে, সব মিলিয়ে চিনির বাজার থাকবে স্থিতিশীল। রসুনের সঙ্কটের আশঙ্কাও তারা করছেন না। তারা জানান, দেশী রসুন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তাই বাইরের রসুন পাওয়া না গেলেও কোন সঙ্কট হবে না। এছাড়া কাঁচা মরিচের দাম কয়েকদিনের মধ্যে কমে আসবে বলেও জানান ব্যবসায়ী নেতারা। সঙ্কট কাটাতে কাঁচা মরিচের আমদানি শুল্ক তুলে নেয়ার প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এতে বর্তমান সঙ্কট কাটানো গেলেও ভবিষ্যতে দেশের চাষীরা সমস্যায় পড়বেন। কারণ এ ব্যবস্থাটি রাখাই হয়েছে দেশী চাষীদের বাঁচাতে। এ আলোচনার ভিত্তিতে মন্ত্রী বিষয়গুলো বিবেচনাধীন রাখেন। এখনই কোন সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মন্ত্রীকে জানান, পশু পালনে ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগে ভবিষ্যতে পশু সঙ্কট আরও কমে আসবে। পশুর দাম বাড়ার খবর কম প্রচার করতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে দাম আরও বেড়ে যায়।
×