ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতন ও সম্পদ দখল রোধে সংখ্যালঘু সেল গঠন ১৪ দলের

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নির্যাতন ও সম্পদ দখল রোধে সংখ্যালঘু সেল গঠন ১৪ দলের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন এবং তাদের বাড়িঘর ও সম্পদ দখলের ঘটনা প্রতিরোধে ‘সংখ্যালঘু সেল’ গঠন করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। এই সেল সারাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিকারের জন্য সরকার ও প্রশাসনের নজরে আনবে। বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠকে এই সংখ্যালঘু সেল গঠন করা হয়। এ সময় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ১৪ দল নেতারা বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলা-নির্যাতন মেনে নেয়া যাবে না। এই প্রশ্নে কোন আপোসও করা যাবে না। ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে গঠিত এই সংখ্যালঘু সেলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এনামুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য নূরুর রহমান সেলিম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ জোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা সদস্য থাকবেন। সদস্য সচিব থাকবেন ১৪ দলের দফতর সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি। বৈঠক শেষে প্রেসব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা ১৪ দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে একটি ‘সেল’ গঠন করার দাবি জানিয়েছেন। এ কারণে ১৪ দলের পক্ষে সংখ্যালঘু সেল গঠন করা হয়েছে। যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে এই সেল কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নাই। ১৪ দলও সেটাই মনে করে। জাসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাম্প্রতিক বাকযুদ্ধসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রেমে মাঝে মাঝে ঘাটতি হয়। আমাদের দুই দলের সম্পর্ক ভালই আছে। আপনারা কেন এত খোঁচাচ্ছেন? আজও জাসদের বড় দুই নেতা মিটিংয়ে এসেছেন। আমার পাশে বসেছেন। আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।’ বৈঠকে দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলো পরিদর্শন ও ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনায় ১৪ দলের পক্ষে দুইটি টিম গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে উত্তরাঞ্চলে এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এসব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। এ সময় ১৪ দল নেতারা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ত্রাণ তৎপরতায় সরকারী পদক্ষেপে সন্তোষ জানান। বৈঠকে আমেরিকাভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা আইআরআইয়ের জরিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হওয়াতেই এমন অর্জন হয়েছে মন্তব্য করে নেতারা বলেন, এই কৃতিত্ব দেশের জনগণেরও। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতায় এই সাফল্য লাভ সম্ভব হয়েছে। তবে জরিপ বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, এদের জরিপের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরা আমেরিকা সরকারের মত নিয়ে জরিপ করে। আমেরিকার নীতির কারণে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলছে। অবশ্য ন্যাপের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, শত্রুকে (আমেরিকা) আরও শত্রু করে তোলার প্রয়োজন নেই। যেটা ভাল সেটাকে গ্রহণ করতে হবে। বৈঠকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন স্কেল বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, পে কমিশন বাস্তবায়ন হয়েছে ভাল কথা। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন ও তাদের সমস্যা নিরসনে সরকারের পদক্ষেপ কামনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শিক্ষকদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। তারা সম্মানীয় এবং শ্রদ্ধেয়। তাদের আহ্বান জানাব তারা যেন কর্মবিরতি করে শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত না করেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সমস্যা সমাধান করে। আইআরআইয়ের জরিপে দ্রুত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ১৪ দলের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। সরকারের মতো ১৪ দলও মনে করে, সংবিধান অনুসারে নির্ধারিত সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। এটি আমাদের সিদ্ধান্তও আছে। জরিপে তাদের কী বক্তব্য, সেটা আমাদের দেখার দরকার নেই। ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এনামুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, এসএম কামাল হোসেন, জাসদের শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, গণতন্ত্রী পার্টির নূরুর রহমান সেলিম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসীত বরণ রায়, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, জাতীয় পার্টি-জেপির এজাজ আহমেদ মুক্তা, সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
×