ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও বাস্তুচ্যুতির কারণ দূর করতে হবে’

শরণার্থী স্রোত ॥ চলবে বছরের পর বছর!

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শরণার্থী স্রোত ॥ চলবে বছরের পর বছর!

রবিবার দিনভর লোক বোঝাই ট্রেনের পর ট্রেন বুদাপেস্ট থেকে হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী হেজাইয়েশ্যালন শহরে পৌঁছালে যাত্রীরা নির্বিঘেœ গাড়ি বদল করে প্ল্যাটফর্মের বিপরীত দিকে রাখা এক অস্ট্রিয়ান ট্রেনে ওঠে। তারা ভিয়েনা ও এর বাইরে চলে যায়। হাঙ্গেরি দলে দলে আসা শরণার্থী ও অভিবাসীদের জার্মানি যাওয়ার অনুমতি দেয়ার প্রথম ৩৬ ঘণ্টায় ১৩ হাজার এভাবে জার্মানির উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু এটিই শেষ নয়। হাজার হাজার অভিবাসী প্রতিদিন বলকান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে হাঙ্গেরি অভিমুখে যাচ্ছে। চার হাজারেরও বেশি অভিবাসী নিয়ে দুটি গ্রীক ফেরি রবিবার এথেন্সে পৌঁছার কথা। এটি হবে দেশান্তরীদের বলকান অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করার পথে প্রথম বিরতি। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। জার্মানিতে অভিবাসীদের হর্ষধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হলেও এবং ক্লান্ত অভিবাসীরা স্বস্তিতে চোখের জল ফেললেও ইউরোপ কিভাবে অভিবাসী স্রোতের মোকাবেলা করবে তা অস্পষ্টই রয়ে গেছে। মানবতাবাদী সংগঠনগুলো নিশ্চিত করে বলছে যে, যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও বাস্তুচ্যুতির অন্যান্য কারণ প্রশমিত না করা হলে সম্ভবত মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে অভিবাসীদের আগমন ঘটতেই থাকবে। রবিবার পোপ ফ্রান্সিস শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে ক্যাথলিক প্যারিস ও ধর্মীয় কমিউনিটিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর জার্মানি ইউরোপের সর্বত্র অভিবাসীদের সমানভাবে ভাগ করে দিতে কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু কি করতে হবে সেই প্রশ্নে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গভীরভাবে মতবিভক্ত। এ বিতর্ক ২৮ জাতির ঐ ব্লকের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে এবং ব্লকের গর্বিত উন্মুক্ত সীমান্ত নীতির প্রতি হুমকির সৃষ্টি করেছে। কড়া ডানপন্থী রাজনীতিকরা এ অবধি বহুলাংশে নীরবই ছিলেন। কিন্তু তারা রবিবার ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতা মরিন লাস্পেনের অভিযোগের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য খুঁজে পান। তিনি অভিযোগ করেন, ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাওয়া এক সিরীয় শিশুর ব্যাপকভাবে প্রচারিত ছবিটি ইউরোপীয়দের নিজেদের ‘দোষী বলে বোধ’ করতে কাজে লাগানো হচ্ছে। রবিবার লুক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে কেবল আরও মতানৈক্যও প্রকাশ পায়। চলতি সপ্তাহে আরও আলোচনা হওয়ার কথা। জার্মানি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করেছে এবং চলতি বছর ৮ লাখ শরণার্থী গ্রহণ করার প্রত্যাশা করছে। দেশটি আরও শরণার্থী নিতে অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু এ আহ্বান বিশেষত পূর্ব ইউরোপের কাছ থেকে বাধার মুখে পড়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের চীফ অব স্টাফ পিটার এন্টমেইয়ার বলেন, আমরা কয়েক মাস ধরেই এ চ্যাঞ্জের মুখোমুখি হয়ে এসেছি। আমি শরণার্থীদের গ্রহণ করে চলেছি। কিন্তু আমরা চাই অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও এ কাজের জন্য প্রস্তুত থাকুক। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, অদুর ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে, সিরিয়া ও সঙ্কটগ্রস্ত অন্যান্য দেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যায় অভিবাসীরা ইউরোপে আসবে বলে মনে করার প্রতিটি কারণই রয়েছে। কেবল সিরিয়াতেই যুদ্ধের কারণে ১ কোটি ১০ লাখ লোক বাস্তুহারা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ লাখ দেশের অভ্যন্তরে এবং ৪০ লাখ বাইরে লেবানন, তুরস্ক ও জর্দানে অবস্থান করছে। ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী সিরীয়দের সংখ্যা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ার আগেই বছরের পর বছর ধরে ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ২০১১-এর এপ্রিল থেকে সেই সংখ্যা ৩ লাখ ৪৮ হাজারে পৌঁছে। সেই সময়ের এক মাস আগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকায় তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকেÑ ২০১১ সালে ছিল ৮ হাজার এবং তা বেড়ে ২০১৩ সালে ৫৬ হাজার এবং ২০১৪ সালে ১ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়ায়। জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে একথা বলা হয়। এগুলো শুধু আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা, শরণার্থী মার্যাদা প্রার্থীদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
×