ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনসচেতনতা বাড়াতে বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে নিয়মিত মাইকিং

অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেফতার ১৯

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেফতার ১৯

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা বেড়ে গেছে। তৎপরতা রোধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ নেতা ও এক মহিলাসহ অজ্ঞানপার্টির ১৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানেও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে। সোমবার রাতে ঢাকার পল্টন, সায়েদাবাদ ও রমনায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, মোঃ পলাশ মোল্লা, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ শাহিন, মোঃ ফারুক চৌধুরী ওরফে মাসুম, মোঃ সোহেল, মোঃ আব্দুর রহমান শেখ, মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ মানিক হোসেন, মোঃ ওমর ফারুক, মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ জয়নাল আবেদীন ওরফে বাবুল খন্দকার, মোঃ আব্বাস আলী, মোঃ শহর আলী, মোঃ আব্দুল মতিন ওরফে মতি, মোঃ সুলতান শেখ, মোঃ আব্দুল খালেক, মাহিনুর ও রাশেদুল ইসলাম ওরফে রিপন। তাদের কাছ থেকে চেতনানাশক ট্যাবলেট ও চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত ৭ কৌটা হালুয়া উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, ঈদ সামনে রেখে অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা বেড়ে গেছে। অজ্ঞানপার্টির তৎপরতারোধে অভিযান চলছে। অজ্ঞান করার ওষুধ সরবরাহকারী ফার্মেসিসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া রাজধানীর বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালসহ জনসমাগম বেশি এমন জায়গাগুলোতে জনসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। অপরিচিত কারও দেয়া বা ফুটপাথের দোকান থেকে খাবার না কিনে খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অজ্ঞানপার্টির কবলে পড়ে অনেক সময় অনেকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এছাড়া যারা বেঁচে যান তারা নানা জটিল শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। ইতোমধ্যেই জনসমাগমস্থলগুলোতে সচেতনতামূলক পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার টানানো হয়েছে। পাবলিক যানবাহনে কিভাবে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা কাজ করে এ সংক্রান্ত একটি গান তৈরি করা হয়েছে। যেটি বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে বাজানোর ব্যবস্থা থাকছে। আর টার্মিনালগুলোতে নিয়মিত এ সংক্রান্ত প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অজ্ঞানপার্টি একা একা যাতায়াতকারী যাত্রীকে টার্গেট করে থাকে। যাত্রীর বেশভুষা দেখে যাত্রীর কাছে মূল্যবান সামগ্রী থাকতে পারে, এমন আন্দাজ করে নেয়। এরপর তাকে কৌশলে খাবার, বিড়ি-সিগারেট বা কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেয়। যাত্রী অচেতন হয়ে পড়লে যাত্রীর সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে দ্রুত নেমে যায়। গ্রেফতারকৃতরা মহাখালী থেকে টঙ্গী-গাজীপুর- ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যাতায়াতকারী, গাবতলী থেকে সাভার-আশুলিয়া-চান্দুরা- মানিকগঞ্জ যাতায়াতকারী ও সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া-চিটাগাং রোড-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যাতায়াতকারীদের টার্গেট করত। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেরিওয়ালা, অচেনা সহযাত্রী বা হঠাৎ করে বন্ধু বেশে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির সদস্যরা আবির্ভূত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ দোকানের উন্মুক্ত খাবার, ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকোলেট, নানা ধরনের পানীয়। এসব পানীয়তে মানুষ অজ্ঞান করার বিভিন্ন দ্রব্য মেশানো হয়। এর মধ্যে এটিভ্যান নামক ট্যাবলেটটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অজ্ঞান করার ওষুধ মিশ্রিত খাবার বা পানীয় গ্রহণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেবনকারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা দামি মালামাল টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এমনই ঘটনা ঘটেছিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ আর খন্দকারের বনানীর বাসায়। সবাইকে অচেতন করে বাড়ি থেকে ৩০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, দেড় লাখ টাকা ও দামি মালামালসহ প্রায় এগারো লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় গৃহকর্মী আমেনা বেগম। পরবর্তীতে ওই গৃহকর্মী ও স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়। অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নিজস্ব অচেতনকারী গৃহকর্মী সিন্ডিকেটও রয়েছে। তারা বড়লোকের বাসায় কাজের কথা বলে ঢুকে। এরপর কৌশলে অচেতন করে মূল্যবান সামগ্রী ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। ডিবি সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজধানী থেকেই ১০৯ জন অজ্ঞানপার্টির সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। গত বছর অজ্ঞানপার্টির কবলে পড়ে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অজ্ঞানপার্টি মূলত একটি বিশাল সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। এ চক্রে চোর, ডাকাত, খুনী ও অনেক অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জড়িত। বাসা বাড়িতে বিশেষ করে ঈদের আগে কাজ করার নাম করে চা বা কফি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে দেয় গৃহকর্মীরা। এদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। বাড়ির সবাই অচেতন হয়ে পড়লে মালামাল লুটে নেয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, পূর্ব ও মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মাহবুবুর রহমান, মাশরুকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান ও মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
×