ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখন থেকে সব অনলাইনে

স্বাস্থ্য সেক্টরে তদ্বির করে পোস্টিং, ডেপুটেশন ও ছুটি নেয়া বন্ধ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্বাস্থ্য সেক্টরে তদ্বির করে পোস্টিং, ডেপুটেশন ও ছুটি নেয়া বন্ধ হচ্ছে

নিখিল মানখিন ॥ স্বাস্থ্য সেক্টরে তদবির করে পোস্টিং, ডেপুটেশন, ছুটি নেয়া বন্ধ হচ্ছে। এখন থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনেই এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সম্পাদিত হবে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোস্টিং, ডেপুটেশন ও ছুটি এবং এ সংক্রান্ত সকল কাজে আবেদনপত্রের সঙ্গে এক কপি করে এইচআরএম (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) বায়োডাটা সংযুক্তি হিসেবে জমা প্রদান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেক্টরকে কেন্দ্র করে অসাধুচক্রের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক আদেশে এইচআরএম বায়োডাটা ছাড়া কোন প্রকার আবেদনপত্র ফরওয়ার্ড না করার নির্দেশনা জারি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জারিকৃত আদেশে বলা হয়,এইচআরএম বায়োডাটা ছাড়া কোন প্রকার আবেদনপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরে গ্রহণযোগ্য হবে না। এইচআরএম সফটওয়্যার থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এইচআরএম শাখার মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে কর্মরত সকল ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে মানবসম্পদ তথ্যভা-ার তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন-২০১৪ অনুসারে বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ডাক্তারসহ প্রথম শ্রেণীর ২৩ হাজার ৫৮০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ২০ হাজার ৪৩২ জন, তৃতীয় শ্রেণীর৫২ হাজার ৪৭৭ জন ও চতুর্থ শ্রেণীর ২৭ হাজার ৪২৭ জনসহ মোট ১ লাখ ২৩ হাজার ৯১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। সম্প্রতি আরেক দফা সারাদেশের স্বাস্থ্য জনবলের বিস্তারিত হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ২৫ আগস্ট ছিল তথ্য-উপাত্ত জমা দেয়ার শেষ দিন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, মানবসম্পদ তথ্যভা-ারে স্বাস্থ্য সেক্টরে সকল কর্মকতা ও কর্মচারীদের প্রত্যেকের সম্পর্কে ৪০Ñ৪৫ ধরনের তথ্য-উপাত্ত (নাম, ঠিকানা, বর্তমান কর্মস্থল, পদবী, যোগদানের তারিখ, চাকরিতে প্রবেশের তারিখ ইত্যাদি) রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করলেই মুহূর্তেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বিশেষায়িত চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কোথায় কতগুলো পদ শূন্য রয়েছে, কোন পর্যায়ের কতজন কতদিন সেখানে চাকরিরত রয়েছেন সে সম্পর্কে জানতে পারবেন বলে জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লক্ষাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য নির্ভরযোগ্য মানবসম্পদ তথ্যভা-ার না থাকায় পোস্টিং, ডেপুটেশন, ছুটিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক সমস্যা হতো। মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশ সম্বলিত আবেদনপত্র জমা দিয়ে ইচ্ছেমাফিক পোস্টিং, ডেপুটেশন, ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নিতো। ফলে একই কর্মস্থলে একাধিক ব্যক্তির পোস্টিং ও ডেপুটেশন দেয়া হতো। যখন তখন ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছুটি নিয়ে নিতেন। ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবার মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতো। সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকায় কোন এলাকাতে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের ছড়াছড়ি আবার কোথাও কোথাও ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা দেয়ার জনবল থাকতো না। নতুন এ প্রক্রিয়ায় অনলাইনে প্রয়োজন অনুসারে ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার অধিকতর উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করছেন। পাশাপাশি অসাধু চক্রেরপোস্টিং, ডেপুটেশন, ছুটি মঞ্জুর নিয়ে রমরমা অবৈধ ব্যবসাও বন্ধ হবে।
×