ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একনেক বৈঠক

সায়েদাবাদে আরও এক পানি শোধনাগারসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সায়েদাবাদে আরও এক পানি শোধনাগারসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারসহ (ফেজ-৩) ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭ হাজার ২১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৩ হাজার ১১৭ কোটি ৭৬ লাখ, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৯৯৩ কোটি ৮৭ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান মন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আজম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান, হুমায়ুন খালিদ, আইএমইডি সচিব সহিদ উল্লাহ খন্দকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব কানিজ ফাতেমা। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ঢাকা মহানগরীর বর্তমান দেড় কোটি জনগণের ২ হাজার ২০০ এমএলডি পানির চাহিদার বিপরীতে ২ হাজার এমএলডি পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়তই যে হারে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ২০৩৫ সালে পানির চাহিদা হবে প্রায় ৫ হাজার ২৬৮ এমএলডি। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা মূলত ভূ-গর্ভস্থ পানির পানির উপর নির্ভরশীল। ভূ-গর্ভ হতে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর পানির স্তর ২-৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। যা শুধু পরিবেশের জন্যই হুমকি নয় বরং ভবিষ্যতে খাবার পানি সরবরাহের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এসব দিক বিবেচনায় এনে ঢাকা ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩) অনুমোদন দেয়া হলো। তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে দেশের সব জেলায় শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যেই টাঙ্গাইলে বিসিক শিল্প পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০১৭ সালের মধ্যে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ২৮০টি শিল্প প্লট প্রস্তুত করা হবে। অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হচ্ছে বিসিক শিল্প পার্ক, টাঙ্গাইল, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ, ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুর্নিবাড়ী হতে চন্দনবাইশা পর্যন্ত যমুনা নদী ডান তীর সংরক্ষণসহ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ, ব্যয় হবে ৩০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প, ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মেঘনা সেতুর স্কাউয়া প্রটেকশন এবং মেঘনা ও গোমতী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প, ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাসমূহ এ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে উন্নয়ন, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অনুমোদন পাওয়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারসহ (ফেজ-৩) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে ডানিডা, এএফডি ও ইআইবি থেকে নেয়া হবে ৩ হাজার ৫৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৫১৩ কোটি ৮০ লাখ এবং ঢাকা ওয়াসার অবদান ৩০ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসা চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু করে ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রকল্পের বিস্তারিত বর্ণনায় বলা হয়েছে, ইনটেক লোকেশন : নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার হরিয়ায় মেঘনা নদীর ডান তীর, টুইন ৪ ওয়াটার ট্রান্সমিশন লাইন : হরিয়া, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ থেকে সায়েদাবাদ, ঢাকা পানি শোধনাগার : সায়েদাবাদ, ঢাকা এবং পরিশোধিত পানি সরবরাহ লাইন : ঢাকা শহর এলাকা প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতায় ঢাকা ওয়াসা বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার হরিয়ায় অঞ্চলে মেঘনা নদীর ভূ-উপরিস্থ পানি তুলনামূলক কম দূষিত তাই মেঘনা নদীর ওই স্থানটি অপরিশোধিত পানি গ্রহণ পয়েন্ট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্লান্ট-১ এবং প্লান্ট-২ সায়েদাবাদ, ঢাকাতে স্থাপিত। এ প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত প্লান্ট-৩ স্থাপনের জন্য ইতোপূর্বে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা রয়েছে। এ জন্য ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। ওয়াসা সূত্র জানায়, ৪৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের মাধ্যমে ভূ-গভস্থ পানি উত্তোলনের নির্ভরতা কমানো, ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর মাধ্যমে স্থাপিত প্লান্ট-১ ও প্লান্ট-২ সহ প্রস্তাবিত প্লান্ট-৩ এর জন্য সøাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, বিদ্যমান প্লান্ট-১ ও ২ এ ৪৫০ এমএলডি এবং প্রস্তাবিত প্লান্ট-৩ এ ৪৫০ এমএলডি অর্থাৎ মোট ৯০০ এমএলডি অপরিশোধিত পানি সরবরাহের জন্য টুইন ‘র ওয়াটার ট্রান্সমিশন’ লাইনসহ ইনটেক পাম্প স্টেশন নির্মাণ এবং পানি বিতরণ পাইপলাইন স্থাপনই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। অনুমোদিত প্রকল্পের মূল কমপোনেন্ট ৪৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগারটি সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ১ম ও ২য় পর্যায়ের পাশেই নির্মাণ করা হবে। যার জন্য জমি ইতোমধ্যেই সংরক্ষিত রয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর পানি গ্রীষ্মকালে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে এই পানি ‘র ওয়াটার’ হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ততা হারাতে পারে। এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিস্তারিত সম্ভাব্য সমীক্ষার আলোকে মেঘনা নদীতে ১ম ও ২য় পর্যায়ে স্থাপিত ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ২টির জন্য প্রয়োজনীয় ‘র ওয়াটার’ সংগ্রহ করার জন্য ৩য় পর্যায়ের আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। সূত্র জানায়, ফ্রান্স সরকারের সহযোগিতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ২০১১-২০১৫ অর্থবছরের, এক্সিলারিং গ্রোথ এ্যান্ড রিডিউসিং প্রোপার্টি পার্ট-৫ম অধ্যায়ে উল্লিখিত ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন ডব্লিউএসএস সেক্টরের পলিসিস এ্যান্ড স্টাটিজিসসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
×