ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

মধ্য-আয়ে বাংলাদেশ জয়তু শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মধ্য-আয়ে বাংলাদেশ জয়তু শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। তাঁর নের্তৃত্বে পরিচালিত এ সরকার কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও অবকাঠামো খাতে যে উন্নতি অর্জন করেছে তা আগে ঘটেনি। গতকালের পর আজ পড়ুন দ্বিতীয় কিস্তি... কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সেচ সম্প্রসারণকরণ এবং বন্যা বা অতি প্লাবন রোধ করা জরুরী প্রয়োজন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এ প্রয়োজন মেটানোর জন্য ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা ব্যতীত যে ৫৩টি সাধারণ নদী বিদ্যমান তাদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবাহিত পানির ঈপ্সিত বিভাজন প্রয়োজন হবে। এই লক্ষ্যে ভারত এবং নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ওপর যথার্থ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। মেকং নদী অববাহিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে যে বহুজাতিক কার্যক্রম নেয়া হয়েছে তা অনুসরণ করে এসব নদীর সার্বিক অববাহিকাভিত্তিক উন্নয়ন বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্যই অধিকতর মঙ্গলজনক হবে। এ প্রেক্ষিতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিভাজন নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়ায় চীনকে সংশ্লিষ্টকরণ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের উৎস প্রবাহ সাংপোতে চীন বাঁধ নির্মাণ করেছে বলে জানা গেছে। ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এই নদী দিয়ে প্রবহমান পানির গতি ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহার করতে চীনের সঙ্গে আলোচনায় জরুরী ভিত্তিতে প্রবৃত্ত হওয়া সঙ্গত হবে। ভারত, নেপাল ও চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্রুত ও ফলপ্রসূ আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষাকরণে সৃজনশীল সফলতার নিরিখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সাম্প্রতিককালে মৎস্য ও পশু পালন উৎপাদন তাৎপর্যমূলকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ৩.৬৯ শতাংশ মৎস্য খাত থেকে আসে। তেমনি রফতানি আয়ের ৬.৭২ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। যথাযথভাবে গবেষণালব্ধ উপকরণ উৎপাদক পর্যায়ে লভ্যকরণের ফলশ্রুতি হিসেবে এ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও উৎপাদন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অধিকতর ফলপ্রসূ গবেষণা ও রেণু উৎপাদন এবং মৎস্য প্রজননের চক্র রেণুু উৎপাদনের মৌসুমের আলোকে অধিকতর উৎপাদনশীলকরণ এবং মৎস্য চাষের বাণিজ্যিকীকরণে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সহায়তা বাড়ানো দরকার হবে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গৃহীত কার্যক্রম যে অধিকতর বিস্তৃত ও ব্যক্তি-উদ্যোগবান্ধব করার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া সঙ্গত হবে। সাম্প্রতিককালে সর্বস্তরের জনগণের সার্বিকভাবে আয় বাড়া এবং দারিদ্র্য মোচনের লক্ষ্যে হস্তান্তরধর্মী আয় বিতরণ বিস্তৃতকরণের কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারের বিস্তৃতি ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের এই বিস্তৃতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বিস্তৃত ও উর্ধমুখী করেছে। এই প্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যাতে সকল আর্থিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিস্তৃত হতে পারে তার দিকে অধিকতর সংবেদনশীল দৃষ্টি রাখতে হবে। বাজারের বিস্তৃতি না ঘটলে বাণিজ্যিকভাবে দেশের কৃষি ও শিল্প বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের উৎপাদন বাড়বে না। ইতোমধ্যে সৃষ্ট বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ বাজার অর্থনীতির উন্নয়নের যে অন্যতম প্রধান মাধ্যম তা স্বীকার করে এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজার বিস্তৃতকরণের নিয়ামক হিসেবে