ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপির ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়বে;###;স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ॥ সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ॥ সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ॥ সহায়তা বাড়াচ্ছে  বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে নতুন অঙ্গ। ফলে মোট প্রকল্প ব্যয় ৩ হাজার ৯১১ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৯৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকায়। এ প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-২ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। বলা হয়েছে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে কার্যকর ও স্বচ্ছ আন্তঃসরকার অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সার্বিক সেবা নিশ্চিত করা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাজেট তৈরি এবং বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো ও তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাছাকাছি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গঠিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। দেশের ৪ হাজার ৫০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ জনগণকে বিভিন্নমুখী সেবা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে জনগণকে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউএনসিডিএফ, ইসি ও ডানিডার আর্থিক সহায়তায় ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুন মেয়াদে ১ হাজার ৩৩১ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রোজেক্ট (এলজিএসপি) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদে সরাসরি থোক বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রকল্প চলাকালীন ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৫০ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় সরাসরি থোক থেকে বরাদ্দ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষাধিক স্কিম বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব সফলতার পর এ প্রকল্পটিকে স্থায়ী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠান করার জন্য বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এলজিএসপি-২ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ৩ হাজার ৯১১ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে এক হাজার ৮৩৮ কোটি ৮০ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ২ হাজার ৭৩ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন লাভ করে। চলমান এলজিএসপি-২ প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে ৪ হাজার ৫০০টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠু বাস্তবায়নের নিমিত্তে সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) কিছু নতুন অঙ্গ যোগ করে ও কিছু অঙ্গের অর্থ সমন্বয় করে চার হাজার ৬০ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরে এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ ৫ মাস বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবের উপর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে ১১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ৩ হাজার ৯৪০ কোটি ৯১ লাখ টাকা এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ১৮১ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তা থেকে ২ হাজার ১২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ধরে সংশোধনী প্রস্তাব পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনী প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে নতুন কম্পোনেন্টগুলো হচ্ছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যম জেলা ফ্যাসিলিটেটর নিয়োগ, ইউনিয়ন পরিষদ (অডিট) পরিচালনার জন্য সিএ ফার্ম প্রকিউরিং-এর পরিবর্তন, ইনফরমেশন-এডুকেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন ক্যাম্পেইনের জন্য প্রকিউরিং ফার্ম অন্তর্ভুক্তি, ৮৪টি ইউপিএস ক্রয়, কম্পিউটার সার্ভার স্থাপন, প্রশিক্ষণ, এ্যাকাউন্টস এ্যান্ড অডিড সফটওয়্যার, ফ্যাসিলিটেটরদের অফিস স্থাপন ও যানবাহন ক্রয়সহ ইত্যাদি কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় কার্যকর ও স্বচ্ছ আন্তঃসরকার অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি প্রবর্তন ছাড়াও স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সেবা প্রদান, জবাবদিহিতামূলক এবং স্বচ্ছ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ প্রকল্পটি গ্রামীণ জনগণের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবে তাই সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মূল অনুমোদিত প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৩ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। সেটি বাড়িয়ে সংস্থাটি এখন দিচ্ছে দুই হাজার ১২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা শতাংশের দিক থেকে মোট বরাদ্দের ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৭৪ শতাংশ।
×