ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তৃণমূলে নাটক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

তৃণমূলে নাটক

সংস্কৃতি রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলমান সময়কে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়Ñ এ কথা বার বার প্রমাণিত হয়েছে এ ভূখ-ে। শোষণ-ত্রাসন, কূপম-ূকতা, ধর্মান্ধতা, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে নির্মল, শিকড়সন্ধানী ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক আবহ তথা বাঙালী সংস্কৃতির জয় হয়েছে গত শতাব্দীর ৬ থেকে ৯-এর দশক পর্যন্ত; এমনকি এখনও তা বহমান। বিশেষ করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেপথ্যে এবং সহযোগী শক্তি হিসেবে রয়েছে মুক্তমনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, যার প্রাণশক্তি বাঙালী সংস্কৃতি। এ প্রেক্ষাপটে অনস্বীকার্য যে, সংস্কৃতি সময় ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতি পরস্পরের হাত ধরে চলে এবং একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতির আরেকটি দিক উন্মোচন করে দিল গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসব। এ উৎসব প্রমাণ করে দিল সংস্কৃতির আকাশ অনেক বিস্তৃত। সর্বজনীন সংস্কৃতি কোন সীমা-পরিসীমা মানে না। সে গ্রাহ্য করে না কোন দেশ বা বেড়া। সংস্কৃতির অনেক অনুষঙ্গের মধ্যে নাটক একটি বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে। এ মাধ্যম সরাসরি প্রভাব বিস্তারকারী। আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে এখনও নাট্যচর্চা অব্যাহত থাকা নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। যে সময়ে একজন মানুষ চলার পথে তার মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবের মাধ্যমে বিনোদনের উপকরণ অতিসহজেই পাচ্ছেন, সেখানে নিয়মিত মঞ্চের নাট্যচর্চা অব্যাহত থাকা সংস্কৃতি চর্চার সাক্ষ্য দেয়। একটা সময় দেশব্যাপী নাট্যচর্চার প্রসার এতটাই ছিল যে, গ্রামে পাড়া-মহল্লায় নাট্যাভিনয় ছিল অনেকটাই নিয়মিত। মানুষ নির্মল আনন্দের পাশাপাশি মুক্তচিন্তায় হতো প্রভাবিত। নাট্যকার, নাট্যাভিনেতা-অভিনেত্রীসহ অন্যান্য নতুন কুশীলব সৃষ্টি হতো। ঘটত নতুন প্রতিভার স্ফুরণ। সমাজ সচেতন ও দায়বদ্ধমূলক নাটকের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় তার অবস্থান এবং কর্তব্য নির্ণয় ও নির্ধারণ করতে উপায় খুঁজে পেত। সেই বাস্তবতা হয়ত আধুনিক কিছু মাধ্যম গ্রাস করে নিয়েছে। নাট্যচর্চার গ-ি ক্রমান্বয়ে সীমিত হতে হতে রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, যা হতাশার উদ্রেক করে। এমন বাস্তবতার অবসান হওয়া জরুরী। যে মঞ্চ ও পথনাটক তৃণমূল থেকে শহর পর্যন্ত মানুষকে বিনোদনের পাশাপাশি সচেতন করে তুলেছে, তা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক ও বৃত্তাবদ্ধ থাকবে এমনটা কারও কাম্য নয়। সমাজে কিছু দুর্বৃত্ত ও প্রগতির শত্রুদের আস্ফালনে সংস্কৃতির যে কোন ধারা মুক্তভাবে চর্চা করার এখন অনেকটাই প্রতিকূল পরিবেশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সমাজ যে সময়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে পিছিয়েছে বললে ভুল বলা হবে না। এ বাস্তবতা সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য শুভ বা সুখকর নয়। সরকারী পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পী-কুশীলবদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। নাট্যদলগুলো তাদের শাখা অন্তত জেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করতে পারে। নতুন নতুন সাংস্কৃতিক দল বা সংগঠন সৃষ্টিতে সরকারী ও স্থানীয় সংস্কৃতিসেবীদের পৃষ্ঠপোষকতা অবশ্যই দরকার। এতে শিকড় পর্যায়ে শুধু নাটকই নয়, বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতিজাত উপাদানগুলো পৌঁছানো ও বাঁচিয়ে রাখা হবে সহজতর।
×