ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবসরের মিছিলে ব্র্যাড হ্যাডিন

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অবসরের মিছিলে ব্র্যাড হ্যাডিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে অবসরের মিছিলে এবার যোগ দিলেন ব্র্যাড হ্যাডিন। স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারকে সময় দেয়ার কথা বলে সব ধরনের ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষাণা দিয়েছেন ৩৮ ছুঁই ছুঁই এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। গত বছর অক্টোবরে টি২০ ছাড়া হ্যাডিন মার্চে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই ওয়ানডে থেকে অবসর নেন। ছিলেন কেবল টেস্টে। এবার সাদা পোশাক তুলে রেখে সব ধরনের ক্রিকেটকেই ‘বিদায়’ বললেন। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে অবসর নিলেন হ্যাডিন! এ্যাশেজ হারের ব্যর্থতা সঙ্গী করে সরে দাঁড়ান বড় তারকা মাইকেল ক্লার্ক, সঙ্গী হন ওপেনার ক্রিস রজার্স। দু’দিন আগে আচমকা টেস্ট ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। আর ইনজুরির জন্য এ্যাশেজ শুরুর আগেই ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানেন পেসার রায়ান হ্যারিস! ‘আমি বিবেকবর্জিত নই। আর দশজন অস্ট্রেলিয়ান বাবার মতো আমারও সন্তানদের ওপর মায়া রয়েছে, আছে পরিবারের প্রতি ভালবাসা। স্ত্রী-সন্তানকে সময় দিতেই ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত।’ ঘোষণা দিয়ে বলেন হ্যাডিন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘লর্ডস টেস্টের পরই আমি এটা অনুভব করেছি। আরও কিছুদিন হয়ত খেলা যেত, কিন্তু সত্যি বলতে, এ্যাশেজের পর আমার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে। এই অবস্থায় অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়াটা তাই সহজ হয়েছে।’ লর্ডস টেস্টের পরই আমি অনুভব করছি...Ñ হ্যাডিনের এই বক্তব্যের তাৎপর্য অনেক। যারা ক্রিকেটের খোঁজ রাখেন তারা ভাল করেই জানেন। এ্যাশেজে অভিজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারকে নিয়ে কি নাটকই না হয়েছে। কার্ডিফের প্রথম টেস্টেও অবধারিত সদস্য হিসেবে একাদশে ছিলেন। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্ত সন্তানের পাশে থাকতে লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্ট না খেলে দেশে ফিরে যান তিনি। লর্ডসে অভিষেকে ৪৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান পিটার নেভিল। ওই ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় অসিরা। তার আগে হেরে যাওয়া প্রথম টেস্টে ২২ ও ৭ রান করেছিলেন হ্যাডিন। এরপর আর দলে জায়গা হয়নি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই উইকেটরক্ষকের। অথচ এক সময় ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার নামটিই উচ্চারিত হতো। সুতরাং বিশ্লেষকদের ধারণা, পারিবারিক কারণকে সামনে টেনে আনলেও অবসরের জন্য এই বিষয়গুলোও বড় ভূমিকা রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে হ্যাডিন যেন এক পার্শ্ব-নায়ক। তুমুল প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেকের জন্য ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। সে সময় এ্যাডাম গিলক্রিস্টের অবসরের পরই প্রথম টেস্ট দলে ডাক পান তিনি। এরপর সাদা পোশাকে হয়ে উঠেছেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাত বছরে খেলেছেন ৬৬ টেস্ট। উইকেটরক্ষক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হ্যাডিনের চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন ইয়ান হিলি (১১৯), এ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৯৬) ও রডনি মার্শ (৯৬)। ২৭০ ডিসমিসাল (ক্যাচ ২৬২, স্ট্যাম্পিং ৮) নিয়ে তৃতীয় স্থানে হ্যাডিন। এ তলিকায় ওপরে গিলক্রিস্ট (৪১৬), হিলি (৩৯৫) ও মার্শ (৩৫৫)। টেস্টে হ্যাডিনের ব্যাটিং গড় ৩২.৯৯। ৪ সেঞ্চুরি ও ১৮ হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে করেছেন ৩২৬৬ রান। সর্বোচ্চ ১৬৯। ২০০১ সালে অভিষেকের পর হ্যাডিন খেলেছেন ১২৬ ওয়ানডে। ঘরের মাটিতে এবারে বিশ্বকাপ জয়ের পর পরই রঙ্গিন পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। ২০০৬-১৪ পর্যন্ত খেলেছেন ৩৪ টি২০ ম্যাচ। নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক এই অধিনায়ক কেবল জাতীয় দলই নয়, দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিলেন অত্যন্ত সফল। খেলেছেন ৯৪ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। গত দুই বছর টেস্টে ক্লার্কের সহ-অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন হ্যাডিন। জাতীয় দল ছাড়লেও ঘরোয়া ক্রিকেটে সিডনি সিক্সার্সের হয়ে শুধু টি২০ ফরমেটে খেলা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। হ্যাডিনের প্রশংসা করে বর্তমান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ বলেন, ‘সে ছিল অসাধারণ এক ক্রিকেটার এবং দারুণ মানুষ।’ ভূয়সী প্রশংসা ঝরেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ডের কণ্ঠে, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হ্যাডিন দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। একটি পরিবর্তনশীল দলকে নিজের পারফর্মেন্স দিয়ে সাহায্য করেছে। কখনও কঠিন সময়ে সামনে থেকে নেতৃত্বও দিয়েছে। ওর অবদান অনস্বীকার্য।’
×