ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহকারী ভাণ্ডার কর্মকর্তা সাসপেন্ড

যশোরে বিএডিসির সার নামমাত্র মূল্যে ক্রয়

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

যশোরে বিএডিসির সার  নামমাত্র মূল্যে ক্রয়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) যশোরের চাঁচড়া রায়পাড়ার গুদাম থেকে আত্মসাত ৭৬ লাখ টাকার ৩২০ মেট্রিক টন এমওপি সার চোরাইভাবে ক্রয় করে নওয়াপাড়ার দুটি সার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তথ্য মিলেছে, সাবেক উপ সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন ও সহকারী ভাণ্ডার কর্মকর্তা আজগর আলীর কাছ থেকে ওই সার নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করেন নওয়াপাড়ার মাহিন ট্রেডিংয়ের মালিক আব্দুল মতিন ও টিএস ট্রেডিংয়ের রাশেদ মাহমুদ। এদিকে ওই সার আত্মসাতের ঘটনায় বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার মণ্ডল সহকারী ভাণ্ডার কর্মকর্তা আজগর আলীর বিরুদ্ধে সোমবার রাতে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। এর আগে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। ২০১১ সালে ২১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএডিসি যশোর শহরের রায়পাড়ার গোডাউন থেকে ৩২০ মেট্রিক টন এমওপি সার গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করা হয়। সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলী ও নেপথ্যে থাকা কয়েক অফিসার যোগসাজশে এ অনিয়ম চালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে চলতি বছরের আগস্ট মাসে। সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর অনৈতিকতা ধরা পড়লে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান। এরই মধ্যে গোডাউনে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে যোগ দেন রতন কুমার ম-ল। সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন নুরুজ্জামান। তারাও কয়েক মাস ম্যানেজ হয়ে চলেন। তবে তাদের ম্যানেজ প্রক্রিয়ার সময় ব্যাপক অসঙ্গতি ও গুদাম স্টকের সঙ্গে অফিস খাতা কলমে বিশাল ব্যবধান থাকায় মোটা অঙ্কের সরকারী অর্থের সার চুরির ঘাপলা ফাঁস হয়ে পড়ে। ধরা পড়ে যায় রাশিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি করা লাখ লাখ টাকার মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার চুরি কেলেংকারির ঘটনা।গত জুলাই মাসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত চাক্ষুস যাচাই কমিটি গুদাম ভেরিফিকেশন করেন। ওই টিম বিএডিসির গোডাউনে দিন শ’ ২০ মেট্রিক টন এমওপি সারের হদিস পায়নি। ওই রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর অভিযুক্ত সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর সাময়িক বহিষ্কার আদেশ আসে বিএডিসির সার ব্যবস্থাপনা মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার নির্দেশনাও আসে। ওই নির্দেশে ৭ সেপ্টেম্বর বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার ম-ল সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা আজগর আলীর বিরুদ্ধে ওই সার আত্মসাতের ঘটনায় মামলা করেন। এদিকে বিশাল টাকার সরকারী সার চুরি কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে এসেছে আরও তথ্য। বিএডিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু চাবি আজগর আলীর কাছে থাকে, তিনিই সারের হিসাব রাখেন। কাজেই খাতা কলমে চুরির সব দোষ তার। তবে আসল সার চোর ধরার ব্যাপারে আরও একটি তদন্ত কমিটি হওয়া জরুরী। তথ্য এসেছে এর সঙ্গে সাবেক উপ সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন সরাসরি জড়িত ছিলেন। সাবেক উপ সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল মামুন ও সাসপেন্ড এবং নিয়মিত মামলার আসামি সহকারী ভা-ার কর্মকর্তা ২০১৩ সালে খুলনা থেকে আসা সার নওয়াপাড়ার দু’ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। নওয়াপাড়ার মাহিন ট্রেডিংয়ের আব্দুল মতিন ও টিএস টেডিংয়ের রাশেদ মাহমুদ ওই সার ক্রয় করেন। এদিকে আজগর আলী জানিয়েছেন সাসপেন্ড ও মামলা তার উপর জবরদস্তিস্বরূপ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ফাঁসলে সাবেক উপ সহকারী পরিচারলক ফাহাদ আল মামুন ফাঁসবেন না কেন? তার উপরের অফিসাররা, যারা তার বিরুদ্ধে উচ্চস্বরে বড় বড় কথা বলছেন তারা ট্রাকপ্রতি চার থেকে ছয় হাজার টাকা আদায় করেন সার ডিলারদের কাছ থেকে। এখন তারা কথা বলছেন না কেন?
×