ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মার ভাঙ্গনে চোখে অন্ধকার দেখছেন হেনা বেগমরা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পদ্মার ভাঙ্গনে চোখে অন্ধকার দেখছেন হেনা বেগমরা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, খড়িয়া থেকে ফিরে ॥ তবে কি রাক্ষুসী পদ্মা আমাকে ছাড়বে না? এই প্রশ্ন এখন লৌহজংয়ের খড়িয়া গ্রামের হেনা বেগমের। ৪০ বছরের সংগ্রামী এই নারী দু’শিশু ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে দিশেহারা। বাড়ির পাশেই রাক্ষুসী পদ্মা। মাত্র ২০ গজ দূর হতে পদ্মার রাহুল গ্রাস তার বাড়িটিকে কেড়ে নিতে এগিয়ে আসছে। পদ্মার পাড়ে বসে এখন অনেক ভাবনাই তাকে বিপাকে ফেলেছে। ভিটেমাটি বলতে ওই বাড়িই শেষ সম্বল। এইটুকু কেড়ে নিলে কোথায় যাবেন তিনি। মাথা গোঁজার মতো কোন ঠাঁইতো নেই। আর ঘর ভেঙ্গে কোথায় রাখবেন সেই স্থানটিও খুঁজে পাচ্ছেন না। আর ঘর ভেঙ্গে নেয়ার টাকাও নেই। তার পড়শীরা ঘর ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই নারীর চোখের জল দেখলে কেউই তা সংবরণ করতে পারবে না। এখন পদ্মার ভাঙনের হুমকিতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এখানকার বহু পরিবারের। বৃষ্টির কারণে কষ্ট আরও বেড়েছে। ভাঙ্গনের মুখে আশি বছরের সাহাবুদ্দিনের কষ্ট একই রকম। তার বাড়িটি একবারে থাবার মুখে। এদিকে পদ্মার গ্রাসে বাড়ি হারিয়ে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন করিম শেখের ছেলে শাহীন (৪৩)। ১৯ বন্দরের ঘরসহ ইতোমধ্যে তাঁর দুটি ঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। তিন ভাই আর স্ত্রী সন্ত্রানদের নিয়ে তিনি এখন আশ্রয় নিয়েছেন পাশের রাস্তার ওপর। মৃত ছবদর সিকদারের ছেলে ছামাদ সিকদারের বিশাল গরুর খামারসহ বাড়ি ঘর ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে রাক্ষুসী পদ্মা। তিনি এখন আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী হলদিয়া গ্রামে। ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন। গরুর খামার থেকে প্রতিদিন প্রাপ্ত দুধ বিক্রি করেই তিনি তার ১৩ সদস্যের পরিবারের সংসার চালাতেন। এখন তিনি গরুগুলো নিয়ে ভাড়া বাড়িতে উঠলেও গরুকে ঠিক মত খাবার দিতে না পারায় প্রয়োজনীয় দুধও সংগ্রহ করতে পারছেনা। এমনি অবস্থা বাদল শেখ আর ওবায়দুর রহমানের মতো বহু পরিবারের। গত এক সপ্তাহের পদ্মার ভাঙ্গনে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামের শত শত পরিবার এখন নিদ্রাহীন জীবনযাপন করছে। গৃহহারা হয়েছে অনেকেই। সরজমিনে খড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার বৃষ্টির কারণে ভাঙ্গন কবলিত মানুষের কষ্ট বেড়েছে। বেড়েছে ভাঙ্গনের তীব্রতা। একর পর এক জনপদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পিস ঢালা রাস্তা, গাছপালা বাড়িঘর সবই গিলছে পদ্মাভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলোর করুন দশা।
×