ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পিওদের প্রতিমন্ত্রীর ভর্ৎসনা

পর্যাপ্ত অর্থ তবু এডিপি বাস্তবায়নে গতি নেই বিদ্যুত বিভাগের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পর্যাপ্ত অর্থ তবু এডিপি বাস্তবায়নে গতি নেই বিদ্যুত বিভাগের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি নেই বিদ্যুত বিভাগের। অথচ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুত বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ৬৮ প্রকল্পের চল্লিশটির কাজ শুরুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং কোম্পানি। আর দশটির কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। অন্য প্রকল্পের বার্ষিক অগ্রগতি ১০ ভাগের কাছাকাছি। সূত্র জানায়, কেবলমাত্র অর্থবছর শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্টরা এমন অজুহাত দেখালেও বেশিরভাগ প্রকল্পই গত অর্থবছর এমন কি আরও আগের। এসব প্রকল্পের কোন অগ্রগতি না থাকাটাকে দুঃখজনক হিসেবে দেখছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগে রবিবারের এডিপি পর্যালোচনা বৈঠক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পর্যালোচনা বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায় সরকারীভাবে নেয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের একটিরও সন্তোষজনক কোন অগ্রগতি নেই। কোন কোন কেন্দ্রের কাজ শুরু করাই সম্ভব হয়নি। অথচ দ্রুত উৎপাদনে আসার বেঁধে দেয়া সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১০ ভাগের বেশি কাজ করতে পারেনি কোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই। বৈঠক সূত্র বলছে ২০১২ সাল থেকে সরকারী বেশিরভাগ বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে গতি নেই। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ২০১২ সালে কাজ শুরু করে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ শতাংশ কাজ হয়েছে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের। কুয়েতের অর্থায়নে স্থাপন করা এই কেন্দ্র থেকে ২০১৬ সালে বিদ্যুত উৎপাদনে আসার সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তিন বছরে এই কেন্দ্রের জন্য মাত্র সাত লাখ ৩৬ হাজার টাকা খরচ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে আগামী এক বছরের মধ্যে কোনক্রমেই এত বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের ২০১৫ সালে উৎপাদনে আসার কথা। বিগত ২০১২ সালে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কাজই করতে পারেনি। শাহজিবাজার ১০৫ মেগাওয়াটের অবস্থাও একই। বিদ্যুত কেন্দ্রটির কাজ শুরুই করা সম্ভব হয়নি। বাঘাবাড়িতে ১০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র স্থাপন করতে চুক্তি করা হয়েছে ২০১৩ সালে। এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রের কোন কাজই হয়নি। চলতি অর্থবছরে এই কেন্দ্র স্থাপনে ৭৫ লাখ টাকা ছাড় হয়েছে। কিন্তু গেল দুই মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। একইভাবে বিবিয়ানা-৩ নম্বর ইউনিট ৪০০ মেগাওয়াট, বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র ২২৫ মেগাওয়াট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে এখনও পর্যন্ত কোন কাজই করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। গত জুনে ১০ শহর বিদ্যুত উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হলে মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে দিয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়েছে এখন বিদ্যুত প্রকল্পটি পিডিবির নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করতে হবে। হাতিয়াতে ২০১২ সালে সৌর এবং বায়ুবিদ্যুত উৎপাদন করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল ২০১৪ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখনও প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখেনি। এখন বলা হচ্ছে এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রের মিনিগ্রিড করার জন্য ৮৬ কোটি টাকার ব্যাটারি প্রয়োজন হবে। মাত্র আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য বিপুল অর্থ খরচ করে ব্যাটারি কেনার কোন প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে বিদ্যুত বিভাগ। প্রকল্পটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সঙ্গতকারণে প্রকল্প প্রস্তাব পরিবর্তন করে দাতা সংস্থার অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা করা হবে, যাতে ব্যাটারির ব্যয় বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হবে। দাতারা রাজি হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে নয়তো, তা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে। যদিও গত অর্থবছরে ২৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু এখন তা বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকল্প পরিচালকদের ভর্ৎসনা করেন বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বৈঠকে বলেন, টাকা বরাদ্দ দিয়ে লাভ কী, আপনারা তো খরচই করতে পারেন না। এ সময় তিনি প্রকল্প পরিচালকদের দ্রুত ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল করে কাজ করার তাগিদও দেন। কিছু প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হলে তা না বাড়িয়ে বরং বাতিল করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, টাকার সমস্যা নেই। দ্রুত টাকা ছাড় হলেও তা খরচ করা যাচ্ছে না। কয়েকটি প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হলেও তা নামঞ্জুর করে বাতিল করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলামসহ উর্ধতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
×