ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেড লাইসেন্স ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

চট্টগ্রামে বাণিজ্য নিবন্ধন কমেছে চল্লিশ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চট্টগ্রামে বাণিজ্য নিবন্ধন কমেছে চল্লিশ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত মার্চ থেকে ব্যবসা নিবন্ধন (ট্রেড লাইসেন্স) ফি বাড়িয়েছে সরকার। ফলে চট্টগ্রামে বাণিজ্য নিবন্ধন কমেছে ৪০ শতাংশ। নবায়ন কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। খরচ বাড়ায় নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারানোর কারণে ব্যবসা নিবন্ধন কমেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, ‘বর্ধিত ফি অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক’। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, এ বছরের জুলাই ও আগস্টে নতুন বাণিজ্য নিবন্ধন হয়েছে এক হাজার ৮টি। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৭০টি কম। ২০১৪ জুলাই ও আগস্টে বাণিজ্য নিবন্ধন হয়েছিল এক হাজার ৬৭৮টি। এ বছর জুলাই ও আগস্টে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ২৫ হাজার ৬৪৬টি। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই হাজার ৭১৫টি কমেছে। ২০১৪ সালের জুলাই ও আগস্টে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৯১টি। এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘ফি বাড়ার কারণে গতবছরের তুলনায় ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধন ও নবায়ন কিছুটা কমেছে। বর্ধিত ফি দিতে কিছুটা অনীহা দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রমান্বয়ে তা ঠিক হয়ে যাবে।’ চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ফি অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক হারে বাড়ানো হয়েছে। সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫৯০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। যার কারণে নতুন ট্রেড লাইসেন্স কেউ নিচ্ছেন না। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন।’ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোন প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়া এ রকম অস্বাভাবিকভাবে ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির কারণে এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন এ ব্যবসায়ী নেতা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহমুদুল হক বলেন, ‘সব সিটি কর্পোরেশনের জন্য মন্ত্রণালয় ফি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আমরা সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ফি আদায় করছি। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।’ সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল ২০০৪ অনুযায়ী, জুয়েলারি (শো রুমসহ) ট্রেড লাইসেন্স ফি ছিল ১ হাজার টাকা, জুয়েলারী (শো রুম ছাড়া) ৭৫০ টাকা। যা যথাক্রমে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা ও ৪ হাজার টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর বলেন, ‘এমনিতে স্বর্ণের ব্যবসায় মন্দা চলছে। এর মধ্যে সরকারের চাপিয়ে দেয়া অস্বাভাবিক করের বোঝা ব্যবসায়ীদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক হাজার টাকার ফি কিভাবে ১০ হাজার টাকা হতে পারে? একটি স্বাধীন দেশে নাগরিকদের ওপর এ রকম অযৌক্তিক করের বোঝা কোনভাবে চাপিয়ে দেয়া যায় না।’ ১০ হাজার টাকার স্থলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা ১৫ হাজার টাকা দাবি করছেন বলেও অভিযোগ এ ব্যবসায়ী নেতার। সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল ২০১৫ অনুযায়ী, তরিতরকারি ব্যবসায় নিবন্ধন ফি ৫০০ টাকা, গুড়, চিড়া, মুড়ি ব্যবসায় ৫০০ টাকা, মুদি দোকান এক হাজার টাকা। যা পূর্বে ছিল যথাক্রমে ৫০ টাকা, ৫০ টাকা, ২৫০ টাকা। ধান, চাল, ডাল, তেল, ময়দা, আটার আড়তের নিবন্ধন ফি দুই হাজার টাকা, ইট ও বালু তিন হাজার টাকা, ফল, কাঁচামাল এক হাজার টাকা, হাঁস-মুরগি ৫০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৫ হাজার টাকা। যা পূর্বে ছিল যথাক্রমে ৫শ’ টাকা, ৭৫০ টাকা ও অন্যগুলো ৩০০ টাকা করে। চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, ‘যেভাবে অযৌক্তিক হারে ফি বাড়ানো হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করা কোনভাবে সম্ভব হবে না। এটা অমানবিকও বটে।’ অবিলম্বে ট্রেড লাইসেন্স ফি কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন এ ব্যবসায়ী নেতা। আদর্শ কর তফসিল ২০০৪ অনুযায়ী ১৩০ খাতে কর আদায় করা হতো। এখন তা বাড়িয়ে ২১৯টি খাতে কর আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে শতাধিক উপখাতও রয়েছে।
×