ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীর খবর দিলে লাখ টাকা পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীর খবর দিলে লাখ টাকা পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় ও ঠিকানা জানালে এক লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার দেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব রায়হান আখতার স্বাক্ষরিত এক আদেশে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। টেলিযোগাযোগ খাতে কোনপ্রকার অনিয়ম দুর্নীতি সহ্য করবেন না মন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পরই এমন ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় অবৈধভাবে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর সিম বিক্রি ও নকল মোবাইল সেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। তিনি নিজেই কোন কোন অভিযানে যোগ দিচ্ছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত কয়েক দিনে কয়েক দফা বৈঠক করে এ ঘোষণা দেন। মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান দ-নীয় অপরাধ। এতে বড় রকমের শাস্তির বিধান রয়েছে। অবৈধ ভিওআইপিকারীরা বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের পরিচয় ও ঠিকানা দিতে পারলে, তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ওই সব অপরাধীর অনুসন্ধান দিতে পারবেন, তাকে দেয়া হবে এক লাখ টাকা পুরস্কার। বৃহস্পতিবার জারিকৃত ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, যে কেউ সরাসরি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ও বিটিআরসি চেয়ারম্যানের কাছে তথ্য দিতে পারবেন। যারা তথ্য দেবেন তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে। বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন বৈধভাবে গড়ে ৯ থেকে সাড়ে ৯ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল হচ্ছে। কয়েক দিন আগেও বৈধভাবে প্রতিদিন সাড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট কল আদান-প্রদান হতো। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগে ‘ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট’ কমিয়ে আনার পাশাপাশি গেটওয়েগুলোর সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিটিআরসি। বর্তমানে ইনকামিং কলের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটের সর্বনিম্ন রেট শূন্য দশমিক শূন্য তিন মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক শূন্য এক পাঁচ মার্কিন ডলার করা হয়। এখান থেকে বিটিআরসি ৪০ শতাংশ রাজস্ব আয় পায়। ২০ শতাংশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ), ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট আইএসপিসহ অন্যান্য মাধ্যম পেয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে আইজিডব্লিউ আন্তর্জাতিক কল রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি রেটে সরকার কোন রাজস্ব পাবে না, আইজিডব্লিউ-ই লাভবান হবে। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইজিডব্লিউ অপারেটররা কলরেট শূন্য দশমিক শূন্য এক পাঁচ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক শূন্য দুই ডলার করায় বৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান দিনে দেড় থেকে দুই কোটি মিনিট কমে গেছে। এতে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই টাকার এক পয়সাও সরকারের তহবিলে যাচ্ছে না। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দেননি। সরকারের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে তিনি উদাসীন ভূমিকা পালন করেছেন। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিমন্ত্রী কি জানেন না অবৈধ ভিওআইপি কারা করেন। ভিওআইপিরাই অবৈধ ভিওআইপি করে আসছে। অবৈধ ভিওআইপির টাকা তারা দেশেও রাখছেন না। লেনদেন করছেন বিদেশে। আর সেই টাকা বিদেশেই থেকে যাচ্ছে। মন্ত্রীর এমন ঘোষণায় মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির কিছু কর্মকর্তার পকেট-ই ভারি হবে। কাজের কাজ কিছু হবে না। এক লাখ টাকা কেন দশ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করলেও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ কোন তথ্য দেবে না। কারণ তারা এত বেশি প্রভাবশালী যে কাউকে গুম করে দিতে দ্বিধা করবে না। মন্ত্রীর এমন ঘোষণা ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। আর অবৈধ ভিওআইপি যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলবে। কারণ যে চক্রটি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে তিনি কিছু করতে পারবেন বলে মনে করার কিছু নেই। এ ঘোষণা দেয়ার অর্থ তিনি যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারই জানান দেয়া। এদিকে একই দিন আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামও (আইওএফ) অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনাকারীদের তথ্যের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে।
×