ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তা জরুরী

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তা জরুরী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সব জায়গায়ই ত্রাণের জন্য হাহাকার উঠেছে। অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে জনপ্রতিনিধিরা। স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর: কুড়িগ্রামে ত্রাণ নিয়ে বিপাকে জনপ্রতিনিধিরা কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জিঞ্জিরাম নদীর প্রবল স্রোতে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নটানপাড়া এলাকার তুড়া সড়ক ও বন্দবের ইউনিয়নের খঞ্জনমারা গ্রামের রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়কের প্রায় ৫০ মিটার ভেঙ্গে নতুন করে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের বাগুয়া, কাউনিয়ারচর, কাজাইকাটা, টাপুরচর মৌজার ৩০টি গ্রামের ৪৫ হাজার মানুষ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এখনও পানিবন্দী জীবন কাটাচ্ছে। প্রচ- বন্যার মধ্যে এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় ধনতলা গ্রামের হুকুম মোল্লার স্ত্রী আমিরুন বিবি (৪৬) মারা গেছে। এখানকার হাজিরহাট বিজি স্কুলে দাঁতভাঙ্গা কলেজে তিনশ’ দাঁতভাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ে একশ’ এবং নওদা পাড়া প্রাইমারী স্কুুলে দুইশ’ বন্যাকবলিত মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গাইবান্ধায় বাঁধ ঘাঘটে বিলীন গাইবান্ধা ॥ ঘাঘট নদীর বন্যার পানির তোড়ে গোদারহাট সংলগ্ন গাইবান্ধা শহর রক্ষা সোনাইল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৮০ ফুট এলাকা মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবে ভেঙে যায়। এতে গাইবান্ধা পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার খোলাহাটি, বোয়ালী, বাদিয়াখালী, রামচন্দ্রপুর, ফুলছড়ির উদাখালী, কঞ্চিপাড়া গজারিয়া এবং উড়িয়া ইউনিয়নের ৩২টি গ্রাম ব্যাপকভাবে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ওইসব এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে এবং মাছের খামারের পুকুরগুলো উপচে চাষকৃত সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এই অসময়ে বাঁধ ভাঙা পানিতে আমন ধান ও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় আর কোন চাষের সুযোগ না থাকায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে। মাছ চাষিরাও পড়েছে চরম বিপাকে। বন্যাকবলিত অসহায় মানুষ ধান, চাল বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল নিয়ে দ্রুত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। শেরপুর-জামালপুর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন শেরপুর ॥ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে শেরপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়া, বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি, রৌহা, লছমনপুর ও বলাইরচর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ। প্রতিদিনই ভাঙছে ঘরবাড়ি আর প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। ওইসব পানিবন্দী মানুষদের নৌকা এবং কলার ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোনো মাধ্যম নেই। অন্যদিকে অব্যাহত রয়েছে নদী ভাঙ্গনও। নদী তীরবর্তী রাস্তাঘাট ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার আমন ধান ও সবজী বাগান তলিয়ে গেছে। এদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে শেরপুর-জামালপুর সড়কের ডাইভারশনের ওপর দিয়ে প্রায় দেড় ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল করলেও প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, অটো সিএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের হালকা যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সহসাই সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। টাঙ্গাইলে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় প্রবল পানির কারণে সড়ক ভেঙ্গে পাঁচটি সরকারী পুকুর থেকে অর্ধকোটির টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের মাছ ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, গোবিন্দাসী ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-গোবিন্দাসী সড়কের পাশে ইজারা নিয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা ২৬ একর জায়গায় পাঁচটি পুকুরে মাছ ছাড়ে। সোমবার রাতে পানির প্রবল চাপে কষ্টাপাড়া এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় পাঁচটি পুকুর তলিয়ে গেছে। এছাড়া সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় ৬টি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে প্লাবিত হয়ে পুকুরের মাছ খাল, ডোবা-নালায়, ধান ক্ষেতসহ পার্শ্ববর্তী পুকুরে চলে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে ৫০ লক্ষাধিক টাকার মাছ।
×