ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্যাতিতদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

সেই বিতর্কিত উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহর নামে ঢাবিতে ট্রাস্ট ফান্ড!

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সেই বিতর্কিত উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহর নামে ঢাবিতে ট্রাস্ট ফান্ড!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শামসুন নাহার হলে রাতের আঁধারে ছাত্রী নির্যাতনের পর আন্দোলনের মুখে পদত্যাগী সেই বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩ বছর আগের সেই আলোচিত বিএনপিপন্থী বিতর্কিত ব্যক্তির নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে। উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ২০০২ সালের ওই ঘটনায় নির্যাতিত ছাত্রী ও আন্দোলনকারীরা। অবশ্য এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের ইচ্ছা ও বিভাগ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এই ট্রাস্ট ফান্ড করা হয়েছে। যদিও তিনি (অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ) বিতর্কিত, তবুও বিভাগের শিক্ষকরা যেহেতু চেয়েছেন সেহেতু আমরা অনুমোদন দিয়েছি। অবৈধভাবে হলে অবস্থানকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বের করে দেয়াসহ কয়েকটি দাবিতে ২০০২ সালের জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন হলের সাধারণ ছাত্রীরা। আন্দোলনের মধ্যে ২৩ জুলাই রাতে হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে সাধারণ ছাত্রীদের অবস্থান চলাকালে সেখানে সম্মিলিত হামলা চালায় পুলিশের পুরুষ সদস্য ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। তখন পুলিশী নির্যাতনের বিষয়ে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহর বিরুদ্ধে। তার নির্দেশেই ছাত্রীদের উপর হামলা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে পরবর্তীতে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ব্যাপক আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলেন প্রগতিশীল শিক্ষকরাও। টানা আন্দোলনের এক সপ্তাহের মাথায় ওই বছরের ১ আগস্ট উপাচার্য পদ ছাড়তে বাধ্য হন অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। ওই ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ২৩ জুলাইকে ‘শামসুন নাহার হল নির্যাতন দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। নির্যাতনের ঘটনার ১৩ বছর পূর্তিতে এসে পদত্যাগী সেই উপাচার্যের নামেই গত ৫ আগস্ট ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১৫ আগস্ট ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্তায়’ বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের হাতে ছয় লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর ছেলে মিতুল আনোয়ার চৌধুরী। ট্রাস্ট ফান্ডের আয় থেকে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিএসএস (সম্মান) এবং মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত দুইজন শিক্ষার্থীকে ‘অধ্যাপক আনোয়াউল্লাহ চৌধুরী স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হবে। সেই সময়ে আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানববেন্দ্র দেব। এই ট্রাস্ট ফান্ড গঠন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমাদের জন্য চরম লজ্জার। বর্তমান শিক্ষার্থীদের জানা উচিত তখন কী ঘটেছিল এবং সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত তারা এই ফান্ডের অর্থ থেকে পদক নেবেন কি না? নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী মনিরা ইয়াসমিন বলেন, বিতর্কিত ব্যক্তির নামে এ ধরনের একটি ট্রাস্ট ফান্ড করা কোনভাবেই ঠিক হলো না। ইতিহাস তো কাউকে ক্ষমা করে না, তাকেও ক্ষমা করবে না। হাজী আওলাদ হোসেন ফাউন্ডেশন বৃত্তি ॥ কৃতিত্বপূর্ণ ফল করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ২২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হাজী আওলাদ হোসেন ফাউন্ডেশন বৃত্তি দেয়া হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, উন্নত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত হতে হবে। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তাদের। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান ও হাজী আওলাদ হোসেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাজী মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা।
×