ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ত্রাণের জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ত্রাণের জন্য হাহাকার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ উজানের ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট। ত্রাণের জন্য হাহাকার উঠেছে। স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর : কুড়িগ্রামে পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল সোমবার সকাল থেকে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কট। কিন্তু সরকার কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল। জেলার ৯টি উপজেলার ৬৫টি ইউনিয়নের চার শ’ পাঁচটি চর-দ্বীপ চর এবং নদীর তীরবর্তী প্লাবিত হওয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে আরও নতুন নতুন এলাকা। রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নে জিঞ্জিরাম নদীর তীব্র স্রোতে লালকুড়া রাবারড্যাম রোডের প্রায় ৩০ মিটার ভেঙ্গে গেছে। একই ইউনিয়নের ধনারচর গ্রামের বেড়ি বাঁধের আট শ’ ফিট ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া লালকুড়া থেকে বকবান্ধা ব্যাপারীপাড়া সড়কে তিন কিঃমিঃ রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনে ইউনিয়নে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। যাদুরচর ইউনিয়নের পাহাড়তলী, যাদুরচর, কোমরডাঙ্গি, ঝুনারচর, খেয়ারচর মৌজার ৫৩টি গ্রামের মধ্যে ৪৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কাজ ও চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে বন্যাকবলিত মানুুষরা। অনেকেই নিজের বাড়িতে মাচার ওপর অবস্থান নিয়েছে। শুকনো খাবার, ম্যাচ ও মোমবাতিসহ দরকারি সরঞ্জাম ফুরিয়ে গেছে। হাঁস-মুরগি ছাগল ভেড়া মরে যাচ্ছে। পানিবন্দী মানুষের বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সঙ্কট। ভেঙে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়ক। কোন কোন সড়কে ৪-৫ ফুট পানি। ফলে নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোন উপায় নেই। পদ্মায় বিপদসীমার ওপরে পানি প্রবল বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়ার কাছে পদ্মার পানি ২ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ৪১ সে.মি. ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ তথ্য স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রের। দৌলতদিয়া বিআইডাব্লুটিসি কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির ফলে প্রচ- স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ঘাটটিতে বড় কোন ফেরি ভিড়তে পারছে না। তবে অন্য তিনটি ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন ওঠানামা এবং ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গাইবান্ধায় বাঁধে মানবেতর জীবন ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ এখন চরম আকার ধারণ করছে। সদর উপজেলার কুপতলা, ঘাগোয়া, গিদারি ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় পানিবন্দী লোকজন বাধ্য হয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে ঘাঘট নদীর পানিতে লক্ষ্মীপুর-গাইবান্ধা সড়কটি তলিয়ে গেছে। সোমবার ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩ সে.মি. হ্রাস পেয়ে এখন বিপদসীমার ৫৪ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বিপদসীমার ৬০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে করতোয়া ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার সামান্য নিচে রয়েছে। সরকারী ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। এ পর্যন্ত কোন বেসরকারী সংগঠন বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেনি। এক টানা দু’সপ্তাহ অব্যাহত থাকায় কর্মহীন শ্রমজীবী পরিবারগুলো খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। গো-চারণ ভূমিগুলো জলমগ্ন থাকায় গো-খাদ্যের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। নওগাঁয় ভেসে গেছে মাছ এবার বন্যায় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় এক হাজার পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হওয়ায় মৎস্য চাষীদের এখন মাথায় হাত উঠেছে। বন্যা পরিস্থিতির দফায় দফায় অবনতি হওয়ায় এখনও তিন শতাধিক পুকুর হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোন সময় পুকুরের পাড় ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট ভোরে রাণীনগর-আত্রাই সড়কের পূর্ব মিরাপুর নামক স্থানে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় রাণীনগর উপজেলায় প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করলে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ফলে গোনা ইউনিয়নে ১৮৬টি, কাশিমপুরে ৫৪টি, মিরাটে ৭৪টি, রাণীনগর সদরে ৩৭টি, বড়গাছায় ৪৫টিসহ ৫ ইউনিয়নে প্রায় ৬ শতাধিক পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ২২৮.১৪ মেট্রিক টন মাছ ভেসে যায়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ তিন কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। বোয়ালমারীতে খেলার মাঠ এখন দীঘি যে মাঠে কিশোর তরুণরা ক্রিকেট ফুটবল নিয়ে ছোটাছুটির কথা সে মাঠে হাঁটু পানিতে তারা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছে। ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসদরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র খেলার মাঠটি পানিতে ডুবে বিশাল দীঘিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বৃষ্টির মৌসুমে অধিকাংশ সময় হাঁটু পানিতে ডুবে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাঠের পাশে পানি বেরিয়ে যাওয়ার ছোট ড্রেন থাকলেও ওই জমি ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে সেখানে ঘর এবং সিমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভাসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের স্কুল-কলেজের অর্ধশতাধিক ছাত্র-যুবক প্রতিদিন ফুটবল ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় মত্ত থাকত। অথচ বর্তমানে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠের এ বেহাল অবস্থা। স্থানীয় ক্রীড়ানুরাগী ব্যক্তিরা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেদের খেলার মাঠের এ অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
×