স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস ॥ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও শাবি ছাত্র শাহরিয়ার মজুমদারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ওসমানী হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর ওসমানী হাসপাতাল মসজিদে জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেন তার ভাই ও চাচাসহ স্বজনরা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গ্রামের বাড়িতেই তাকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। শাহরিয়ার মজুমদারের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠছে। এটা মৃত্যু না হত্যা এ নিয়ে তদন্ত দাবি করছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্র্মীরা।
শাহরিয়ার শাবিপ্রবি সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়া সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন। ব্লগার অভিজিত রায় হত্যার প্রতিবাদে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, সিলেট আয়োজিত মিছিলেও অংশ নেন তিনি। ওই মিছিলে অংশ নেয়ার পর থেকেই নতুন করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি পাচ্ছিলেন শাহরিয়ার। এর আগে তাকে কাফনের কাপড় ও এর সঙ্গে চিরকুট পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল। শাহরিয়ারের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠীরাও। শুক্রবার ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে শাহরিয়ারের লাশ হস্তান্তরের সময় তার বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ময়নাতদন্তকালে ওসমানী হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ শাবি শিক্ষক, শাহরিয়ারের বন্ধু-সহপাঠী ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমদ জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। শাহরিয়ারের রুমমেটরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আখালিয়ার সুরমা আবাসিক এলাকার নিজ বাসার রুমে রেখে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা মেসে ফিরে অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় দরজা ভেঙ্গে গ্রীলের সঙ্গে বেল্ট দিলে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে রাত আনুমানিক ৯টায় তার লাশ উদ্ধার করে। তার মৃতত্যুকে রহস্যজনক হিসেবে অভিহিত করে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে সিলেট গণজাগরণ মঞ্চ। শাহরিয়ার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করে কিছু ড্রপ কোর্স শেষ করার জন্য ব্যস্ত ছিলেন। শাহরিয়ার মজুমদারের মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যাÑ এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে শাহরিয়ারের বন্ধুদের দাবি এ মৃত্যু রহস্যজনক। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যু রহস্য খতিয়ে দেখার দাবি তাদের। একই দাবি জানিয়েছে সিলেট গণজাগরণ মঞ্চও। শাহরিয়ারের বন্ধু ও শাবি ছাত্রফ্রন্টের নেতা সুদীপ্ত জানান, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বুধবারও ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কর্মসূচীর আয়োজন করেন শাহরিয়ার। সেদিনও তাকে প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি দেখা গেছে। তিনি বলেন, শাহরিয়ার কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। এই মৃত্যু রহস্যজনক। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের দবি জানান। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শাহরিয়ারের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার মেঝেতে মরদেহ পড়ে রয়েছে। পড়ার টেবিলের ওপর তার ল্যাপটপটিও চালু অবস্থায় রয়েছে।
শাহরিয়ারের রুমমেটরা জানান, বিকেলে তাকে রুমে রেখে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা মেসে ফিরে অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় দরজা ভেঙ্গে গ্রীলের সঙ্গে বেল্ট দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে রাত আনুমানিক ৯টায় তার লাশ উদ্ধার করে। শাহরিয়ারের লাশ উদ্ধারের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ শাবি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও শাহরিয়ারের বন্ধু-সহপাঠীরা।
শাহরিয়ারের লাশ উদ্ধারের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিদুল ইসলাম সুমন ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেনÑ ‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই অনেক রাজাকারপ্রেমী জঙ্গীর চক্ষুশুল শাহরিয়ার। তখন থেকে সে বিভিন্ন সময়ে কিছু মৃত্যু পরোয়ানার মতো চিঠি, এবং অন্যান্য হুমকি পেয়েছে।’ শাহরিয়ারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেনÑ ‘আমি ওর সেফটি নিয়ে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতামÑ বলতাম একা চলাফেরা না করতে’। শাহরিয়ারের মৃত্যুকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে না নিতে পারার কথা উল্লেখ করে সুমন লিখেনÑ ‘এখন ও রুমে একা থাকা অবস্থায় মারা গেল, এবং সেটাকে সুইসাইড বলা হচ্ছেÑ আমি মেনে নিতে পারছি না।’
আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয় ॥ ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমরা মানতে পারি না। আমাদের মনে খুব কষ্ট হয়। এত জ্ঞানী একটা ছেলে, এত আগ্রহী একটা ছেলে। আমি যত জনের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ বলে নি সে কখনও মন খারাপ করে থাকে। কিংবা তার কোন বিতৃষ্ণা আছে। সবাই বলেছে, খুবই আগ্রহী। কাজেই আমাদের মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। এতো হাসিখুশি একটা ছেলে কেন এভাবে আত্মহত্যা করবে?
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও শাবি ছাত্র শাহরিয়ার মজুমদারের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শুক্রবার সকালে ওসমানী হাসপাতালে শাহরিয়ারের ময়নাতদন্ত চলাকালে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় এমন কথা বলেন জাফর ইকবাল।
এ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘তার মৃত্যু নিয়ে আমরা যদি সন্দেহ করেও থাকি, যারা প্রফেশনাল, যারা এ ধরনের কেস হ্যান্ডেল করে থাকেন, পোস্টমর্টেম করা হবে, কেউ যদি সুইসাইড করে পোস্টমর্টেম করে এসব বের করে ফেলা যায়।’