ব্যক্তি সম্পত্তির অধিকার এবং ঠিকানা সম্পর্কিত দায়দায়িত্বাদি প্রায় নিঃখরচায়, দ্রুত এবং দৃঢ়তার সঙ্গে রাষ্ট্রের আইন ও প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে বলবতকরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে সেচ সম্প্রসারণ, উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং শিল্প ও সেবা ক্ষেত্রে ঈপ্সিত প্রসারণ অব্যাহত রাখতে হলে বিদ্যুত উৎপাদন ন্যূনপক্ষে বার্ষিক শতকরা ১৪ ভাগ করে বাড়িয়ে যেতে হবে। সাম্প্রতিককালে শেখ হাসিনার সরকারের দৃঢ় ও সুষ্ঠু নীতি এবং কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা গত অর্থবছরের শেষে ১১২৬৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং এই উদ্দেশ্যে বন্দরের অবকাঠামো উন্নত করার সঙ্গে সঙ্গে দেশজ কয়লা ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং ভুটান, নেপাল ও ভারত থেকে সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যুত আমদানি করতে হবে। দেশে কয়লা আহরণ ও ব্যবহার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ অতীব প্রয়োজন। তেমনি বিদেশ থেকে আমদানীয় খনিজ তেলের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে যথা প্রয়োজন সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রসারিত করে ব্যবহারকারী পর্যায়ে বিদ্যুতের সরবরাহের স্থিতিশীলতা অর্জন করতে হবে। একই সময়ে ও সঙ্গে বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যয়ের বিভিন্নতা হিসাবে নিয়ে বিদ্যুতের মূল্য এলাকা ও ক্ষেত্র বিবেচনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। বিশেষত ব্যক্তি খাতে উৎপাদিত এবং জাতীয় গ্রিডে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের মূল্যের বিভিন্নতা সমন্বয় করে এ ক্ষেত্রে প্রদানীয় ভর্তুকির সমন্বয়করণ অতীব প্রয়োজনীয় কর্ম হিসেবে বিবেচনা করে সত্বর পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয় হবে। এই সময়ে আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হবে শিল্প খাতে ব্যক্তি-বিনিয়োগ। আমাদের অর্থনীতির প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ব্যক্তি-মালিকানাধীন কিংবা প্রত্যক্ষভাবে সরকারী কার্যক্রমের বাইরে। ২০১৪-১৫ সালে দেশে ব্যক্তি-বিনিয়োগ সার্বিক বিনিয়োগের ৭৬ শতাংশ হয়েছে। এই বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আইনী সমর্থন যেমন প্রয়োজন, তেমনি আর্থিক ব্যবস্থা থেকে যথাযথ সহায়তা প্রদান দরকার। শিল্প খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দ্রুত সেবা খাতের বিনিয়োগ থেকে বেশি হবে। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে (১) ব্যক্তি-সম্পত্তির দৃঢ়তার সঙ্গে রক্ষাকরণ, (২) ঠিকানা সম্পর্কিত দায়দায়িত্ব যথাসম্ভব নিঃখরচায়, দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে বলবতকরণ প্রয়োজন হবে। বলাবাহুল্য, এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা ব্যক্তি-বিনিয়োগকে সর্বাত্মক মাত্রায় উৎসাহিত হয়ত করছে না। আর্থিক ব্যবস্থা থেকে যথা প্রয়োজন ঋণ সহায়তা, সমমূলধনভিত্তিক সমর্থন ও ঝুঁকি মূলধনের (ঠবহঃঁৎব ঈধঢ়রঃধষ) সরবরাহ সৃষ্টি ও বাড়ানো এবং সার্বিকভাবে মূলধন বাজারের প্রসারণ শিল্প খাতে বিনিয়োগ প্রসারণের চালিকাশক্তি। এদিকে যতটুকু কর্মক্ষম হওয়া প্রয়োজন ততটুকু কর্মক্ষম আমরা এখনও হতে সক্ষম হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নীতিনির্ধারণমূলক ঘোষণা অনুসারে এ ক্ষেত্রে ও লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত এবং সূক্ষ্ম মাত্রায় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে তাঁর ঘোষিত নীতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দ্রুত গড়ে তুলে ব্যক্তি-উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে। একই সময়ে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ভিত্তিতে উৎপাদনের নিরিখে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করে শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা দূরে সরিয়ে দিতে হবে। চলবে... লেখক : সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ
×