ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনীরা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনীরা

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার দ-প্রাপ্ত পলাতক পাঁচজনকে এখনও ফিরিয়ে আনা যায়নি। প্রতিবছর আগস্ট মাস এলেই শোনা যায়, খুনীদের ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদ- কার্যকর করার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা। বছরের বাকি মাসগুলোতে আর কোন কথা ওঠে না। বলা হয় না কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন আলোচনাও হয় না এ প্রসঙ্গে। পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনও করা হয়েছে বহু আগে। বছরতিনেক আগে এরা কানাডা সফর করে এসেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রাদেশিক সরকারপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়েই সফর সমাপ্ত করার কথা গণমাধ্যমে এসেছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে খুনীদের ছবি দিয়ে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছিল আরও অনেক আগে। তাতে তেমন কোন ফল হয়েছে, তাও নয়। এদের অনেকের অবস্থান এখনও নির্ণয় করা যায়নি। বিদেশে পলাতক ৭ আসামির মধ্যে আজিজ পাশা জিম্বাবুইয়েতে মারা গেছে বলে প্রচার রয়েছে। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, নুর চৌধুরী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছে। রিসালদার মোসলেম উদ্দিন থাইল্যান্ডে, আবদুল মাজেদ কেনিয়ায় এবং খন্দকার আবদুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তানে অবস্থান করছে। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। যে পাঁচ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি, এর মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র এবং বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল। সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার খান, একেএম মহিউদ্দিনকেও দেশেই গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্টরা গত ৮ বছর ধরে আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে পলাতকদের ফেরত আনা হবে, কিন্তু তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হেরোইন পাচারের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত মার্কিন নাগরিক এলিয়েদাকে ঢাকা কারাগার থেকে নিয়ে যেতে পারে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রিত পলাতক খুনীকে ফেরত দিতে তারা কেন গড়িমসি করছে, তা স্পষ্ট নয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কোন লোককে দেশে ফেরত পাঠানো হয় না বলে কানাডা জানিয়ে দিয়েছে। তাদের রাজি করাতে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খুনীদের অবস্থান বের করে তাদের ফিরিয়ে আনাটা কষ্টকর প্রক্রিয়া বটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও পাকিস্তান সহায়তা করছে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, যারা নিজেদের সভ্য ও উন্নত দেশ হিসেবে দাবি করে, তারাই এসব ঘৃণ্য ঘাতকদের আশ্রয় দিয়েছে। কেন তারা এটা করছে তা স্পষ্ট নয়। এমনকি তারা এ ব্যাপারে সহযোগিতাও করছে না। খুনী মূলত খুনীই, সে যেখানেই থাক। পাকিস্তানে যে দু’জন রয়েছে, তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত। কিন্তু সে দেশের সরকার কোন উচ্চবাচ্য করছে না। ওয়ান ইলেভেনের সময় চ্যানেল আই নামক টিভি চ্যানেল মৃত্যুদ-প্রাপ্ত খুনী কর্নেল রশিদের সাক্ষাতকার প্রচার করে। ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই জানে রশীদ কোথায়। সরকার তা জানে না, তা নয়, তবে বিষয়টিতে তারা নির্বিকার। ক্ষমতায় আসার পরও খুনীদের অবস্থান জানার চেষ্টা হলো না, তা প্রশ্ন জাগায়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার পরও ইতিবাচক কোন ফল আসেনি। পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবেÑ এটা দেশবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা।
×