ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষকের অবস্থা ও মর্যাদা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শিক্ষকের অবস্থা ও মর্যাদা

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তবে সেটার বীজ রোপণকারী, অঙ্কুরোদ্গমে সহায়ক ও পরিচর্যাকারী তথা একই সঙ্গে পিতা-মাতার পরে দায়িত্ব যিনি পালন করেন তিনি শিক্ষক। তাঁদের অবদানের বিষয়টি কখনও পরিমাপযোগ্য নয়। যে দেশে শিক্ষকের মর্যাদা যত বেশি সমুন্নত সেই দেশ বা জাতি তত বেশি সুসভ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ দেশে শিক্ষকরা কতটা মর্যাদা, সম্মান আর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তা প্রশ্নাতীত নয়। এ অবস্থা কারও কাম্য তো নয়ই বরং অনভিপ্রেত। সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে শিক্ষা জড়িয়ে আছে। শিক্ষাই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শিক্ষক শুধু শিক্ষাকে বহনই করেন না, সমৃদ্ধও করেন। সমাজকে দেখান প্রগতির পথ। যে কারণে শিক্ষক সব দেশে, সব সমাজে শ্রদ্ধাশীল, সম্মানীয়। তাদের ত্যাগ, আন্তরিকতা, অভিভাবকত্ব একমাত্র পিতা-মাতার সঙ্গেই তুলনীয়। একটা শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্যন্ত শিক্ষক একই সঙ্গে পরম মমতায় শিক্ষার আলো তার অন্তর জগতে প্রবেশ করিয়ে অন্ধকার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পথ দেখান। পিতা-মাতার মতোই চরিত্র ও সুকুমারবৃত্তির বিকাশে করেন সহায়তা। শিক্ষার্থী যখন দেশ, জাতি ও সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন সেসব ক্ষেত্রেও শিক্ষকের অবদান থাকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। শিক্ষকদের এ কৃতিত্বের কথা বলে শেষ করার মতো নয়। শিক্ষকের মর্যাদা কতটা উচ্চতায় তার অনেক দৃষ্টান্ত ইতিহাসে রয়েছে। এই আধুনিক সময়ে যখন সভ্যতার উৎকর্ষ সবাই দাবি করছি তখন আলোর দিশারী শিক্ষকসমাজ কতটা তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেনÑ এমন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে সমাজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিত্য চাহিদা ও দ্রব্যমূল্য বাড়লেও শিক্ষকদের বেতন আশানুরূপ নয়। অন্য পেশাজীবীদের আয় বাড়লেও শিক্ষকদের আয় সেভাবে বাড়েনি তুলনামূলকভাবে। এ চিত্র হতাশার উদ্রেক করে বৈকি। প্রাথমিক শিক্ষকদের বলা হয় শিক্ষার প্রথম বীজ বপনকারী। তাদের পরিচর্যায় শিশু শিক্ষার্থী হাঁটি হাঁটি পায়ে বেড়ে ওঠার পথ চেনে। সরকারী বা বেসরকারী শিক্ষক যা-ই হোন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের দাবিতে তাদের রাজপথে নামতে হয়েছে। হাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও শিক্ষকদের বেতন কাঠামো, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখন যথাযথ ও উল্লেখ করার মতো নয়। শিক্ষকদের জীবনযাপনের জন্য আর্থিক অবস্থাও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনকারী সরকারী অন্য কর্মকর্তারা যে সুযোগ ও সম্মান পান শিক্ষকরা কেন পাবেন না- এ প্রশ্ন তোলাটা বোধ করি অযৌক্তিক নয়। উন্নত বিশ্বে শিক্ষকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্মান অনেক বেশি, যা অনুসরণযোগ্য। শিক্ষকদের আর্থিক দুরবস্থার অবসান না হলে জাতির শিক্ষার মান ও ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রে যত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে ততই সবার জন্য মঙ্গল।
×