ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। বাঙালীর সশস্ত্র সংগ্রামে প্রেরণা যোগাতে এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রচারিত হতো শৃঙ্খল ভাঙ্গার গান, রণাঙ্গনের সংবাদ, মুক্তিযুদ্ধের সেøাগান, কথিকাসহ উদ্দীপনামূলক অনুষ্ঠান। জাতিকে উদ্দীপ্ত করা সেসব পরিবেশনায় মঙ্গলবার মুখরিত হলো শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন। স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গাইলেন ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ কিংবা ‘কারার ওই লৌহ কপাট’সহ একাত্তরের চেতনাদায়ী গান। পাঠ করা হলো মুক্তিযুদ্ধের সেøাগান ও একাত্তরের ছাব্বিশে মার্চ প্রচারিত নির্বাচিত সংবাদ। সেই সঙ্গে পাঠ করা হয় বেতারের প্রথম কথিকা। আর এভাবেই বাণী ও সুরের সম্মিলিত আয়োজনে পালিত হলো স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সাজানো হয় অনুষ্ঠান। বৈকালিক এ আয়োজনের শুরুতেই স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রয়াত শব্দসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম। স্বাগত বক্তব্য দেন কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনোয়ার হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামালী লোহানী। বক্তাদের আলোচনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনার নানা প্রতিকূলতার কথা উচ্চারিত হয়। অতিথিদের হাতে তুলে দেয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতারের মুক্তির গানের মূল কপির সিডি ও গানের সঙ্কলন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এত দিন আমার ধারণা ছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালনায় আমি হয়ত ২০ শতাংশ সফল হয়েছি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, আমি ৫ শতাংশেরও কম সফল হয়েছি। শুধু সশস্ত্র যোদ্ধারাই নন, মুজিবনগর সরকারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যারা জড়িত তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযোদ্ধা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, আমরা প্রেরণা পেতাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের শিক্ষা না থাকলেও তাদের দীক্ষা ছিল। বঙ্গবন্ধুর কথায় দীক্ষা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসের উৎস ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। বেতারে প্রচারিত বজ্রকণ্ঠ শুনে তারা যুদ্ধের অনুপ্রেরণা পেতেন। প্রথম পর্বের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে পরিবেশিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রচারিত নির্বাচিত অনুষ্ঠানমালা। প্রথমেই মঞ্চে আসেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীরা। নতুন দিনের স্বপ্নের বার্তা দিয়ে অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায়Ñ পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে/রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল/জোয়ার এসেছে জনসমুদ্রে...। এর পর শত্রুর শৃঙ্খল ভেঙ্গে দেয়ার প্রত্যয়ে শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয়Ñ কারার ওই লৌহ কপাট/ ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট/রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী/ওরে ও তরুণ ঈশান/বাজা তোর প্রলয় বিষাণ...। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদ রচিত স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত প্রথম কথিকাটি পড়ে শোনান শব্দসৈনিক আশফাকুর রহমান খান। ‘পাকহানাদার পশুরা বাংলাদেশে মানুষ হত্যা করছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি’Ñমুক্তিযুদ্ধের এমন নানা স্লোগান পাঠ করেন উপস্থাপক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী মাজহারুল ইসলাম। একাত্তরের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত খবরের নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন আবু নওশের। সাংস্কৃতিক পর্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা ছাড়াও স্বাধীনতার গান পরিবেশন করে ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, পূর্বিতা সংস্কৃতি মঞ্চ। ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করেছে কে’ ও ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’। সম্মেলক কণ্ঠে উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা’ ও ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’। ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ ও ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ গান দুটি পরিবেশন করেন পূর্বিতা সংস্কৃতি মঞ্চের শিল্পীরা। গঙ্গা-যমুনা উৎসবে মঞ্চস্থ আদিরাজা ও ভঙ্গবঙ্গ ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা আঙিনায় চলছে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব। সংস্কৃতি ও নাট্যপ্রেমীদের আগমনে জমে ওঠা নয় দিনব্যাপী এ উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয় ভারতের ঋত্ত্বিক নাট্যদলের প্রযোজনা আদিরাজা। আর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় আরণ্যক নাট্যদলের নাটক ভঙ্গবঙ্গ। জগদীশ চন্দ্র মাথুরের রচনা থেকে আদিরাজা নাটকটির অনুবাদ করেছেন প্রতিভা অগ্রবাল ও শমীক বন্দোপাধ্যায়। বিপ্লব দে নিদের্শিত প্রযোজনাটিতে অভিনয় করেছেন তথাগত সান্যাল, রাজেশ দেব, জয়দেব তপাদার, তন্ময় সান্যাল, দিলীপ দাস, তরুণ সরকার, কেতাবুল সেখ, অশোক মিত্র, মোহিত বন্ধু অধিকারী, রাখী তপাদার, বিপ্লব দে, চন্দ্র, মহুয়া চক্রবর্তী, দেশপ্রিয় গোস্বামী, জলি সরকার, শিপ্রা সেন সুমন সরকার প্রমুখ। মামুনুর রশীদ রচিত ভঙ্গবঙ্গ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়েজ জহির। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফ হুসাইন আপেল, আমানুল হক হেলাল, রুবলী চৌধুরী, তমালিকা কর্মকার, সাজ্জাদ সাজু, ফিরোজ মামুন, কামরুল হাসান, সুরভী রায়, লায়লা বিলকিস ছবি, শেখ মিলন প্রমুখ। উৎসবের পঞ্চম দিন বিকেলে নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে উন্মুক্ত মঞ্চে ছিল পথনাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্য। এদিন সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায় পরিবেশন করে পথনাটক ‘দু’য়ানির বাজার’। আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা। সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী। নৃত্য পরিবেশন করে জিনিয়া নৃত্যকলা একাডেমি। উৎসবের ষষ্ঠদিন আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ভারতের অনীক নাট্যদল পরিবেশন করবে ‘অশোকানন্দ’। একই সময়ে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে পদাতিক নাট্য সংসদের প্রযোজনা ‘পোড়ামাটি’। এর আগে বিকেল পাঁচটায় উৎসবের উন্মুক্ত মঞ্চে বাঙলা নাট্যদল পরিবেশন করবে পথনাটক ‘ঘুঘু মুন্সি ও অন্যান্য’। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করবে কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যজন।
×