ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোটাবঞ্চিত হজযাত্রীদের নিয়ে অসাধু এজেন্সির কূটকৌশল

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কোটাবঞ্চিত হজযাত্রীদের নিয়ে অসাধু এজেন্সির কূটকৌশল

আজাদ সুলায়মান ॥ কোটাবঞ্চিত হজযাত্রীদের নিয়ে চলছে দু’পক্ষের কূটকৌশল। এক পক্ষ হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ এনে ধর্ম সচিব ও হজ অফিসের পরিচালকের অপসারণ দাবি করছে। অপর পক্ষের অভিযোগ- যারা নিজেদের গাফিলতির দরুন সঠিক সময়ে হজযাত্রীদের ডাটা এন্ট্রি করতে পারেননি তারাই এখন এর দায়ভার চাপাচ্ছে হজ অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওপর। অথচ রাতের আঁধারে তারাই হজ অফিসে বসে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেন। আর দিনের বেলায় সাধারণ হজ যাত্রীদের চাপ সামলাতে জুমার নামাজ শেষে আন্দোলনের ডাক দেন। এ বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর আশকোনা হজ ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেন হজযাত্রীরা। এ সময় তারা এই দুই ব্যক্তির অপসারণ দাবি করেন। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, ধর্ম সচিব চৌধুরী মোঃ বাবুল হাসান ও হজ অফিসের পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এবার ১০ হাজার হজযাত্রী হজে যেতে পারছেন না। এ সময় আবদুল করিম খান জামান, রুহুল আমিন মিন্টু ও আব্দুল মতিন ভুইয়া বক্তব্য রাখেন। তাদের অভিযোগ, এই দুই হজ কর্মকর্তা অবৈধভাবে এমন ব্যক্তিদের হজে পাঠিয়েছেন- যারা আর হজের পর ফিরে আসবে না। এদের কারণে বৈধ হজযাত্রীরা হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা বৈধ হজযাত্রীদের হজে যাওয়া নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হজ অফিসার ডক্টর আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে কারোর নাম উচ্চারণ না করে বলেন, ‘‘আমি তো এখানে যোগদান করেছি মাত্র কয়েক মাস আগে। আর হজযাত্রীদের মোয়াল্লেম ফি ও ডাটা এন্ট্রির কাজ শেষ হয়েছে সেই ফেব্রুয়ারি মাসে। কাজেই সেই সময়ের দায়ভার আমার ওপর কিভাবে বর্তায়? তবে সেই সময়ের ঝড় ঝাপটা এখন আমাকে আঘাত করছে। না জেনে না বুঝে আমার ও সচিবের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে কি ঘটছে সেটা তো মিডিয়ার আপনারাই ভাল জানেন।’’ এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর সৌদি সরকার বাংলাদেশের জন্য ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জনের কোটা বরাদ্দ করে। নতুন করে যদি এ কোটা বৃদ্ধি না করা হয়, তাহলে এর বাইরে কিছুতেই কারোর পক্ষে হজে যাওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ভিসা হয়েছে ১ লাখ ৫শ’ ২৯ জনের। বাকি ভিসাগুলো আজ কালের মধ্যে হয়ে যাবে। ভিসাপ্রাপ্তদের মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ৬৭ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব চলে গেছেন। এ অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কোটাবঞ্চিত বাকি হজযাত্রীদের ভাগ্যে কি ঘটবে? আর এদের সংখ্যাই বা কত? এ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোয়াল্লেম ফি জমা দেয়া ও ডাটা এন্ট্রি করার জন্য সৌদি সরকারের বেঁধে দেয়া শেষ সময়ের পরেও বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক অসাধু হজ এজেন্সি মোয়াল্লেম ফি জমা দেয়। সৌদি সরকার হয়ত আরেক দফা ডাটা এন্ট্রির তারিখ বাড়াতে পারে এমন আশায় এরা মোয়াল্লেম ফি জমা দেয়। কিন্তু পরে সৌদি সরকার আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় আর বাড়ানো সম্ভব হয়নি তারিখ। এতে বিপাকে পড়ে প্রায় তের হাজার হজযাত্রী। এরাই শুরু থেকে সংগঠিত হয়ে মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনে সক্রিয় থাকে। এ অবস্থায় গত মাসে হজ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বি এইচ হারুনের সভাপতিত্বে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। এ কমিটিতে কোটাবঞ্চিতদের নেতা আবদুল মতিন ভুইয়াও ছিলেন। এ কমিটি হজ ক্যাম্পে সপ্তাহব্যাপী যাচাই-বাছাই করে দেখতে পায়Ñ কোটাবঞ্চিতদের মধ্যে অর্ধেকই ভুয়া। হজ অফিস সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই কমিটির রিপোর্টে অর্ধেকের বেশি ভুয়া হজযাত্রীর নাম ওঠে আসে। সে ক্ষেত্রে বাকি থাকে আনুমানিক প্রায় ৭ হাজার। তার মধ্যে হজ ফ্লাইট চালু হওয়ার পর অসুস্থতা, মৃত্যুজনিত ও অন্যান্য কারণে রিপ্লেস বাবদ আরও পাঁচ হাজার কোটাবঞ্চিত হজযাত্রীকে সুযোগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় বাকি থাকে মাত্র দুই হাজার। এরাই এখন প্রতি সপ্তাহে জুমার নামাজের পর আন্দোলন করে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর কৌশল নিয়েছে। কারণ এসব এজেন্সি যাত্রীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নেয়ার পরও এখন তাদের পাঠাতে পারছে না। এসব নেতাই রাতের বেলায় হজ অফিসে বসে নিজেদের ভুল স্বীকার করছেন, কোটা নিয়ে অন্যের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছেন, আর দিনের বেলায় আন্দোলন করছেন। আর দায় চাপাচ্ছেন হজ অফিস ও ধর্ম সচিবের ওপর। যাতে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। এজেন্সির ভুল গাফিলতির দায়-দায়িত্ব কিছুতেই সরকার নেবে না বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তাদের মতে, সৌদি সরকার যদি কোটা না বাড়ায় তাহলে শেষ পর্যন্ত হাজার দুয়েক মোয়াল্লেম ফি জমাদানকারী হজযাত্রী হয়ত এবার সৌদিতে যেতে পারবেন না।
×