ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াসার দুটি চুক্তি স্বাক্ষর

বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ জলাধারে পাঠিয়ে চাহিদা মেটাতে প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ জলাধারে পাঠিয়ে চাহিদা মেটাতে প্রকল্প

ফিরোজ মান্না ॥ বহুতল ভবনের ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য আইডব্লিউএম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা দু’টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভস্থ জলাধারে পাঠানোর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৯০ হাজার মিলিয়ন লিটার পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তাছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন অনেকাংশে কমে যাবে। এখান থেকে ঢাকা মহানগরীতে দৈনিক অতিরিক্ত ২শ’ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ দেয়া যাবে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ভূ-গর্ভস্থ পানি ধরে রাখার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে দিনে দিনে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে ৭৮ ভাগ পানি ভূ-গর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে পানি উত্তোলন করলে ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগীর মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ঢাকা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। মহানগরীতে যে পরিমাণ বহুতল ভবন রয়েছে, এ ভবনগুলোর ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে দৈনন্দিন চাহিদার অনেকটাই মেটানো সম্ভব। এজন্য ভবন মালিকদের ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঢাকা মহানগরীর বাড়ির ছাদগুলোতে পানি ধরে রাখার জন্য ঢাকা ওয়াসা ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) মধ্যে দু’টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ওয়াসা গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে পানি উত্তোলন করে যৌথভাবে জলাধারগুলো পর্যবেক্ষণ করবে। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ও আইডব্লিউএমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম মনোয়ার হোসেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সূত্র জানিয়েছে, পরিবেশগত কারণে ঢাকা ওয়াসাকে দূরবর্তী নদী থেকে পানি সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নিতে হয়েছে। নিয়মিত রিচার্জের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর সন্তোষজনক অবস্থায় আছে কিনা তা মনিটরিং করা এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ঢাকাকে একটি উন্নত বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর যথাযথভাবে বজায় রাখা জরুরী। ঢাকা ওয়াসা এবং আইডব্লিউএম যে দুটি ক্ষেত্রে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা সফল হলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভবনা অনেকাংশে কমে যাবে। পরিবেশগত কারণে ঢাকা ওয়াসা ‘বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরণ’ এবং ‘পানির স্তর পর্যবেক্ষণ’র উদ্দেশ্যে আইডব্লিউএমের সঙ্গে আলোচ্য চুক্তি দুটি স্বাক্ষর করছে। ঢাকা ওয়াসা ভূ-গর্ভস্থ উৎসের পরিবর্তে ক্রমেই ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ৩টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নগরীর ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পেশাদার গবেষণা এবং সমীক্ষা করেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ঢাকা ওয়াসা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে দৈনিক মোট ১৪০ কোটি লিটার পানি রাজধানীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ২০২১ সালের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে একটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ এশিয়ার ‘শ্রেষ্ঠ পানি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচিত হতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ঢাকা ওয়াসা ইতোমধ্যে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা কৃত্রিম উপায়ে ভূ-গর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরন বিষয়ে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছে। সেগুনবাগিচা ও লালমাটিয়ায় দুটি পরীক্ষামূলক কাজের আওতায় দেখা যায় যে, ঢাকা শহরের ভবনের ছাদে পতিত বৃষ্টিপাতের ৬০ ভাগ পানি সংরক্ষণ করে ভূ-গর্ভস্থ জলাধারে পাঠানোর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৯০ হাজার মিলিয়ন লিটার পানি ভূ-গর্ভস্থ জলাধারে পুনর্ভরন করা যাবে। ফলে নগরীতে দৈনিক অতিরিক্ত ২শ’ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ঢাকা ওয়াসা তাদের এ অভিজ্ঞতা অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের প্রতিটিতে একটি করে প্রদর্শনী প্রকল্প করা হবে। ওয়াসা জানিয়েছে, সঠিকভাবে রিচার্জ না হওয়ায় রাজধানীর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ২-৩ মিটার করে নেমে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। যেহেতু প্রতিনিয়ত সুপেয় পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই ভূ-গর্ভস্থ জলাধারের পরিস্থিতি নিয়মিত জানা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এ জন্য ঢাকা ওয়াসা ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতাবস্থা পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণসহ গভীর নলকূপগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে পানির স্তর পরীক্ষার কাজ শুরু হবে।
×