ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাটক গান কবিতায় জমজমাট গঙ্গা-যমুনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নাটক গান কবিতায় জমজমাট গঙ্গা-যমুনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উৎসব একটাই। বাংলাদেশ ও ভারতের ১৮টি মঞ্চনাটক নিয়ে সাজানো নয় দিনের উৎসব। তবে আয়োজনে রয়েছে ভরপুর বৈচিত্র্যের বহুমুখী পরিবেশনা। মঞ্চনাটকনির্ভর উৎসবে যুক্ত হয়েছে পথনাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা। সব মিলিয়ে উৎসবের শিরোনাম গঙ্গা-যুমনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব। বিকেলে উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হচ্ছে দুটি করে নাটক। আর এমন বহুমাত্রিক আয়োজনে সংস্কৃতিপ্রেমীদের আগমনে মুখরিত শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার আঙিনা। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। এদিন বিকেলে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের উৎসব কার্যক্রম। নাট্যশালার খোলা আঙিনায় বসে নাচ-গান ও কবিতা পাঠের আসর। আর এমন মনমাতানো আয়োজন সংস্কৃতি অনুরাগীদের পাশাপাশি আকর্ষণ করছে পথচলা পথচারীদেরও। সেই সূত্রে নাট্যশালার দীর্ঘ সিঁড়িটি পরিণত হয়েছে দর্শকের আসনে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই সেখানেও যেন তিল ধারণের ঠাঁই থাকছে না। শরীরের সঙ্গে শরীর লেগে শ্রোতা-দর্শকে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ছে সিঁড়ির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। অনেকেই সুর বা কবিতার শব্দমালায় আকৃষ্ট হয়ে ঢুঁ মারছেন উৎসব প্রাঙ্গণে। বসে পড়ছেন সিঁড়ির উপর। সংস্কৃতিপ্রেমীদের সঙ্গে বিনোদন সন্ধানী উৎসুক মানুষের পদচারণায় জমজমাট রূপ নিয়েছে এই উৎসব। শনিবার শরতের বিকেলে তেমনই সুন্দর ও স্নিগ্ধ দৃশ্যের দেখা মিলল। কার্যক্রম শুরু হয় পথনাটক পরিবেশনের মাধ্যমে। আটই ফাল্গুন শিরোনামের পথনাটক উপস্থাপন করে নাট্যদল নাট্যযোদ্ধা। ফয়সাল আহম্মেদ রচিত ও নির্দেশিত নাটকের প্রেক্ষাপট বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি পরিবেশন করে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র এবং ত্রিলোক বাচিক পাঠশালা। কাঁকন জাহানের রচনা ও গ্রন্থনায় মৃত্যুর জাদুঘর শীর্ষক প্রযোজনা উপস্থাপন করে সংবৃতা। রবি ঠাকুরের বৃষ্টি এলো টাপুরটুপুর কবিতাটি একক কণ্ঠে পাঠ করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকরী। সুরেলা শব্দধ্বনি ছড়িয়ে সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা। খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ভেসে বেড়ায় গানের সুর। পরিবেশিত হয় ‘ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের জলে ঢেউ খেলিয়া যায়’, ‘আমরা সবাই বাঙালি’ ও ‘জারুলের ফুলে দলে দলে ভোমরা উড়িয়া উড়িয়া চলেরে’। নূপুরের নিক্কনে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সমন্বয়ে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষ। সব মিলিয়ে যেন উৎসব প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে একখ- আনন্দভূমিতে। বিকেলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষ হতেই সন্ধ্যায় ভিড় নামে নাট্যকর্মীদের। এদিনের সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয় ভারতের নাট্যদল সংস্তবের নাটক ভূতনাথ। আর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় রাজশাহীর অনুশীলন নাট্যদলের প্রযোজনা দ-। