ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়তলী রেল ওয়ার্কশপ আট বছর পর আধুনিকায়ন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পাহাড়তলী রেল ওয়ার্কশপ আট বছর পর আধুনিকায়ন হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দীর্ঘ প্রায় আট বছর পর আলোর মুখ দেখছে রেলের পাহাড়তলীর ক্যারেজ এ্যান্ড ওয়াগন শপ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ কারখানাকে আধুনিকায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গতা পাবে এ প্রকল্প। প্রকল্পকে দ্রুত উন্নয়নের তাগিদে তিনটি প্যাকেজে দরপত্র মূল্যায়ন শেষে চূড়ান্তকরণে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরপর ঠিকাদার পক্ষের সঙ্গে চুক্তিনামার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন ফাইলবন্দী হয়ে যায়। অবশেষে বর্তমান সরকারের আমলে এসে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। বর্তমান অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত রিভাইজড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল অনুমোদন, দরপত্র পুনর্গঠন ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ এবং অনুমোদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে বিল্ডিং এ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, ট্র্যাক ওয়ার্কস ও প্লান্টস এ্যান্ড মেশিনারি সংগ্রহের জন্য তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী গত ৬ মে বিল্ডিং এ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এবং ট্র্যাক ওয়ার্কসের দরপত্র খোলা হয়। সে অনুযায়ী উভয় দরপত্র চূড়ান্তকরণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। অপরদিকে, প্ল্যান্টস এ্যান্ড মেশিনারি সংগ্রহের প্যাকেজের দরপত্র গত ১৪ জুন খোলা হয়। দরদাতা দাখিলকৃত দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন (টিএসসি) গত ১২ জুলাই সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি গত ২০ জুলাই রেল ভবনের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই রেল ভবনে মূল্যায়ন কমিটি তা সুপারিশক্রমে রেল মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্তকরণের জন্য প্রেরণ করে। এই টেন্ডারটি অনুমোদন হলেই পূর্ণাঙ্গতা পাবে পুরো প্রকল্প। এ ব্যাপারে পাহাড়তলীর রেলওয়ে কারখানার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আধুনিকায়ন প্রকল্পের অবকাঠামো ও ট্র্যাক দুটি টেন্ডারই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়েছে। কোরবানির ঈদের পর পর এই উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। বাকি আছে শুধু প্লান্টস এ্যান্ড মেশিনারি সংগ্রহের প্রক্রিয়া। রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রেল মন্ত্রণালয় গঠনের পর পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়তলীর ক্যারেজ এ্যান্ড ওয়াগন শপ আধুনিকায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু হয়। প্রকল্পটি প্রকৃতপক্ষে ২০০৭-০৮ অর্থবছর হতে ২০০৯-১০ অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত ছিল। এরপর তা বর্ধিত করে ২০১০-১১ অর্থবছরে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এরপরও উন্নয়ন প্রকল্প থমকে ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিতীয়বারের মতো সময় বর্ধিত করা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি না করে তৃতীয়বারের মতো ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। অনুমোদিত রিভাইজড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (আরডিপিপি)-এর মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এ প্রকল্পের বর্তমানে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারী বাজেট (জিওবি) হতে ১৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং পুনভরণযোগ্য প্রকল্প সাহায্য থেকে ১৭৫ কোটি টাকার সংস্থান করা হবে। এদিকে, শত বছরের ও বেশি সময় ধরে এ কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন হয়নি, তেমনি উৎপাদন কাজ ব্যবহৃত মিশনারিজও শতবর্শী ব্যবহারের পর অনেকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রকল্পে আধুনিকায়কের বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা কথা বিবেচনা করে এ কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, পুরাতন ভবনসমূহ সংস্কার ও নতুন ভবন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ প্রকল্পে। এছাড়াও ওয়াশপের অভ্যন্তরে উৎপাদন কাজ ও শ্রমিক কর্মচারীদের চলাচল পথ, ব্যবহার্য নালানর্দমা স্থাপন এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শপে এবং ইয়ার্ডে থাকা পুরাতন এবং জরাজীর্ণ রেলপথ পুনর্বাসন এবং আধুনিকায়ন করা হবে। শত বছরের পুরাতন মেশিনারি সংস্কার করে তা অধিক উৎপাদনক্ষম এবং আধুনিক করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সর্বোপরি ওয়ার্শপ ট্রেনিং ইউনিটেরও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×