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের রচনায় ভূতনাথ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়। পুঁজিবাদী সমাজে চাকরিজীবী সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে কমেডি ধাঁচের প্রযোজনাটি। পুুঁজিবাদী অর্থনীতির চাকরি কালচজালে মানুষ কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে থাকে যে নিজের জীবনের জন্য সে অর্থে আর কিছুই বাকি থাকে না। একই ধরনের কাজ করতে করতে মানুষ অনেকটা যন্ত্রে পরিণত হয় । এই কাজের বিনিময়ে মাস শেষে পাওয়া যায় কিছু টাকা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই অবস্থাটি আরেক ধরনের দাস প্রথার জন্ম দেয়। তবে এই দাসেরা সেইভাবে প্রতিবাদ করে না। আর নিজেদের আত্মার যে ক্ষয় হয়ে চলেছে সে ব্যাপারেও তারা সচেতন নয়। এমনই বাস্তবতা নিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। এতে ভূতনাথ চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্থ সারথী চন্দ্র। অন্যান্য চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সুব্রত সমাজদার, সুনীল মুখার্জী, শেখর চক্রবর্তী ও পিনাকী মুখোপাধ্যায়। রচনার পাশাপাশি দ- নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন মলয় ভৌমিক। ক্ষমতা যার হাতে, সমাজ-দেশ এবং বিশ্বময় কর্তৃত্ব করার অধিকার কেবল তারইÑ এমন প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে নাটকের গল্পে। অর্থ, তথ্য, যুক্তি, বিচার এমনকি সত্যটাও ক্ষমতাবানেরই হাতে। ক্ষমতার এই একপেশে দৃষ্টিটাকে যদি ধ্রুব ধরা হয়, তাহলে তা ক্রমাগত এক কেন্দ্রে গিয়ে জড়ো হতে থাকে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল ক্ষমতা সবল ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ক্ষমতার কেন্দ্রাভিমুখ এই প্রবণতা নতুন নয়; যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে কেন্দ্রযাত্রাÑ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রঙঢঙটা কেবল পাল্টেছে। সমাজ যত ভদ্র-সভ্য হওয়ার দাবি করেছে তত তার মুখোশের রঙও পাল্টানোর প্রয়োজন পড়েছে। মুখোশের আজকের রঙ শান্তি, মানবতা আর উদারতা কিনা, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে বিস্তর। দ- কখনও ক্ষমতা কখনও নির্ভরশীলতার প্রতীক হয়ে মুখোশের রঙ নিয়ে রঙ্গতামাশার মাধ্যমে সেই তর্কটাকেই আহ্বান করে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাকিবুল আলম, তৌহিদ নবীন. তানজিদা নাহার, রিপন ঘোষ, দেওয়ান রায়হান, উদাস গোস্বামী, হাসি চক্রবর্তী প্রমুখ। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্বে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পরিবেশিত হবে পথনাটক, আবৃত্তি, গণসঙ্গীত ও নৃত্য। সন্ধ্যা ৭টায় থাকছে দুটি করে নাটকের মঞ্চায়ন। উৎসবে মঞ্চনাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও পথনাটক নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ৫৩টি দল অংশগ্রহণ করছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। শরতের সন্ধ্যায় জাগরণের গান ॥ দর্শনীর বিনিময়ে নিয়মিত সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করছে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার শরতের সন্ধ্যায় জাগরণ সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র পরিবেশন করে জাগরণের গান। মোস্তফা জাহিদ খানের পরিচালনায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এই সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে গান শোনান সানজিদা সুলতানা, রেজাউল করিম, মাহমুদুল হাসান, দিদারুল করিম, অদ্বৈত চন্দ্র রায়, সানোয়ারা জাহান, সুপিদ গোমেজ, রুবাইদা বিনতে দিনা, ফাল্গুনী মুখার্জী, এনেট গোমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও শহীদ কবির পলাশ। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাগরণের শিল্পীরা। ভরা ভাদরে মেঘেরও ভেলা ॥ গণমাধ্যম সংস্থা ঘাসফুলের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শনিবার ‘ভরা ভাদরে মেঘেরও ভেলা’ শীর্ষক কবিদের আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে রাজধানীর পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে এ আয়োজন হয়। কবি কাজী রোজির সভাপতিত্বে ঘাসফুলের পরিচালক রাবিয়া সুলতানা পান্নার আবৃত্তি মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কথাসাহিত্যিক আতা সরকারের স্বাগত বক্তব্যের পর ‘কবিতার সঙ্গে বাঙালির আত্মার বন্ধন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি মিনার মনসুর। অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন বেশ কয়েকজন কবি।
×